Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিচারকদের সামাজিক মাধ্যমে শৃঙ্খলা পরিপন্থি স্ট্যাটাস দিতে মানা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২৮

ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরি শৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো স্ট্যাটাস, মন্তব্য, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে সারাদেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

বুধবার (১১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্র কোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করছেন না, বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত। এছাড়া, অত্র কোর্টের গোচরীভূত হয়েছে যে, কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বিচারিক কর্ম ঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন এবং কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে নানাবিধ বিরূপ মন্তব্য করছেন, যা চাকরি শৃঙ্খলা ও বিধিমালার পরিপন্থি এবং অসদাচরণের সামিল। বর্ণিত প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্র কোর্ট প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করত কোনো অবস্থাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরি শৃঙ্খলা পরিপন্থি অপ্রয়োজনীয় কোনো স্ট্যাটাস, মন্তব্য/শেয়ার না করার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন।

এতে আরও বলা হয়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরি শৃঙ্খলা পরিপন্থি অপ্রয়োজনীয় কোনো স্ট্যাটাস, মন্তব্য/শেয়ার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আদিষ্ট হয়ে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক প্রচারিত এই নির্দেশনা অমান্য করলে তা ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা, ২০১৭’ এর পাশাপাশি প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট প্রদত্ত অনুসরণীয় নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে প্রতিপালনের জন্য সার্কুলার জারি করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে এ সার্কুলার জারি করা হয়।

হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন রেজিস্ট্রার (বিচার) এসকে.এম. তোফায়েল হাসানের সই করা সার্কুলারে বলা হয়, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কতিপয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্র কোর্টের ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর খ্রিস্টাব্দের সার্কুলার নম্বর-০৪জে, এ প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করছেন না। কোনো কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা বিচারিক কর্মঘণ্টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের চেম্বার অথবা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বরত অবস্থায় ছবি তোলা বা ভিডিও আপলোড করাসহ নিজের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ভঙ্গকারী ছবি পাবলিক পোস্ট হিসেবে আপলোড করছেন, অন্যের আপলোড করা ছবি, ভিডিও বা কনটেন্ট শেয়ার করে তাতে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করছেন। এছাড়া রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্তব্য/শেয়ার করছেন, ইউটিউব বা অন্য কোনো মাধ্যমে নিজ বা ছদ্ম নামে চ্যানেল খুলে ভিডিও আপলোড করাসহ অপ্রয়োজনীয় ও গুরুত্বহীন অনুষ্ঠানের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করছেন।

কতিপয় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার এরুপ কর্মকাণ্ডের ফলে বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হচ্ছে। যা অপ্রত্যাশিত। এ অবস্থায় বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অত্র কোর্টের ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর খ্রিস্টাব্দের সার্কুলার নম্বর-০৪জে, এ প্রদত্ত নির্দেশনাগুলো আবশ্যিকভাবে প্রতিপালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আদিষ্ট হয়ে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচারকদের জন্য ১৯ দফা অনুসরণীয় নির্দেশনা জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. মো. জাকির হোসেনের সই করা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অনুসরণীয় নির্দেশনা সংক্রান্ত সার্কুলারে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সকল সরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০১৬’ প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের কোনো নীতিমালা বা নির্দেশিকা গ্রহণ করা হয়নি।

বর্ণিতাবস্থায়, Supreme Court Special Committe for Judicial Reforms এর সুপারিশক্রমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এমতাবস্থায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে।

ক) প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

খ) প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

গ) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সর্বোচ্চ সতর্কতা এবং বিচারকসুলভ মনোভাব অবলম্বন করতে হবে।

ঘ) অপ্রয়োজনীয় বা গুরুত্বহীন বিষয়ের তথ্য Status বা Post দেওয়া যাবে না।

ঙ) বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল (Portal)/গ্রুপ (Group) থাকতে পারে, যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতিত কেবল আইনগত বিষয়ে Academic আলোচনা ও তথ্য আদান- প্রদান করা যাবে।

চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারকসূলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।

ছ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্য আদান-প্রদান এবং বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি যা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত একাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।

জ) বাস্তব ও স্বাভাবিক অবস্থায় সহকর্মীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি, করণীয় ও বর্জনীয় দিকগুলো প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিশ্চিত করতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদেরকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

ক) জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থি কোনো প্রকার তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।

খ) কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।

গ) রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।

ঘ) কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।

ঙ) কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।

চ) লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।

ছ) জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রচার ও প্রকাশ।

জ) কোনো মামলা সংক্রান্তে বিরূপ মন্তব্য যা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।

ঞ) নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।

ট) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার।

অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থী কোনো Status, Post, Link, ছবি ইত্যাদিতে অন্যজনকে সংযুক্তকরণ (Tagging), আদান-প্রদান (Sharing), প্রকাশ ও প্রচার।

বিচারিক কর্মঘন্টার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে ওই সময় (সকাল ৯:৩০ থেকে ৪:৩০ ঘটিকা) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে হবে।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। অত্র কোর্ট (সুপ্রিম কোর্ট) কর্তৃক প্রচারিত এই নির্দেশনা অমান্য করলে তা ‘অসদাচরণ’ হিসেবে গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে ‘বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস বিধিমালা, ২০১৭’ এর পাশাপাশি প্রচলিত অন্যান্য আইন ও বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে।

সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ

সুপ্রিম কোর্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর