Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্রুত বিচারে ই-জুডিশিয়ারি, আসছে ২৬২৫ কোটি টাকার প্রকল্প

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:১০

বিচারব্যবস্থা স্বচ্ছ ও দ্রুত করবে ই-জুডিশিয়ারি। প্রতীকী ছবি

ঢাকা: দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে ই-জুডিশিয়ারি ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এর অধীনে বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনায় প্রবর্তন করা হবে ডিজিটাল ব্যবস্থা। বিচারব্যবস্থার জন্য প্রশাসনিক বিচার কার্যক্রম হবে স্বয়ংক্রিয়। প্রতিষ্ঠা করা হবে ই-আদালতকক্ষও।

এ জন্য ‘ই-জুডিশিয়ারি’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তুত করেছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৬২৫ কোটি ৫৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, আইন ও বিচার বিভাগের অধীনে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে মামলা জট কমবে, সেই সঙ্গে কমবে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ।

বিজ্ঞাপন

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবটি নিয়ে আজ সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) প্রকল্প মুল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান।

আইন ও বিচার বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের প্রধান অঙ্গ ই-কোর্টরুম বা ই-আদালতকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা। এটি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড একটি ব্যবস্থা, যার অধীনে একটি আদালতকক্ষের সম্পূর্ণ কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হতে পারে। পুরো প্রকল্পের অর্ধেকেরও বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এই একটি অঙ্গেই।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ই-কোর্ট রুম প্রতিষ্ঠার জন্য ৯৩৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পর্যালোচনা সভার সিদ্ধান্তের পর পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) এ খাতে ব্যয় ৫২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৪৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অঙ্গের ব্যয় মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

গত বছরের ২২ আগস্ট এ প্রকল্পটি নিয়েই একটি পর্যালোচনা সভা হয়েছিল। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, জুডিশিয়াল রির্সোস প্ল্যানিং সফটওয়্যারের আওতায় পৃথক পৃথক সফটওয়্যার পরিধি, বিষয়বস্তু ও সিকিউরিটি সিস্টেম উল্লেখ করে বিবরণ পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়গুলো পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাবে যুক্ত করা হয়নি বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুডিশিয়াল রিসোর্স প্ল্যানিং সফটওয়্যার। এর মাধ্যমেই মূলত ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ফলে অভিজ্ঞ কারিগরি টিম গঠন করে সফটওয়্যারগুলোর পরিধি ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ করার প্রয়োজন রয়েছে বলে কমিশন মনে করছে। সোমবারের পিইসি সভায় এসব বিষয় তুলে ধরা হবে।

প্রকল্পের আরও যেসব অঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন

জেলা পর্যায়ে আদালতগুলোর জন্য মাইক্রো ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য শুরুতে ১৭৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল। গত বছরের ২২ আগস্ট পর্যালোচনা সভা-পরবর্তী পুনর্গঠিত ডিপিপিতে এ অঙ্গে ব্যয় ৯৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২৭৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ অঙ্গের ব্যয় মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ অঙ্গের ব্যয় নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।

আগের পর্যালোচনা সভায় প্রকল্পের উপদেষ্টার জন্য চার কোটি টাকা ব্যয়ে জিপ গাড়ি কেনার প্রস্তাব বাদ দিতে বলা হয়েছিল। পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাবনায় সেটি করা হয়নি। অফিস স্টেশনারি, অফিস ভাড়া, পরামর্শক সেবা, পেট্রোল, গ্যাস ও জ্বালানি, কম্পিউটার সামগ্রী, কম্পিউটার মেরামত, যানবাহন সংরক্ষণ ও মেরামত ইত্যাদি ব্যয় আরও পর্যালোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ ও বছরভিত্তিক বিভাজন দেখানোর কথা বলা হয়েছিল। সেই পরামর্শও মানা হয়নি পুনর্গঠিত প্রকল্প প্রস্তাবনায়। ফলে এসব বিষয়েও পিইসি সভায় প্রশ্ন উঠবে।

এদিকে সেমিনারের ব্যয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ধরা হয়নি। অডিও-ভিডিও নির্মাণের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে এক জায়গায় মিনিটে ২০ হাজার টাকা ও অন্য জায়গায় সেকেন্ডে ২০ হাজার টাকা খরচের কথা বলা হয়েছে, যা অসঙ্গতিপূর্ণ। অফিস ভাড়া এক কোটি ৮০ হাজার টাকা থেকে দুই কোটি ৪০ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়া ইলেকট্রিক আর্চওয়ে, এক্সরে ব্যাগেজ স্কান্যার ও নিরাপত্তা অঙ্গে ১০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এসব যন্ত্রপাতিগুলোর কারিগরি বৈশিষ্ট্য ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। এসব সরঞ্জাম ই-জুডিশিয়ারি কার্যক্রমের সঙ্গে কতটুকু সম্পর্কিত, প্রশ্ন উঠেছে সেটি নিয়েও।

পুরনো নথি ডিজিটাল করার চ্যালেঞ্জ

আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ই-জুডিশিয়ারি চালু করলে বিচার প্রক্রিয়া পুরোপুরি ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়বে। তখন পুরনো সব মামলার নথিপত্রেরও ডিজিটাল আর্কাইভ গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য ২৫০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এত অর্থ বরাদ্দ করা হলেও কাজটি চ্যালেঞ্জিং বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, বাস্তবে পুরনো নথিপত্র স্ক্যান করে সেই স্ক্যান কপি ই-জুডিশিয়াল সিস্টেমে ব্যবহারের উপযোগী হবে না। বরং ই-জুডিসিয়াল সিস্টেমের সফটওয়্যারে ব্যবহারের উপযোগী করতে হলে ওইসব নথিপত্রের সব তথ্য ম্যানুয়াল ডাটা এন্ট্রি করে সংরক্ষণ করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ।

এ অবস্থায় পুরনো নথিগুলো এখনই ডিজিটাল আর্কাইভ না করে ই-জুডিশিয়ারি চালুর পর ই-কোর্টে দায়ের করা মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্কাইভের ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটি নিয়ে সভায় আলোচনা করা হবে।

প্রকল্পটি নিয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রধান ইশরাত জাহান তসলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। তাই এর ব্যয়গুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। আমরা সবসময়ই চেষ্টা করেছি, কোনো প্রকল্পে যেন বাড়তি ব্যয় না হয়। অনেক ক্ষেত্রে চাপের কারণে সম্ভব হতো না, কখনো কখনো কার্যকর পিইসি সভাও করা যেত না। এখন আশা করছি চাপমুক্তভাবে কাজ করা যাবে। পিইসি সভায় বসে আমরা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সুপারিশ দিয়ে থাকি। এখানে অহেতুক ব্যয়ের সুযোগ থাকে না।’

৮ বছরের পুরনো প্রকল্প

মাত্র পিইসি সভায় উত্থাপনের জন্য প্রস্তুত করা হলেও ই-জুডিয়িশারি প্রকল্পটি নতুন নয়। ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ওই সময়কার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এই কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। ই-জুডিশিয়ারি পাইলট প্রকল্প শীর্ষক একটি প্রকল্প ৩২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে দেশের নির্বাচিত কয়েকটি জেলার বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়।

ওই সভায় উদ্যোগী মন্ত্রণালয় হিসেবে আইন ও বিচার বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে যৌথভাবে উপস্থান করে প্রকল্প এলাকার পরিধি বিস্তৃত করে সারা দেশে বাস্তবায়নের জন্য অন্যান্য সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। পরে আইন ও বিচার বিভাগ বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের কারিগরি সহায়তায় ই-জুডিশিয়ারি পাইলট প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে, যেখানে ব্যয় করা হয় দুই হাজার ২০৯ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের মেয়াদ রেখে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক উইংয়ে পাঠানো হয় প্রকল্পটি। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এরপর আর তেমন অগ্রগতি ছিল না প্রকল্পটি নিয়ে। ছয় বছর পর ফের প্রকল্পটি নিয়ে হতে যাচ্ছে পিইসি সভা।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

আইন ও বিচার বিভাগ আইন মন্ত্রণালয় আইসিটি বিভাগ ই-জুডিশিয়ারি পরিকল্পনা কমিশন পিইসি সভা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর