Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণঅভ্যুত্থানে আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, আশ্বাসের নামে কালক্ষেপণের অভিযোগ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৬

ঢাকা: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। চিকিৎসার আশ্বাসের নামে অন্তর্বর্তী সরকার কালক্ষেপণ করছে সরকার। অন্যথায় সব অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে আশঙ্কা জানানো হয়েছে এক সংবাদ সম্মেলনে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থী-জনতার যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। ‘লড়াকু ২৪ এর সহযোদ্ধা’র ব্যানারে এই আয়োজন করা হয়। অবিলম্বে আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে ১৫ দফা দাবি পেশ করেন ‘লড়াকু ২৪ এর সহযোদ্ধা’ সংগঠনের নেতারা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে—

১. জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সারাদেশের সব আহত শিক্ষার্থী-জনতাকে চিহ্নিত করে অতি দ্রুত প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

২. আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা বলতে কেবল তাদের শারীরিক ক্ষতকে বিবেচনা করলে চলবে না। বরং আহত প্রত্যেক ব্যক্তির আর্থ-সামাজিক, মানসিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আহত ব্যক্তির সেবায় নিয়োজিত স্বজনদের ব্যয়ভারও সরকারকেই বহন করতে হবে।

৩. আহত-নিহতের পরিবারের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা তুলনামূলকভাবে বেশি খারাপ এবং দীর্ঘমেয়াদী পুনর্বাসন দরকার তাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে হবে। যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে, তাদেরকে বিকল্প কর্মসংস্থান দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। যারা দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন কিংবা চিরস্থায়ীভাবে প্যারালাইজড হয়ে গেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৪. গণঅভ্যুত্থানে গুরুতর আহতদের মধ্যে যাদের জরুরিভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া জরুরি, আর কালক্ষেপণ না করে অবিলম্বে সরকারের উদ্যোগে বিদেশে নেওয়া ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা, এটি তাদের জীবনমরণের প্রশ্ন।

৫. আহতদের তথ্যসংগ্রহে প্রতিটি জেলাকেন্দ্রিক ‘জরুরি তথ্যসংগ্রহ কমিটি’ গঠন করতে হবে; যারা সারাদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এই কমিটির সদস্য তালিকায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বজন গ্রহণযোগ্য বিশেষজ্ঞ, প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং শিক্ষার্থী ও সচেতন জনতার অংশ থাকতে হবে।

৬. প্রত্যেক আহত রোগীর পরিবারের সঙ্গে এক থেকে দ’ইজন শিক্ষার্থী বা নাগরিক স্বেচ্ছাসেবীদের যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। যারা একজন আহত ব্যক্তির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে সুস্থ হয়ে ওঠা ও বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় পাশে থাকবেন। আহতদের সার্বিক চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের উদ্দেশে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্যব্রিফ করতে হবে।

৮. আহতদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় এবং গ্রামে বাড়ি তাদের দ্রুত ছাড়পত্র দিয়ে কিছুদিন পরপর চেকআপে আসতে না বলে বরং তাদের জন্য বিশেষায়িত আবাসিক চিকিৎসার তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৯. যে সমস্ত আহত ব্যক্তিরা বিভিন্ন এনজিও ঋণ নিয়েছেন, তা মওকুফ করতে হবে।

১০. আহতদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

১১. দলীয় রাজনীতি থেকে বের হয়ে এসে চিকিৎসকদের পেশাগত নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে সেবাদানে সচেষ্ট থাকতে হবে। চিকিৎসকদের পেশাগত নৈতিকতা নিশ্চিত করতে সরকারকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।

১২. সরকারের তত্ত্বাবধানে সব সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগের স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমগুলোর সমন্বিত ও জবাবদিহিতামূলক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। সকল ক্ষেত্রে অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

১৩. জরুরিভিত্তিতে প্রত্যেক জেলায় সরকারি হাসপাতালে আহতদের জন্য জরুরি তথ্য ও চিকিৎসা সহায়তা কেন্দ্র খুলতে হবে।

১৪. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বুঝতে হবে আহতদের জন্য প্রতিটা মুহূর্ত জীবনমরণের সমান। তাই সরকারের পক্ষ থেকে হাসপাতালে রোগীদের আনুষ্ঠানিক দেখতে যাওয়া এবং দেখে বেরিয়ে এসে গণমাধ্যমের সামনে আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দেওয়ার সময় শেষ। আশ্বাস দিয়ে কালক্ষেপণের নীতি এই মুহূর্তে বর্জন করতে হবে।

১৫. জাতীয় পর্যায়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে, যারা কেবল মাত্র আহতদের চিকিৎসায় পরামর্শ দেবেন ও নজরদারি রাখবেন। প্রয়োজনে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এমন বিদেশি বা আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসকদের এই টাস্কফোর্সে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। যেমন Doctors Without Borders-এর চিকিৎসকদের এই টাস্কফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবা যেতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে অজস্র মানুষ। আন্দোলনের শুরুর দিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে রোগীদের কোন ধরনের কাগজপত্র না দেওয়া, রেজিস্ট্রার খাতা সরিয়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটেছে। এমনকি গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহতদের অনেককে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যাদের হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়নি। এমতাবস্থায় আহতদের প্রকৃত সংখ্যা তালিকাভুক্তির বিষয়টি নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেছেন লড়াকু ২৪ প্ল্যাটফর্মের সহযোদ্ধা সুমিতা রবিদাস ও মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সহযোদ্ধা কানিজ ফাতেমা মিথিলা। আহতদের মধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন, গুলিবিদ্ধ মিজানুর রহমান, আহত মুরাদ ইসলামের স্ত্রী রাণী ইসলাম ও আহত এক ব্যক্তির স্বজন আইয়ুব আলী।

এছাড়াও বক্তব্য দিয়েছেন নৃবিজ্ঞানী ও লেখক রেহনুমা আহমেদ, গবেষক ও সাংবাদিক ড. সায়দিয়া গুলরুখ।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও

গণঅভ্যুত্থান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর