গান গাইতে গাইতে মারধর, খুনের ভিডিও নিয়ে তোলপাড়
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গান গাইতে গাইতে উৎসবের আমেজ তৈরি করে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। নির্মম এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকার আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কের নিচে এক যুবককে দু’টি স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ এ গান গেয়ে তাকে মারধর করছেন কয়েকজন তরুণ। এসময় কেউ কেউ মুখ দিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন আর কেউ করছিলেন উল্লাস।
গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লেও ঘটনাটি গত ১৪ আগস্টের বলে জানা গেছে।
খুনের শিকার ওই যুবকের নাম শাহাদাত হোসেন (২৪) বলে জানা গেছে। তিনি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নগরীর কোতোয়ালী থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে স্ত্রী শারমিন আক্তারের সঙ্গে থাকতেন। শাহাদাত নগরীর ফলমণ্ডির একটি দোকানে চাকরি করতেন।
গত ১৪ আগস্ট রাতে নগরীর প্রবর্তক এলাকা থেকে পুলিশ শাহাদাতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পরদিন শাহাদাতের চাচা মো. হারুন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে শাহাদাতের চাচা উল্লেখ করেন, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দু’টার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যার দিকে তার স্ত্রী শারমিন ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল নয়টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরীর প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে শাহাদাতের মরদেহ পড়ে আছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহাদাত হোসেনের মাথা, গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখমের পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান সারাবাংলাকে জানান, গত ১৪ আগস্ট প্রবর্তক এলাকা থেকে শাহাদাত নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। শনিবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখে শাহাদাতের স্ত্রী মারধরের শিকার ব্যক্তি তার স্বামী বলে নিশ্চিত করেছেন। যারা মারধর করেছেন, তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। তাদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম (এফ এইচ) হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেন অতীতে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা একদল শিক্ষার্থী, যারা আন্দোলন চলাকালে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। একইদিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে মারধর করে হত্যা করা হয়।
এর আগে, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে খুন করার ঘটনা ঘটেছিল। মূলত এসব ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানামুখী প্রতিক্রিয়ার পর চট্টগ্রামে একমাস আগে সংঘটিত এ ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।
সারাবাংলা/আইসি/এমও