Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলতি সপ্তাহেই পোশাক কারখানায় স্থিতিশীলতা ফিরবে, প্রত্যাশা মালিকদের

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫২

ঢাকা: হাতেগোনা দু’একটি বাদে আগামীকাল শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে খোলা থাকবে প্রায় সব পোশাক কারখানা। জুট ব্যবসা নিয়ে আধিপত্য বিস্তারেরও অবসান ঘটেছে অনেকটাই। চলমান অস্থিরতা কাটিয়ে দেশের পোশাক কারখানায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। সবমিলিয়ে চলতি সপ্তাহেই পোশাক কারখানায় পুরোদমে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে প্রত্যাশা মালিকদের।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের পোশাক কারখানায় অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাস পেরিয়ে গেলেও শিল্প এলাকায় পুরোদমে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। জুট ব্যবসার অধিপত্য নিতে উদ্যোক্তা ও কারখানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করছে একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। শিল্প এলাকায় পুলিশ সক্রিয় না থাকায় চলছিলো অস্থিরতা। ইন্ধন দিচ্ছিলো বহিরাগতরা। শ্রমিক অন্দোলনে অস্থির হয়ে উঠে গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়া। তবে ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে সব এলাকার শ্রম পরিস্থিতি।

বিজ্ঞাপন

পোশাক খাতের চলমান পরিস্থিতি সম্প্রতি বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতিতে (বিজিএমইএ) এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সেনাবাহিনী জানায় বহিরাগতদের আক্রমণ, শ্রমিকদের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক দাবির সমন্বয়ে অস্থিরতা ও ঝুট ব্যবসার আধিপত্য-এই তিন কারণে পোশাক খাতে অস্থিরতা চলছে। তবে গেল ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ওই সভায় সেনাবাহিনী জানায়, এখন আর বহিরাগতদের আক্রমণে অস্থিরতা হচ্ছে না। আর পুলিশের মতে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতেই একটি চক্র শিল্প কারখানায় অস্থিরতা তৈরি করছে।

বিজ্ঞাপন

পোশাক খাতের উদ্যোক্তারাও এসব বিষয়কেই অস্থিরতার কারণ হিসাবে জানিয়েছেন একাধিকবার। সম্প্রতি বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বহিরাগতদের ইন্ধনে সৃষ্ট শ্রমিক আন্দোলনে ১৬৭টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। যদিও এ আন্দোলনে শ্রমিকদের সংশ্লিষ্টতা নেই। বহিরাগতদের হামলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে বন্ধ কারখানার সংখ্যা কমতে কমতে ২০ থেকে ১০ টিতে নেমে আসে।

জানতে চাইলে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের পোশাক কারখানায় তৈরি হওয়া অস্থিরতা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে। সর্বশেষ আশুলিয়ায় যে সমস্যা ছিলো, সেখানেও এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মালিক, শ্রমিক সংগঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- সব পক্ষের উদ্যোগের কারণে স্থিতিশীলতা ফিরছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সাত থেকে আটটি কারখানা বন্ধ ছিলো। আশা করি শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সবগুলো ফ্যাক্টরি খুলে যাবে। আগামীকাল থেকে আর কোনো অস্থিরতা থাকবে না বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার পরিবর্তন, জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও বহিরাগতদের ইন্ধনে এবার পোশাক কারখানায় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। বিষয়গুলো আগেও আমরা জানিয়েছি। মূলত সরকার পরিবর্তনের পর প্রতিবারই পোশাক কারখানায় এই অস্থিরতা তৈরি হয়। আমরা আশা করছি আগামীকাল থেকে সেই অস্থিরতা পুরোদমে কেটে যাবে।’

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘পোশাক কারখানায় এখন অবস্থা আগের চেয়ে অনেক বেটার। আগামীকাল থেকে হয়তো পরিস্থিতির আরও উন্নতি ঘটবে। এখনও কিছু কারখানা বন্ধ আছে। তবে সেটি খুব বড় আকারে নয়। আগামীকাল থেকে পোশাক কারখানায় আরও স্থিতিশীলতা ফিরবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’

জানতে চাইলে দেশের নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গেল বৃহস্পতিবার ২১ টি গার্মেন্টস বন্ধ ছিলো। প্রায় ১১ টি কারখানা আগামীকাল থেকে ১৩/১ ধারায় থাকা লে অফ (কাজ নেই, বেতন নেই) তুলে নেবে। ফলে আমরা ধারণা করছি, আগামী সপ্তাহে দেশের সবগুলো পোশাক কারখানায় পুরোপুরি স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘শ্রমিকরা এখন বুঝতে পেরেছে তাদের দাবির একাংশ অবাস্তব ও অযৌক্তিক। তাদের বেতনের দাবিটিকে আমরা অযৌক্তিক বলবো না। তবে সর্বশেষ মজুরি কাঠামোতেই আমরা ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়িয়েছি। এখন মালিকরা শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে নিজস্বভাবে বিষয়টি সুরাহা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাইরের যে উস্কানি ছিলো, সেটি এখন আর নেই। শ্রমিকরা বুঝতে পেরেছে কারো ইন্ধনে ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে তাদেরই ক্ষতি। ফলে পোশাক কারখানায় শ্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শিগগির পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।’

সারাবাংলা/ইএইচটি/এনইউ

অস্থিতিশীলতা জুট ব্যবসা পোশাক কারখানা বিজিএমইএ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর