নিলামে উঠছে এমপিদের আনা ল্যান্ড ক্রুজার-মার্সিডিজ বেঞ্জ
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৬ কোটি টাকা দামের মার্সিডিজ বেঞ্জ এবং ৫ কোটি টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার; আমদানির পরও খালাস না নেওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা এমন দু’টি বিলাসবহুল গাড়ি নিলামে বিক্রির জন্য তুলছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আলী আশরাফ শুল্কমুক্ত সুবিধায় এনেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের আমদানি এমন বিলাসবহুল আরও গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে খালাসের অপেক্ষায় পড়ে আছে। সময়মতো খালাস না নেওয়ায় এর মধ্যে অনেকগুলোই নিলামযোগ্য হয়ে উঠছে বলে বন্দর ও কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে।
আগামী বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দু’টি বিলাসবহুল গাড়িসহ অন্তঃত ৪৬ আইটেমের পণ্য নিলামে বিক্রির জন্য তোলা হবে। যা নিকটতম সময়ের মধ্যে কাস্টমসের সবচেয়ে বড় নিলাম হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টমস ৪৬ ধরনের পণ্য নিলামে বিক্রির জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এতে দুটি গাড়িসহ আরও বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্য আছে। এসব পণ্য বিভিন্নসময় আমদানি করা হয়েছে অথচ খালাস নেয়নি। আমদানিকারককে বারবার নোটিফাই করার পরও যেহেতু খালাস নেয়নি, সেজন্য এগুলো নিলামে চলে যাচ্ছে।’
জানা গেছে, দু’টি গাড়ি ছাড়াও নিলামে উঠবে এমন বাকি পণ্যের মধ্যে আছে- ফ্লোর টাইলস, ডেনিম ফেব্রিক্স, সোডিয়াম সালফেট, কটন, আম-আপেল ও আনারসের জুস ও পলিস্টার। এর মধ্যে ফ্লোর টাইলসের নিলামের ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ডেনিম ফেব্রিক্সের এক কোটি ২৫ লাখ টাকা, সোডিয়াম সালফেটের ৯৯ লাখ টাকা, কটনের ৮৮ লাখ টাকা, জুস ৭২ লাখ টাকা এবং পলিস্টার ৯৩ লাখ টাকা।
দুটি গাড়ির মধ্যে মার্সিডিজ বেঞ্জের নিলামের ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ও ল্যান্ড ক্রুজারের ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, মার্সিডিজ বেঞ্জটি ঢাকার বারিধারার গাড়ি বিপণনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করা। আর ল্যান্ড ক্রুজারটি আমদানি করেছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য আলী আশরাফ। কুমিল্লা-৭ আসনের সাবেক এ সংসদ সদস্য ২০২১ সালের ৩০ জুলাই মারা যান। সেসময় সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আলী আশরাফের নামে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়িটি আমদানি করা হলেও তার মৃত্যুর পর সেটি আর খালাস নেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৮ সালের ২৪ মে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ দেয়া হয়। এরশাদের পতনের পরও এ সুযোগ বহাল থাকে। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সংসদ সদস্য তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদে একটি করে গাড়ি আমদানি করতে পারেন।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৫৭৬টি গাড়ি আমদানি করেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ৫১ জন সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলেন। এর মধ্যে দশ সংসদ সদস্যের গাড়ি বন্দরে পৌঁছে, যার মধ্যে ছয়জন খালাস নিয়েছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খালাসের অপেক্ষায় আছে আরও চারজন সংসদ সদস্যের গাড়ি।
সাধারণত, আমদানি করা গাড়ি ত্রিশ দিনের মধ্যে বন্দর থেকে খালাস না নিলে সেগুলো নিলামযোগ্য হয়ে যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা যেকোনো পণ্য চারদিন পর্যন্ত বন্দরের শেডে বিনা শুল্কে রাখার সুযোগ পায় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে প্রতি ৪ দিন পরপর ২০ ফুট সাইজের কনটেইনারের জন্য ৬ মার্কিন ডলার এবং ৪০ ফুটের জন্য ১২ মার্কিন ডলার মাশুল আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, দু’টি গাড়ি নিলামের জন্য কাস্টমসের কাছে হস্তান্তরের পরও বন্দরের ইয়ার্ডে এখনো ৩৯৯টি গাড়ি নিলামযোগ্য অবস্থায় আছে। এছাড়া আমদানির পর যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় আরও বিভিন্ন ধরনের পণ্যের কারণে বন্দরের ইয়ার্ডে স্থান সংকট তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৭৬৮টি ২০ ফুট সাইজের ও ৩১৭০টি ৪০ ফুট সাইজের পণ্যভর্তি কনটেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। এছাড়া চার হাজার মেট্রিক টন ওজনের ৭০ হাজার প্যাকেজ কার্গো এবং ৫৪৫০ মেট্রিক টন ওজনের ৬ হাজার ৮৪৬ প্যাকেজ খোলা পণ্যও দখল করে রেখেছে বন্দরের ইয়ার্ড।
এ অবস্থায় গত ১২ আগস্ট দু’টি গাড়িসহ ৪৬ লটের পণ্য নিলামে বিক্রির মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনারকে চিঠি দেন বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ। এর ভিত্তিতে পণ্যগুলো ১৮ সেপ্টেম্বর নিলামে তোলা হচ্ছে বলে কাস্টমসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমও