Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেষ হয়নি ‘ব্যাকরণের বর্ষা’, তাই ঝরছে বৃষ্টি

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৩০

ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বাংলা বর্ষপুঞ্জি থেকে এক মাস আগেই বিদায় নিয়েছে বর্ষা। ঋতুচক্রে শরৎ এলেও প্রকৃতিতে এখনো বর্ষারই রাজত্ব। আকাশ জুড়ে সেই কালো মেঘ, থেমে থেমে মেঘের গর্জন আর ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি দিচ্ছে বর্ষার অনুভূতি। গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়-বৃষ্টি তিন দিনেও থামার লক্ষণ নেই।

যদিও আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সাগরে যে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে তা এরই মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে মোড় নিয়েছে। যে কারণে সোমবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কমতে পারে।

বিজ্ঞাপন

আবহাওয়াবিদদের মতে, সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক। কারণ, মেট্রোলজিক্যালি ঋতু চক্রকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। সে হিসাবে এখনো বর্ষাকাল। তবে বর্তমানে যে অতিবৃষ্টি বা অতি খড়ার বিষয়টি সামনে আসছে, সেটার জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন তারা।

আবহাওয়াবিদদের ব্যকরণ অনুযায়ী, মেট্রোলজিক্যাল দিক থেকে বাংলাদেশে ঋতু চক্রকে চার ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো- প্রি-মনসুন, মনসুন, পোস্ট মনসুন ও উইন্টার। এর মধ্যে মূলত জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর এই চার মাসকে ধরা হয় বর্ষাকাল। আবহাওয়াগত দিক থেকে এখনো চলছে বর্ষা।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বর্ষার শেষ দিকে লঘুচাপ, নিম্নচাপ- এমনকি কোনো কোনো বছর ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানারও নজির রয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত ১২ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। যা পরবর্তী সময়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং নিম্নচাপে পরিণত হয়। যেটি এখন ভোলা, বরিশাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর হয়ে গাঙ্গীয় পশ্চিমবঙ্গ চলে গেছে। তবে এর প্রভাবে ঢাকাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবার আসছে অক্টোবরেও এমন দু-তিনটি লঘুচাপ এবং একটি ঘূর্ণিঝড়েরও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় আবহাওয়াবিদ ড. মু.আবুল কালাম মল্লিকের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘মেট্রোলজিক্যাল হিসেবে জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরকে বলা হয় মনসুন বা বর্ষাকাল। যেহেতু এখন বর্ষাকাল, সেহেতু বৃষ্টি থাকাটা স্বাভাবিক। তবে সেপ্টেম্বেরর শেষ দিকে টানা বৃষ্টিপাত কমতে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে, সেটা দেশের হাতিয়া, সন্দ্বীপ অঞ্চল জুড়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আস্তে আস্তে ভোলা, বরিশাল ও যশোর সাতক্ষীরা হয়ে গাঙ্গীয় পশ্চিমবঙ্গ বরাবর অবস্থান করছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘লঘুচাপ যতক্ষণ বাংলাদেশের ওপর ছিল ততক্ষণ প্রায় নিম্নচাপ আকারে ছিল। এর প্রভাবে ঢাকাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোথাও কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতাও তৈরি হয়েছে। এরকম মৌসুমি নিম্নচাপকে স্থল নিম্নচাপ বলি আমরা। স্থল নিম্নচাপের ফলে আকাশে প্রচুর পরিমাণ মেঘমালা তৈরি হয়। যে কারণে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়।’

আবহায়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কমে যাবে। বৃষ্টি থাকবে তবে লাগাতার বিষয়টি হয়তো থাকবে না। তবে এই যে বর্ষায় অতিবৃষ্টি, শীতে বৃষ্টি, আবার অতিমাত্রায় শৈত্যপ্রবাহ কিংবা গ্রীষ্মে প্রচণ্ড তাপদাহের যে বিষয়গুলো প্রকৃতিতে দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর জন্য জলবায়ুর পরিবর্তন দায়ী।’

আবহাওয়া অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, ‘সাধারণত প্রতিবছর রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। বছর দুয়েক আগে ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে, প্রায় প্রতি বছর বর্ষায় অর্থাৎ জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে কখনো কখনো একশ মিলিমিটারের ওপরে বৃষ্টি হয়েছে। তবে সাধারণত এ ধরনের অতি ভারী বৃষ্টি দিনের বেলা হয়ে থাকে।

গত শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয়ে শনি এবং রোববারও অঝোরে ঝরছে বৃষ্টি। ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনভোগান্তি বেড়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, রোবববার সকাল ৬টার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ২৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। আর কক্সবাজার সদরে ২২৫ ও চট্টগ্রামে ২০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস বলছে, দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর ১১৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৩২টিতে পানি বাড়ছে। এ ছাড়া ৮৪টি পয়েন্টে পানি কমেছে। আর দু’টি পয়েন্টে পানি স্থিতিশীল রয়েছে।

ছবি: হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

বৃষ্টি ব্যকরণের বর্ষা মেট্রোলজিক্যাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর