কক্সবাজার সৈকতে নারীদের হেনস্তা, সেই যুবক আটক
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৩
কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দুই নারীকে ‘মারধর ও হয়রানির’ অভিযোগে মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম (২৩) নামে একজনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক জাবেদ মাহমুদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, সৈকতে নারী পর্যটককে মারধর ও নির্যাতনের কিছু ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। পরে পুলিশ ফুটেজগুলোতে দেখা মেলা যুবকটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে শহরের ভোলা বাবুর পেট্রোল পাম্প সংলগ্ন এলাকায় সদর থানা ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নিয়েছে। অভিযুক্ত যুবক এখন সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
আটক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকায় থাকেন। তাদের আদি বাড়ী চট্টগ্রামের লোহাগড়া উপজেলার চুনতি এলাকায়।
তিনটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে; ঘটনাটি বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিও ফুটেজটিতে দেখা মেলা যুবকটিকে আটক করে। যুবকটিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক’ বলে দাবি করেছেন ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখানো অনেকে। তারা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ওই নারীদের নিপীড়ন চালানো হয়েছে।
তবে কক্সবাজারের স্থানীয় সমন্বয়কেরা বলছেন, আটক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব পর্যায়ের কেউ নন। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কেউ যদি স্ব-উদ্যোগে বা সাংগঠনিক প্রক্রিয়া ছাড়া কোন কর্মসূচি নিয়ে থাকে সেটার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দায়বদ্ধ নয়।
তারা আরও বলেন, ব্যক্তির দায়ভার সংগঠন নেবে না। ব্যক্তির কর্ম-অপকর্ম ব্যক্তিকেই জবাবদিহিতা করতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কিটকটে একা বসে থাকা এক তরুণীকে লাঠি হাতে নিয়ে ঘিরে ধরেছেন চার যুবক। তারা প্রথমে ওই তরুণী পরিচয় এবং কি কাজে এতো রাতে একা অবস্থান করছেন জানতে চান। পরে তরুণীটি ঘুরতে আসার কথা জানালে তারা সন্তুষ্ট হননি। এক পর্যায়ে যুবকরা সৈকতের সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলে ওই তরুণীকে চলে যেতে বাধ্য করেন।
অপর একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আরেক তরুণীকে ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু সংখ্যক কৌতুহলী মানুষ। এসব মানুষের মাঝে লাঠি হাতে নিয়ে অবস্থান করছেন কয়েকজন যুবক। এদের মধ্যে যুবককে লাঠি দেখিয়ে ওই তরুণীকে নির্দেশ দিচ্ছেন কান ধরে ওঠা-বস করতে। ভয়ে ওই তরুণী ওঠ-বস করতে থাকলে ঘিরে থাকা লোকজনকে অশ্লীল ভাষা মন্তব্য করতে শোনা যায়।
আরেকটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্সে কয়েকজন পুলিশের পাশাপাশি কয়েকজন যুবকের সাথে ভুক্তভোগী এক তরুণীসহ আরও একজনকে। সাধারণ পোশাকে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভুক্তভোগী তরুণী কান্নারত অবস্থায় অভিযোগ ও নিজের তথ্য দিচ্ছেন। এসময় নিজের নাম আরোহী বলে পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন আরেকটি ভিডিও ফুটেজে লাঠি হাতে আরেক তরুণীকে ওঠ-বস করার নির্দেশদাতা যুবকটি।
এসময় পুলিশ কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে ওই তরুণীটিকে বলতে শোনা যায়, উনি (মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম) আমার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। দয়া করে ফোনটি ফেরত দিন। প্রয়োজনে মোবাইলে থাকা সবকিছু ডিলেট করে দেব।
সারাবাংলা/এনইউ