Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নির্বাহী থেকে পৃথক না হওয়াই বিচার বিভাগের প্রধান সমস্যা’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২৬

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে- নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকররূপে পৃথক না হওয়া। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা দ্রুত দূর করে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, আধুনিক, দক্ষ ও প্রগতিশীল বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ইনার গার্টেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া অভিভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিগত বছরগুলোতে বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। ন্যায় বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট ও বিকৃত করা হয়েছে। শঠতা, বঞ্চনা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। অথচ বিচার বিভাগের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা হচ্ছে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস। তাই নতুন এই বাংলাদেশে আমরা এমন একটি বিচার বিভাগ গড়তে চাই, যেটি বিচার এবং সততা ও অধিকারবোধের নিশ্চয়তার একটি নিরাপদ দূর্গে পরিণত হবে। আমি আপনাদের Fiat justitia, ruat caelum এই প্রবাদটির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। যার অর্থ হলো- ‘Let justice be done, though the heavens fall.’ আমাদের সামনে এখন যে বাধাগুলো রয়েছে সেগুলোর মুখোমুখি দাঁড়িয়েই আমাদের নতুন ভোরের শপথ নিতে হবে এবং নতুন যাত্রার সূচনা করতে হবে।”

ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘যে ন্যায়ের আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করে লক্ষ-জনতা এ দেশ স্বাধীন করেছিল তা বাস্তবায়নের জন্য অপশাসন রুখে দিয়ে নতুন দেশ ও জাতি গঠনের গুরুদায়িত্ব আমাদের ওপর অর্পণ করেছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। এই লক্ষ্যে আমাদের এখন জনউত্তাপের এই দৃষ্টিকোণ থেকেই ভাবতে হবে যে, কেন বিচার বিভাগের এই ছন্দপতন হয়েছিল? কী কী বিষয় এর জন্য দায়ী। এই পথে কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে, সেগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারপর আমাদের কাছে কী কী জনসম্পদ ও অবকাঠামোগত সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে তা নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে এবং এই জাতীয় দুর্বিপাক থেকে উত্তরণপূর্বক একটি জনমুখী আইন ব্যবস্থা ও বিচার কাঠামো বির্নিমাণে করণীয় সম্পর্কে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ (Roadmap) প্রস্তুত করতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই যে, বিদ্যমান সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান সমস্যা হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ কার্যকররূপে পৃথক না হওয়া। এর কুফল আমরা সবাই ভোগ করেছিলাম গত দেড় দশক ধরে। এ ছাড়াও আছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। মামলা অনুপাতে বিচারকের নিদারুণ স্বল্পতা, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাবের ঘাটতি, আদালতগুলোর অবকাঠামোগত সংকট, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালা না থাকা, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ, স্থায়ীকরণ ও উন্নীতকরণের ক্ষেত্রে কোনো আইন না থাকা ও প্রথাগত জ্যেষ্ঠতার নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ইত্যাদি বিষয়গুলো; যা আমাদের বার বার পিছিয়ে দিয়েছে।’

রেফার আহমেদ বলেন, ‘একটি ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থার কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে, স্বল্প সময় ও খরচে বিরোধের মীমাংসা নিশ্চিত করে জনগণ, সমাজ ও রাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেওয়া। এ জন্য বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা থেকে পৃথক ও স্বাধীন করা সবচেয়ে জরুরি। কেননা শাসকের আইন নয়, বরং আইনের শাসন নিশ্চিত করাই বিচার বিভাগের মূল দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ যেন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য আমি জরুরি ভিত্তিতে বিচার বিভাগে কিছু সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি। এই সংস্কারের উদ্দেশ্য হবে, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে তা দ্রুত দূর করে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী, আধুনিক, দক্ষ ও প্রগতিশীল বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন একান্ত আবশ্যক। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৬ক অনুচ্ছেদে অধস্তন আদালতের বিচারকগণ বিচারকার্য পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বিচারকদের প্রকৃত স্বাধীনতা ততদিন পর্যন্ত নিশ্চিত হবে না, যতদিন না বিচার বিভাগে দীর্ঘ দিন ধরে বিরাজমান দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা, অর্থাৎ, সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ এখতিয়ার সম্পূর্ণরূপে বিলোপ করে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, “এটি হবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রথম ধাপ। সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের উপর হাইকোর্ট বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা থাকবে মর্মে উল্লেখ রয়েছে। এই অনুচ্ছেদের বুনিয়াদে সংবিধানের কোনো সংশোধন না করেই শুধুমাত্র রুলস অব বিজনেস (Rules of Business) এবং বিচারকদের নিয়োগ, কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, বরখাস্তকরণ, শৃঙ্খলা বিধান ইত্যাদি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রণীত যে সকল বিধিমালা প্রচলিত রয়েছে সেগুলোতে প্রদত্ত ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’র সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে সেখানে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়’র সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করলেই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় তথা বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পথে আইনগত কোনো বাধা থাকবে না।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘জেলা আদালতগুলোর বাজেট বরাদ্দের বিষয়টিও তখন বিচার বিভাগীয় সচিবালয় হতেই নিশ্চিত করা হবে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের ন্যায় বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রস্তুতক্রমে আমরা শিগগিরই আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং আইন উপদেষ্টার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান সময়ই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের শ্রেষ্ঠ সময়।’

তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পর বিচার বিভাগে গুণগত পরিবর্তন আনতে আমার অন্যতম কাজ হবে বিচারকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে পদায়ন নিশ্চিত করা। ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে কর্মরত বিচারকদের মধ্য থেকে সৎ, দক্ষ, স্বাধীন মনোভাব ও নেতৃত্বদানের গুণাবলী সম্পন্ন উপযুক্ত বিচারকদের নিয়ে প্যানেল বা ফিট লিস্ট তৈরি করে সে প্যানেল থেকে প্রতিষ্ঠান প্রধান, যেমন- জেলা জজ, দায়রা জজ, সিজেএম, সিএমএম পদে নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা আমি নিশ্চিত করব, যেন বিচার বিভাগ পূর্বের শাসনামলের ন্যায় ভীতু ও আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে না পারে। বর্তমানে বিচারকদের পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ঘোষিত নীতিমালা নেই। ফলে পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনেক সময়ই বিচারকগণ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। আমি এ বিষয়ে একটি যথোপযুক্ত নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন করব।’

ড. রেফাত আহমেদ বলেন, ‘শুধু বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করলেই হবে না, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা হিসেবে সংবিধানের ৯৫(২) অনুচ্ছেদে যে বিধান রয়েছে, কেবল সেটুকু নিশ্চিত করে বিচারক নিয়োগের ফলে সুপ্রিম কোর্টে এক অভূতপূর্ণ অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হিসেবে পালন করেছে। এটি ন্যায় বিচারের ধারণার সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য স্বাধীন Judicial Appointments Commission রয়েছে। Constitutional Reform Act 2005 ও The Supreme Court (Judicial Appo atments) Regulations 2013 অনুসারে যোগ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই কমিশন দরখাস্ত আহ্বান এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে সর্বাপেক্ষা যোগ্য ব্যক্তিকে বিচারক হিসেবে মনোনীত করে। ওমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের সংবিধানেও উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের কোনো সুস্পষ্ট দিক নর্দেশনা না থাকার প্রেক্ষিতে সে দেশের উচ্চ আদালত বিচারিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে ১৯৯৩ সাল হতে কলেজিয়াম (Collegium) পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটিয়েছে।’

‘তাই উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে অন্যান্য দেশগুলো অনুসৃত আধুনিক পদ্ধতিসমূহ বিবেচনায় নিয়ে আমাদের দেশে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে একটি কলেজিয়াম (Collegium) ব্যবস্থা চালু করতে আমি সচেষ্ট হব। আমি আশাবাদ ব্যক্ত করি যে এই প্রচেষ্টায় আমি আপনাদের সকলকে আমার পাশে পাব।’

প্রধান বিচারপতি তার অভিভাষণে বলেন, ‘মামলাজট বিচার বিভাগের একটি বড় সমস্যা হিসেবে সব আমলেই চিহ্নিত হয়ে এসেছে। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৪২ লাখ মামলা বিচার নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমাণ আছে। মামলাজট নিয়ে সুধীমহলে অনেক ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু এটি মুদ্রার একটি পিঠ। মুদ্রার অন্য পিঠটা কখনো খুব বেশি আলোচনায় আসে না। মুদ্রার অন্য পিঠে আছে স্বল্প সংখ্যক লোকবল, এজলাস সংকট তথা অবকাঠামোগত অসুবিধাসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতা। কিন্তু এর মধ্যেও মাত্র ২০০০ বিচারক কর্তৃক এক বছরে গড়ে ১০ (দশ) লাখের বেশি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। এই সংখ্যা প্রমাণ করে মামলাজটের কারণ বিচার বিভাগ বা বিচারকগণ নন। বরং মামলা জটের অন্যতম কারণ হচ্ছে মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যার অপ্রতুলতা। বর্তমান বাস্তবতায় বিচার বিভাগকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে সমগ্র বিচার বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামো বা অর্গানোগ্রাম সংস্কার করে দেশের জনসংখ্য ও মামলার সংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’

‘এ ছাড়া, বর্তমানে যে প্র্যাকটিস রয়েছে যে একজন বিচারক একইসঙ্গে একাধিক কোর্ট ও ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বে থাকেন, তা বিলোপ করে একজন বিচারককে একটি কোর্টের দায়িত্ব দিতে হবে। এজন্য আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে। এ ছাড়া, দেওয়ানি ও ফৌজদারি এখতিয়ার অনুসারে পৃথক আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন। যুগ্ম জেলা জজ হতে জেলা জজ পর্যন্ত আদালতে এই সংস্কার আনতে হবে। এসব কিছুর জন্য সিভিল কোর্টস অ্যাক্টে পরিবর্তন আনতে হবে। সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরুতে এখন অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমেও এটা করা সম্ভব। এ সব বিষয়ে আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি।’

তিনি বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা বিচারপ্রার্থীদের দীর্ঘশ্বাসের কারণ। বিচার ব্যবস্থাকে এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যেন বিচারপ্রার্থীদের সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে এবং আদালত প্রাঙ্গণে তাদের বার বার না আসতে হয়। তবে এই বিষয়টি বিচারকের একার ওপর নির্ভর করে না। এজন্য বারের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। আইনজীবীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, ফৌজদারি মামলার তদন্ত কাজ যেন দীর্ঘ দিন ঝুলে না থাকে, পুলিশকে সে ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। আমরা দেখেছি চাঞ্চল্যকর সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে ১১১ বার সময় নেওয়া হয়েছে। এটা কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। তদন্ত কাজেই যদি একাধিক বছর সময় লেগে যায়, সে মামলার বিচারকাজ পরিচালনা অনেক কঠিন হয়ে গড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। বিচারকদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং বিচার বিভাগে দুর্নীতি বন্ধ করতে আমি বদ্ধপরিকর। আজ আমি এই মঞ্চ হতে বিচার বিভাগে যে কোনো প্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করছি। আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি পর্যায়ে একজন বিচারকের দুর্নীতি সমগ্র বিচার বিভাগের উপরেই কালিমা লেপন করে। এমনকি আদালতের একজন সহায়ক কর্মচারী কিংবা আইনজীবী সহকারীও যদি দুর্নীতি করেন, সাধারণ জনগণ সাদা চোখে সেটিকে বিচার বিভাগের অবক্ষয় হিসেবেই গণ্য করে। তাই বিচারাঙ্গণ হতে যেকোনো প্রকার দুর্নীতি বিলোপ করতে হবে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যদি দুর্নীতি প্রতিরোধে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান, তথা জেলা জজ, কিংবা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক ব্যর্থ হন তবে সেটি-কে তার পেশাগত অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার বা কর্মচারির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, আমাদের উচ্চ আদালত সম্পর্কেও বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম এর অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেক সময়েই সুপ্রিম কোর্টের এফিডেভিট (Affidavit) শাখা, Dispatch শাখা, নকল শাখার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে নেতিবাচক খবর আমার কানে আসে। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করতে চাই, এ ধরণের কোনো অনিয়ম আর বরদাস্ত করা হবে না।’

তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচার বিভাগে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনের নিমিত্ত আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ পর্যালোচনাপূর্বক বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়ন ও স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে প্রংয়াজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে অন্তর্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা, নওগাঁর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ মন্ডল ও খুলনার জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদা খাতুন।

অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অভিভাষণ অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কর্মকর্তা ও সারা দেশের প্রায় ২ হাজার বিচারক উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম

অভিভাষণ ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ নির্বাহী বিভাগ প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভারত থেকে ফিরলেন ৯ বাংলাদেশি তরুণী
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:২৩

আজ জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেবেন ড. ইউনূস
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:০৪

সবজি-মুরগির বাজার চড়া, অধরা ইলিশ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:১০

সম্পর্কিত খবর