Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কখনো সাংবাদিক, কখনো সমন্বয়ক— প্রতারণাই তুতুর পেশা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৪০

ঢাকা: নুজহাতুল হাসান রাজিব ওরফে তুতু। বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাটিকামারীতে। বাবার নাম মৃত মালেক মিয়া। বর্তমানে থাকেন রাজধানীর পল্লবী এলাকায়।

অভিযোগ রয়েছে, তুতু একজন ভুয়া সাংবাদিক। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করাই তার মূল পেশা। সামাজিক যোগায়োগ মাধ্যমে মানুষের নামে নানারকম কুৎসা রটিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি ডিজিটাল আইনে মামলাও হয়েছে। এখন তিনি ভুয়া সমন্বয়ক সেজে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেপরোয়া জীবন যাপনের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে ছোটবেলায় তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় পরিবার। বাবা মা ও ভাইয়েরা পর্যন্ত বিরক্ত তার অপকর্মে। রাজধানীতে বস্তির অসামাজিক পরিবেশে বড় হয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি জাল জালিয়াতিতে সিদ্ধহস্ত। তার সব সার্টিফিকেট জাল। এর আড়ালে মূলত তার পেশা প্রতারণা। সাংবাদিক পরিচয়ে সবার কাছে পরিচয় দিলেও তিনি মূলত সাংবাদিক নন।

শুধু তিনিই নন এমনকি তার স্ত্রীও এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। স্বামী আর স্ত্রী মিলে বিভিন্ন মানুষের বিরুদ্ধে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের হোয়াটসআপে পাঠান। এরপর তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে টাকা দাবি করেন। অনেকে ভয়ে টাকা দিতেন আবার অনেকেই দিতেন না। যারা টাকা দিতেন না তাদের নানাভাবে হয়রানি করতেন। এভাবে সাংবাদিকতার আড়ালে চলতো তাদের অপরাধী জীবন।

জানা যায়, প্রায় বছর চারেক আগে কুয়েত সোসাইটি ফর রিলিফ-এর চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে একাধিক ডিজিটাল কন্টেন্ট বানিয়ে তাদের হোয়াটসআপে পাঠান। সেখানে হয়রানিমূলক ভাষ্য দিয়ে এসব কন্টেন্ট ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার হবে জানিয়ে কোটি টাকা দাবি করেন। পরে কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ডিএমপির মামলা করে। সেই মামলার তদন্তে বের হয় নুজহাতুল হাসান তুতু আর তার ভাগিনা এ কাজে জড়িত। আদালতে ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তিনি। সেই মামলায় চার্জশীট হলে পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তিনি। এরপর আদালতে দুই বছরের সাজা হয়। জেল থেকে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তিনি। তার নামে ক্রিমিনাল মামলা থাকায় তার পাসপোর্ট ব্লক করে দেয় ইমিগ্রেশন পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

মিরপুরে একটি চাঁদাবাজির অভিযোগে ডিবি পুলিশ আটক করলে স্ত্রীসহ শ্বশুড়বাড়ির লোকজন এসে ভালো আচরণের শর্তে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেন। এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন পুনর্বাসনের জন্য নিয়ে গেলেও সে পালিয়ে আসেন এবং অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেন।

তিনি বিভিন্ন মানবাধিকার কমিশনের ব্যানারে মানুষের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এখন সমন্বয়কদের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নামে মিথ্যা মানহানিকর সংবাদ প্রচার করে নানান হয়রানিসহ চাঁদাবাজি করছে অভিযোগ উঠেছে।

তুতুর বিষয়ে জানতে চাইলে বড় ভাই নুজহাদ বাপ্পি সারাবাংলাকে বলেন, ওর সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই। সে তার মতো থাকে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ শুনেছি। এগুলো বলে লাভ নেই। আমার ভাই খারাপ, প্রয়োজনে সাক্ষী দেবো কেউ ডাকলে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে নুজহাতুল হাসান রাজিব তুতুর মোবাইল নম্বরে কল করা হলে, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কল কেটে দেন তিনি। এরপর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় তার।

তার বিষয়ে জানতে চাইলে পল্লবী থানার এসআই কামরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, তুতুর নামে থানায় কয়েকটি জিডি রয়েছে। সেগুলো তদন্তাধীন। জিডিগুলো বেশিরভাগই প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয়ভীতি সংক্রান্ত।

ভুক্তেভোগীদের দাবি, তুতুর প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে চান তারা।

সারাবাংলা/ইউজে/এনইউ

প্রতারণা ভুয়া সমন্বয়ক ভুয়া সাংবাদিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর