বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তায় অনন্য উদ্যোগ ‘প্রচেষ্টা’র
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০
ঢাকা: প্রায় এক দশক ধরে মানবতার সেবায় সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। এর ধারাবাহিতকতায় এবারের বন্যাতেও সংগঠনটি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রচেষ্টার স্বেচ্ছাসেবীরা ছুটে গেছেন বন্যায় আক্রান্ত এক জেলা থেকে অন্য জেলায়।
দেশের সাত জেলায় বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধার, ত্রাণ সহায়তা, পুনর্বাসন ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। গত ২১ আগস্ট থেকে টানা ১৫ দিন ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়াসহ ফেনী সদরের বিভিন্ন জায়গা এসব কার্যক্রম চালানো হয়।
প্রচেষ্টার ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি পাভেল বাবু সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রচেষ্টা যাত্রা শুরু করে ২০১০ সালে। এরপর থেকেই সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে আমরা কাজ করে আসছি। বর্তমানে আমাদের নিবন্ধিত ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। তবে ফেনীতে প্রচেষ্টার অধীনে অন্যান্য সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রায় ৫০০ কর্মী বন্যার্তদের সেবায় কাজ করেছেন।’
এক প্রশ্নের উত্তরে পাভেল বাবু বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তার জন্য আমরা প্রায় ৩৮ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছি। ত্রাণ কার্যক্রমে এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা। বাকি অর্থ আমরা বন্যার্তদের পুর্নবাসনে ব্যয় করব। যেসব এলাকায় কোনো সংগঠন যাচ্ছে না, আমরা সেসব জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। বন্যার কারণে প্রকৃত অসচ্ছল ও ক্ষতিগ্রস্তদের চিহ্নিত করেই তাদের পুর্নবাসন করার লক্ষ্য আমাদের।’
প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের এই সহপ্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, ‘বন্যার পর প্রচেষ্টার পক্ষ থেকে আমরা যখন ফেনীতে যাই, তখন কারও কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তখন সবার অবস্থাই দিশেহারা। কী থেকে কী করব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এরপর ফেসবুকে ঘোষণা দিলে বিভিন্ন মানুষ আমাদের কাছে ত্রাণ ও টাকা পাঠাতে শুরু করে। আমরাও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে পূর্ণোদ্যমে কাজ শুরু করি। প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন সবসময়ই দেশের যেকোনো দুর্যোগে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করে। আর সবকিছুই সম্ভব হয় মহৎ মানুষদের সহায়তার কল্যাণে।’
প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের আরেক প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক ইকরাম উদ্দিন আবির বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির শুরু থেকেই কাজ করে যাচ্ছে প্রচেষ্টা। আগামীতেও আমরা এই কাজ চলমান রাখব। আমাদের সঙ্গে আরও যেসব সংগঠন যুক্ত হয়ে কাজ করছে, তারাসহ আমাদের সব স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দিনরাত এক করে গত দুই সপ্তাহ টানা কাজ করেছে। এখনো কাজ করে যাচ্ছে।’
সংগঠনের প্রমোশনাল হেড ফাতিমা তাহ্সিন নিশাত বলেন, ফেনীর পরিস্থিতি এবার এত বেশি খারাপ ছিল যে উদ্ধারের জন্য স্বজনদের শত শত ফোন পাচ্ছিলাম আমরা। তবে এই সংকটে সবাই যেভাবে এগিয়ে এসেছে, সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। পুরো কার্যক্রমে প্রচেষ্টার সঙ্গে কাজ করেছে গিভ বাংলাদেশ, আজিমুর রোকিয়া রহমান ট্রাস্ট, ইয়ুথনেট গ্লোবাল, ফেনী সেন্ট্রাল লিও ক্লাব, প্রয়াস, আমরাই আগামী ও ইকো রেভ্যুলেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা।
প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্যা পরিস্থিতি অবনতির পর মানুষজন যখন ঘরবন্দি ও জীবন নিয়ে শঙ্কায়, তখন ফেনীর দুর্গম এলাকাগুলোর দুই হাজারেরও বেশি মানুষকে স্পিডবোট দিয়ে উদ্ধার করেন প্রচেষ্টার স্বেচ্ছাসেবকরা। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইনসহ রান্না করা ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মাঝে।
শুধু ফেনীই নয়, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়িতে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার মানুষের কাছে রান্না করা খাবার, ১২ হাজার পরিবারের কাছে শুকনো খাবার ও আট হাজার পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিয়েছে প্রচেষ্টা। এ ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আটটি পরিবারকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া হিসেবে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর ওই সব এলাকায় পানিবাহিত নানা রোগের উপদ্রব শুরু হয়েছে। নারী, শিশুসহ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ শুরু করেছে প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। ফেনীতে দিনব্যাপী চলছে মেডিকেল ক্যাম্পেইন। এ ছাড়া এরই মধ্যে প্রায় ৪০০ নারী ও কিশোরীর মধ্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর