ঢাকা: বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে জাতিসংঘ ও হোয়াইট হাউসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রশ্নবানে জর্জরিত করার জন্য বিশিষ্ট সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে হিরো হিসেবে অবহিত করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়েতনে মুশফিকুল ফজল আনসারীকে দেওয়া এক সংবর্ধনায় তার ভূয়সী প্রসংসা করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ফ্যাসিস্ট সরকারের অপশাসন, দুঃশাসন, গুম, খুন, নির্যাতন ও প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ও হোয়াইট হাউসের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সাংবাদিক মুশফিকুর ফজল আনসারীকে আমাদের হিরো হিসেবে অবহিত করেন।
এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মুশফিকুল ফজল আনসারীকে এদেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের সংগ্রামের ক্ষেত্রে সে আমাদের উজ্জীবিত রেখেছে। যখন আমরা সবাই অত্যাচারে, নির্যাতনে-নিপীড়নে হত্যাশ হয়ে পড়েছি তখন সে আশার আলো দেখাতো। এজন্য সকল মানুষের কাছে সে একজন হিরো নিঃসন্দেহে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুশফিক এদেশে থাকতে পারে নাই এই ফ্যাসিবাদী হাসিনার অত্যাচার নির্যাতনের কারণে। আমরা লড়াই করেছি দেশের ভেতরে এবং আমাদের ছাত্র-জনতার যে একটি অভূতপূর্ব গণঅভ্যূত্থান মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু এ বিজয় তখনই সুসংহত হবে যদি আমরা এটাকে ধরে রাখতে পারি। আমাদের যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে তা যেন অটুট রাখতে পারি। আজকে পরিকল্পিতভাবে এই ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য একটা চক্রান্ত চলছে। সেটাকে আমাদের রুখে দিতে হবে। এজন্য আমি সকলকে অনুরোধ করব প্রত্যেকটি দল, মতের মানুষকে এই বিষয়টি সামনে না এনে, গোটা বাংলাদেশের মানুষকে, বাংলাদেশকে সামনে নিয়ে আসা। যে সম্ভাবনা আমাদের সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্ভাবনা যেন আমরা কাজে লাগাতে পারি।’
ফ্যাসিস্ট সরকারের দীর্ঘ অপশাসন, দুঃশাসন, গুম, খুন, নির্যাতন ও প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে ও হোয়াইট হাউসের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর সাউথ এশিয়া পারপ্রেক্টিভস ও জাস্ট নিউজ বিডির সম্পাদক এবং ওয়াসিংটনভিত্তিক অধিকার সংস্থা রাইটস টু ফ্রিডমের নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুর ফজল আনসারীর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও সাংবাদিক সমবায় সমিতি লিমিটেড আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নেতারা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক নেতা এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে শুধু আমাদের হিরো নয়, তাকে আমি সুপার হিরো বলতে চাই।’
কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন বলেন, ‘মুশফিকুল ফজল আনসারী শুধু আমাদের ভাই নন। তিনি সব নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের ভাই। তার কলম সত্যের পথে চলেছে। ভবিষ্যতেও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তার কলম আপসহীন থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘তিনি যেখানে গেছেন সেখানেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের মাটি ও মানুষ এবং কবে আমরা মুক্ত হবো এই তিনটি বিষয়ে আলোচনা করতে দেখেছি। এখন তাকে দেশে কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে দিতে হবে।’
সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মুশফিকুল ফজল আনসারী। এ সময় তিনি বলেন, ‘এদেশের হাজারো ছাত্র যাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না, তারা চেয়েছিল সাধারণ একটি অধিকার। এই অধিকার চাইতে গিয়ে শেখ হাসিনা যে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়ে এক হাজারের বেশি ছাত্রের জীবন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমরাতো এখানে অনুষ্ঠান করছি- কিন্তু একবার ভাবুন ওই পরিবারটির কথা যে বা যার গেছে সে জানে; কী হারিয়েছে। এখনও তার মা অপেক্ষা করছে এই বুঝি তার ছেলে ফিরবে, স্ত্রী হয়ত অপেক্ষা করছে তার স্বামীকে ফিরে পাবেন, তার অবুঝ সন্তানটি সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে- মিথ্যে শান্তনা, মিথ্যে আশ্বাস। এই পরিবারগুলো- যারা স্বজনদের হারিয়েছে; এই স্যাক্রিফাইজ হচ্ছে সবচেয়ে বড়; এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিসর্জন। আমি আজকের দিনে শ্রদ্ধার সাথে এইসব শহীদদের স্মরণ করছি। যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলাদেশের রাজপথ, অর্জিত হয়েছে আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা, হাসিনামুক্ত বাংলাদেশ।’
সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যে দায়িত্বটুকু পেয়েছেন, সে দায়িত্বটুকু এদেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষ, ছাত্র-জনতার একটি আমানতদারী। প্রত্যেকটি উপদেষ্টাদের এটা খেয়াল রাখতে হবে, এই আমানতদারীর খেয়ানত যাতে না হয়। স্বৈরাচারের প্রেতাত্বারা, ফ্যাসিস্টের দোসরা কোন ধরনের ফাঁকফোকরে আপনাদের সঙ্গে মিশে যেতে যাতে না পারে। ফ্যাসিস্টের সঙ্গে, স্বৈরাচারের সঙ্গে আপোষ করে বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আমাদের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মিডিয়া স্বাধীনতা উপভোগ করছে। আমি কোন মিডিয়া বন্ধের পক্ষে নেই, আমি মুক্ত মতে বিশ্বাসী। আমি চাই প্রতিটি মিডিয়া- সেটা ইলেকট্রনিক হোক, প্রিন্ট হোক তারা তাদের সমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হবে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে।’
নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন আমি পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিক কিনা। আমি নিজেকে পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিক বলে দাবি করি, সেটা কী- আমি গণতন্ত্রের পক্ষে, মানাবাধিকারের পক্ষে, মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে। আর তা আমৃত্যু ধারণ করব, লালন করব। কোন ধরনের লোভ-লালসা আমাকে এই পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।’
আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজ) সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দীন আহমেদ তারেক, কবি আবদুল হাই শিকদার, গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনির, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাংবাদিক নেতা এলাহি নেওয়াজ খান সাজু, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজ) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, গণ অধিকার পরিষদ নেতা তারেক রহমান, ফটো সাংবাদিক নেতা বাবুল তালুকদার, আইনজীবী নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম, আবৃত্তিকার জাহিদুল আলম, ড. নেয়ামত উল্লাহসহ অনেকে।