মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সংস্কারে সবক্ষেত্রেই অধিক ব্যয়ের প্রস্তাব!
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪২
ঢাকা: প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশের সব মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা নানা খাতের ব্যয় প্রস্তাব। ৬২টি নতুন ৯তলা ফাউন্ডেশনের উপর ৮ তলা ভবন নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এজন্য ‘জেলা শহরে বিদ্যমান মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রকে ৩০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ/ উন্নতীকরণ’ নামের একটি প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। এটি বাস্তবায়নে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ব্যয় ধরেছিল ২ হাজার ৭৭৮কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
প্রস্তাবটি নিয়ে আগামীতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে এসব ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘গাজীপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন নির্মাণে প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৬ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের প্রাক্কলিত ব্যয় পড়ে ৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এই ব্যয় অত্যন্ত বেশি বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। একই অবস্থা মানিকগঞ্জ মা ও শিশু কেন্দ্রেরও।’
এছাড়া গাজীপুর জেলার বিদ্যমান এমসিডব্লিউসি ক্লিনিক বিল্ডিংয়ের ঊর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ (৩ তলা) এর ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটের খরচ পড়ে ৪ হাজার ২৫৬ টাকা টাকা। এটির নতুন ফাউন্ডেশনের প্রয়োজন না হলেও প্রাক্কলিত ব্যয় অত্যাধিক ধরা হয়েছে। একইভাবে অধিক ব্যয় ধরা হয়েছে মেডিকেল অফিসারদের জন্য বিদ্যমান আবাসিক ভবনের ৪ তলা পর্যন্ত উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণ এবং গাজিপুর নার্স কোয়ার্টারের চতুর্থ তলা ঊর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এসব বিষয় নিয়ে পিইসি সভায় প্রশ্ন তোলা হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ২৫ হাজার ৫৩৬টি আসবাবপত্র বাবদ ৪৬ কোটি ৩৫ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ বন শিল্প করপোরেশনের রেট সিডিউল ২০২৩ অনুযায়ী আসবাবপত্রের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন মনে করে আসবাবপত্রের সংখ্যা ও ব্যয় প্রাক্কলন অত্যাধিক।
এছাড়া প্রাধিকার ভিত্তিতেও আসবাবপত্র নির্ধারণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে একজন বহিরাগত সদস্যসহ কমপক্ষে ৩ সদস্যের একটি কমিটি করে আসবাবপত্রের সংখ্যা ও মূল্য নির্ধারণের সুপারিশ করা হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় হাসপাতাল কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য ভবন ভাড়া বাবদ ৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই ব্যয় প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পে প্রস্তাবিত ক্রয় প্যাকেজ নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ক্রয় পরিকল্পনায় মালামালের ক্ষেত্রে ৬৮টি, ওয়ার্কসের ক্ষেত্রে ৬৪টি এবং সেবার ক্ষেত্রে ৪টিসহ মোট ১৩৬টি প্যাকেজের প্রস্তাব রয়েছে। এজন্য একই ধরনের আইটেম একই প্যাকেজে রেখে প্যাকেজের সংখ্যা যৌক্তিকভাবে কমানোর পক্ষে মত দিতে পারে পরিকল্পনা কমিশন।
সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৮টি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি বাবদ ২৫৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে এসব যন্ত্রপাতির প্রয়োজনীয়তা ও প্রাক্কলিত মূল্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে পিইসি সভায়।
অন্যদিকে, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিভিন্ন আবাসিক ও অনাবাসিক ভবনের সংস্কার বা পুনর্নির্মাণে আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য ৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এই ব্যয়ও অত্যাধিক বলে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে মনে হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/এমও