Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সমবায়ভিত্তিক কৃষি প্রজেক্ট বদলে দিচ্ছে বেকারদের জীবন

আব্দুর রউফ পাভেল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩০

নওগাঁ: নওগাঁয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ‘সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্ট’ নামের ব্যতিক্রমী কৃষি উদ্যোগ। সবুজ মননে, সবুজ সৃজন এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে ২০১৯ সালে এই প্রজেক্টের শুরু হয়। শুরু থেকেই প্রজেক্টের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাবিব রতন।

বেকার এবং প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে সমবায়ভিত্তিক এই প্রজেক্টে শুরুতে সঙ্গী ছিল ১৫ জন। পরবর্তীতে ১০ জনের এই কৃষি উদ্যোগের অর্থ সংগ্রহের পদ্ধতি শুরু হয় ব্যতিক্রমী পদ্ধতিতে। প্রতি মাসে একটি শেয়ার ১০০ টাকা হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে সংগ্রহ করা হয়। ১০০ শেয়ার ১০ জনের মাঝে সামর্থ্য বিবেচনা করে বণ্টন করা হয়েছিল। প্রতি মাসের ১০০ টাকার সঞ্চয় প্রান্তিক কৃষকদের সহজে অংশগ্রহণ ছিল এই উদ্যোগের একটি আলোকিত দিক। প্রায় ৬ মাস অর্থ সংগ্রহের পর চকাদিন গ্রামে দুই একর জমি ১০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে শুরু হয় মিশ্র ফল বাগান তৈরির কাজ।

বিজ্ঞাপন

ব্যতিক্রমী এই প্রজেক্টে চায়না-৩ লেবু, বাউ-৩ ও বারি-১ জাতের মাল্টা, ড্রাগন ও থাই জাম্বুরার চারা লাগানো হয়। আধুনিক প্রযুক্তির মনন ও সম্মিলিত পরিশ্রমে অল্প সময়ের মধ্যে সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্ট মডেল মিশ্র ফল বাগান হিসেবে প্রস্ফূটিত হয়ে ওঠে।

করোনা মহামারির সময়ে চায়না-৩ জাতের লেবুতে অভাবনীয় সাফল্য আসে। সে সময় বাজারে লেবুর চাহিদা ও দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার অনেক শিক্ষিত বেকার ও প্রবাসফেরত যুবকরা লাভজনক লেবু চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কৃষিতে আগ্রহী হয়ে ওঠা এসব যুবকদের সার্বিক সহযোগিতা পরামর্শ এবং হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রজেক্ট প্রাঙ্গণে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হতে থাকে।

বিজ্ঞাপন

প্রজেক্টের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন ও নজরুল ইসলাম প্রতিদিন বাগানে কাজ করছেন এবং বাগানের শেয়ারের মুনাফার টাকায় উন্নতি করেছেন। এরকমভাবে এই প্রজেক্টে প্রায় ৬ জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে অনেক মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।

প্রজেক্টের অর্থ সম্পাদক মোকাদ্দেস সরদার বছরব্যাপী লেবু, মাল্টা, ড্রাগন ইত্যাদি ফল বিক্রির কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। ব্যস্ততার সঙ্গে লাভের প্রাপ্তি মোকাদ্দেসকে কৃষিতে ভীষণ আগ্রহী করে তুলেছে। ২০২৩ সালে নতুনভাবে আরো দুই একর জমি লিজ নিয়ে নতুন করে বাগান সৃজনের পরিকল্পনা করেন।

এক একর জমিতে টিস্যু কালচারে উৎপাদিত সম্ভাবনাময় জি-৯ কলার বাণিজ্যিক বাগান সৃজনের কাজ চলে। প্রথম রোপণের পর কিছু চারা মারা গেলেও ওই সালের জানুয়ারিতে রোপিত টিস্যু কালচারের চারা থেকে কলা সংগ্রহ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে। বর্তমানে বাগানে সারি সারি লম্বা কলা গাছে কাঁদি ঝুলে আছে। প্রতিটি কাঁদিতে কলার সংখ্যা ২০০-২৪০টি। অন্যজাতের কলা সাধারণত প্রতিটি কাঁদিতে ৬০-১২০টি পাওয়া যায়।

সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্টের মাধ্যমে জেলায় প্রথম জি-৯ কলার বাণিজ্যিক বাগানের সূচনা হয়েছে। রোগবালাই প্রতিরোধী ও রফতানিযোগ্য জি-৯ জাতের কলার চাষ বেশ লাভজনক। এ কলা জেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে। নতুন এই প্রজেক্টে এক একর জমিতে জি-৯ কলা, এক একর জমিতে ফিলিপাইনের ব্ল্যাক আখ এবং আলট্রা হাইড্রেন সিটিতে ব্যানানা ম্যাংগো আমবাগান উজ্জ্বল সফলতার হাতছানি দিচ্ছে।

শুধু তাই নয়, সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্টের সূচনা থেকেই ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ উৎপাদন শুরু করে। ১৫টি চারি থেকে নিয়মিত ভার্মি কম্পোস্ট উত্তোলন হচ্ছে। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অন্যান্য খামারিদের নিয়মিত জৈব সার ব্যবহারে জৈব সার বিপণন এবং উৎপাদনে কাজ করে চলেছেন।

প্রকল্পের পরিচালক হাবিব রতন জানান, ‘সুফলা নওগাঁ অ্যাগ্রো প্রজেক্ট’ উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে নিরাপদ ফল উৎপাদনে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে এবং অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করছে।

সারাবাংলা/এমও

সমবায়ভিত্তিক কৃষি প্রজেক্ট

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর