Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কাজে আসছে না দুর্গম চরের পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, অসহায় লাখো মানুষ

রিপন আনসারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৪

মানিকগঞ্জ: কাজ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে বছরখানেক আগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান উদ্বোধন করেছিলেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলের ‘নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র’। প্রায় ৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটির ভবন দাঁড় করানো হলে আর্থিক সংকটের কারণে ভেতরের কাজ করতে পারেনি গণপূর্ত বিভাগ। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় চরের বুকে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে চরাঞ্চলে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে আর এর প্রতিকার না পেয়ে অসহায় চরের লাখো মানুষ!

বিজ্ঞাপন

সদ্য যোগদানকারী মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারও মনে করছেন চরাঞ্চলে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কাজ পুরোপুরি মেষ না করে উদ্বোধন করা মোটেও যুক্তিসঙ্গত ছিল না। চরের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে এই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে একজন ইনচার্জসহ ২১ জন পুলিশ সদস্য মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করার কথা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২১ জুন পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চলে ৪ তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবনটির পরিপূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই রঙ করে উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সেদিন বেশ ঘটা করেই নটাখোলার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেছিলেন।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেদিন চরবাসীর মধ্যে বিরাজ করেছিল উৎসবের আমেজ। তারা মনে করেছিলেন, পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র হওয়ার মধ্য দিয়ে চরের মানুষজনের নিরাপত্তা জোরদার হবে। কিন্তু উদ্বোধনের পর গত এক বছরেরও বেশিসময় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পুলিশবিহীন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে চরের লাখো মানুষ পুলিশি সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। বিপর্যস্ত চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি চরবাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। চরে কোনো অপরাধ হলে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে হরিরামপুর উপজেলা সদর পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই অপরাধীরা পালিয়ে যায়।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের নটাখোলায় অবস্থিত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, চারতলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। চারিদিকে জঙ্গল এবং প্রবেশপথের মূল ফটকটিও ভাঙা। তদন্ত কেন্দ্রেটি পোকামাকড়ের আস্তানায় পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চরবাসী বলছেন, পদ্মার এই দুর্গম চরাঞ্চল আজিমনগর, লেছড়াগঞ্জ ও ধুলসুরা ইউনিয়নের একদিকে মানিকগঞ্জের শেষ সীমানা, অন্যদিকে ফরিদপুর জেলার বর্ডার। মানিকগঞ্জের পাশাপাশি ফরিদপুর জেলার কিছু মানুষও এই চরে যাতায়াত করে থাকেন। চরে চোরাকারবারিদের তৎপরতা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় এখানে মাদকসেবীদেরও আড্ডা চলে রীতিমতো। ফলে চরবাসী চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল হক মোল্লা বলেন, ‘আমাদের চরবাসীর আইনি সহায়তা ও নিরাপত্তার জন্য পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পদ্মার দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় এখানে নানা ধরনের অপরাধ সংগঘটিত হয়ে থাকে। জমি দখল থেকে শুরু করে ফসল লুটপাট, বিচারের নামে প্রহসন, চোরাকারবার চরাঞ্চলের নিত্যদিনের ঘটনা। পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটির কার্যক্রম চালু থাকলে চরে অপরাধের মাত্রা কমে যেত।’

তিনি আরো বলেন, ‘তদন্ত কেন্দ্রের পুরোপুরি কাজ সমাপ্ত না করে দীর্ঘ এক বছর আগে উদ্বোধন করা করা মানে চরবাসীকে ধোঁকা দেওয়া। কবে নাগাদ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি চালু হবে সেটা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। চরের শান্তি-শৃঙ্খলা এবং আইনি সহায়তার জন্য দ্রুত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কার্যক্রম চালু হওয়া উচিত। ’

মানিকগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বনাথ বণিক বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই মূলত চরে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটি পরিপূর্ণতা পাচ্ছে না। অবশিষ্ট কাজের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ফান্ড দেওয়া হলে বাকি কাজ আমরা শেষ করবো।’

মানিকগঞ্জের নতুন পুলিশ সুপার মো. বশির আহমেদ বলেন, ‘আমি শুনেছি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের কাজ পরিপূর্ণভাবে সমাপ্ত না করে উদ্বোধন করা হয়েছে। ফান্ডের সমস্যা থাকায় গণপূর্ত বিভাগ কাজ শেষ করতে পারেনি। ফান্ডের বিষয়টি নিয়ে আমরা পুলিশ হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করবো, যাতে দ্রুত পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটির অসমাপ্ত কাজ শেষ করা যায়।’

মানিকগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৬ তলা ভিতের ওপর চারতলা পর্যন্ত নটাখেলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (সিভিল, সেনেটারি ও বৈদ্যুতিক কাজ) নির্মাণ ব্যয় ৩ কোটি ৭৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত মোট কাজ হয়েছে দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকার। নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরও প্রয়োজন এক কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। যা বাংলাদেশ পুলিশ এখনো দেয়নি।

সারাবাংলা/এমও

দুর্গম চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র