‘ভোলায় ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে’
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৪
ঢাকা: দ্বীপ জেলা ভোলায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সেটি ঠিক নয়। এটা সঠিক হলে আমাদের গ্যাসের কোনো সংকট থাকতো না, আমদানিরও প্রয়োজন হতো না।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যারা গ্যাস সেক্টর সম্পর্কে এবং গ্যাসের মজুত সম্পর্কে ভালো জানেন তাদের সঙ্গে আমরা বসেছি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম, কানাডায় গ্যাসের মজুত বিশেষজ্ঞ হোসনে আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমামসহ কয়েকজনকে নিয়ে বসেছি।’
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) কর্মকর্তাকে ভোলায় গ্যাসের মজুতের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরার অনুরোধ জানালে তারা জানান, ভোলার চরফ্যাশনে আমাদের কোনো সিসমিক সার্ভের ডাটা নেই। শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে ২ দশমিক ০৪৭ টিসিএফ (উত্তোলনযোগ্য ১.৪৩২ টিসিএফ) প্রমাণিত গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে। ভোলা জেলার অন্তর্গত তিনটি (শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা) গ্যাসক্ষেত্রে এ পর্যন্ত সর্বমোট নয়টি কূপ খনন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাপেক্স ও গ্যাজপ্রমের যৌথভাবে প্রণীত সিসমিক ডাটা বিশ্লেষণ রিপোর্ট অনুযায়ী, ভোলা জেলার দক্ষিণাংশে চরফ্যাশন এলাকায় ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ এবং শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র এলাকার নতুন জোনে ও গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যবর্তী স্থানে ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ অর্থাৎ মোট ৫ দশমিক ১০৯ টিসিএফ গ্যাস রিসোর্স হিসেবে থাকতে পারে।
রিপোর্টে ওই প্রাক্কলন নিশ্চিতের জন্য বর্ণিত এলাকায় থ্রিডি সিসমিক সার্ভের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই দুটি এলাকায় ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা বিবেচনায় মোট ৫ দশমিক ১০৯ টিসিএফ সম্ভাব্য রিসোর্সের কথা উল্লেখ করে সংবাদপত্র খবর প্রকাশ করেছে, যা প্রমাণিত মজুত হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। একই রিপোর্টে চরফ্যাশন এলাকায় ৯০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ১ দশমিক ১৩৪ টিসিএফ এবং তিনটি গ্যাসক্ষেত্র ও নিকটবর্তী এলাকায় ৯০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে শূন্য দশমিক ৬৭৫ টিসিএফ মোট ১ দশমিক ৮০৯ টিসিএফ গ্যাস হয়েছে বলেও জানান বাপেক্স কর্মকর্তা।
ব্রিফিং এ জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘যেই জায়গাটার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমরা সিসমিক সার্ভে ও ড্রিলিং শুরু করব। গত একনেকে চারটি কূপ খননের জন্য প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমাদের গ্যাস প্রয়োজন, গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের কারণে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যেখানে গ্যাসের সম্ভাবনা আছে, এটাকে আমরা বের করতে চাই। আরও ১০০টি কূপ খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেটাকে এখন অমূলক বলছি, সেটা একসময় বাস্তব হয়ে উঠবে।’
ব্রিফিংয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘গ্যাসের মজুত নির্ণয়ের জন্য প্রথমে সিসমিক সার্ভে করা হয়। তার পর সার্ভের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলো ঠিক করে কোথায় সবচেয়ে বেশি গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এর পর সেখানে তারা ড্রিল করে। ড্রিল করে যদি গ্যাস পাওয়া যায় তখন তারা এটাকে প্রমাণিত মজুত হিসেবে ঘোষণা দেয়।
তিনি বলেন, ‘প্রমাণিত কিংবা প্রভাবল না হলে আমরা কোনো গ্যাসের মজুত হিসাবে আনি না। মজুতের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেটা মিস লিডিং। ভোলায় মোট গ্যাসের মজুত ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।’
আরেক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, ‘ভোলাতে যে ৫ টিসিএফ গ্যাসের কথা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল। এটা রিসোর্স হতে পারে, মজুত নয়। আপনি ড্রিলিং করে না পেলে মজুত বলতে পারবেন না।’
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম