স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ‘এমডি হচ্ছেন’ এস আলমের বিতর্কিত সহযোগী!
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২৬
ঢাকা: দেশের ব্যাংকিং খাতে বিতর্কিত এস আলম গ্রুপ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হাসিনা সরকারের পতনের পর এরই মধ্যে গ্রুপটির কর্ণধার এস আলম ও তার পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই গ্রুপের দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী হাবিবুর রহমানকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে নিয়োগ দেওয়ার তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
হাবিবুর রহমান ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। এস আলম গ্রুপের ডুবতে থাকা ইউনিয়ন ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকও (এএমডি) ছিলেন তিনি। দুর্নীতির দায়ে হাইকোর্টের আদেশে তিনি সর্বশেষ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্যও হন। কিন্তু ব্যাংকটির এমডি পদে তাকেই আবার ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারা চলছে।
এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকে এস আলমপন্থি হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ওপর তীব্র চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন নথিপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, বিভিন্ন মহলের চাপ ও প্ররোচনায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গত ৫ সেপ্টেম্বরের বোর্ড সভায় হাবিবুর রহমানকে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়। সোমবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক থেকে অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৬ মে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি হাবিবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য করা আবেদন নিষ্পত্তি করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই নির্দেশনায় তখন আগামী ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছিল।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারীর আইনজীবী মো. বেল্লাল হোসেইন শাহীন ও আবু তালেব জ্যাকব। তারা জানান, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের একজন গ্রাহকের করা রিটের শুনানি শেষে ব্যাংকের এমডি ও সিইও হাবিবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন নিষ্পত্তিতে এই আদেশ দেন আদালত। কিন্তু আদালতের আদেশ নিষ্পত্তি হওয়ার আগেই বিতর্কিত ও পদত্যাগী এমডিকে আবার স্বপদে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, চাকরি জীবনে হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা শুরু হয় মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে। ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা দুদকের মামলায় স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের তৎকালীন এমডি মো. হাবিবুর রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। বর্তমানে তিনি এ মামলায় জামিনে রয়েছেন। মতিঝিল থানায় দণ্ডবিধি ৪০৬/৪০৯/৪২০/১০৯ ধারায় দায়ের করা মামলা নম্বর জিআর ৯৭/২০১৮। যা বর্তমানে মেট্টো স্পেশাল মামলা নম্বর ২৭২/২২ হিসেবে চলমান রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালে হাবিবুর রহমান বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা হিসাবে যোগ দিলে সেখানেও ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় তিনি বিতর্কিত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য বলছে, দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০২২ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা বেশির ভাগ ঋণে বড় ধরনের অনিয়ম খুঁজে পায় বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে কোম্পানি গঠন করে ঋণের বড় অংশই বের করে নিয়েছে প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠান। আবার অনেক ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্সও ছিল না। কাগুজে এসব কোম্পানিকে দেওয়া ঋণের বেশির ভাগেরই খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে এসব ঋণ আদায়ও হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ১৮ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা খেলাপি হওয়ার যোগ্য, যা মোট ঋণের ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকটির সিংহভাগই খেলাপি বা অনিয়মের ঋণে পরিণত হয়েছে। এর আগে, এসব অনিয়মের বিষয়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডিকে চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সতর্কও করা হয়েছিল।
এ অনিয়মের ঘটনায় ইউনিয়ন ব্যাংকের সেই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও ব্যাংকটির সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান সরাসরি জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ, দুজনেই এস আলমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে জানান, তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ও ঋণ বিতরণে যেসব অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে, তার সবই ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, ‘কখনো কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না, ভবিষ্যতেও থাকব না। একটি বিশেষ মহল বরাবরই তার বিরুদ্ধে কাজ করছে।’
দুদকের মামলা বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আইনিভাবেই মোকাবিলা করা হবে।’ এ ক্ষেত্রে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম