Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘ন্যায্য দাবি পূর্ণ হলে বাবার আত্মা শান্তি পাবে’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:২৬

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের পর স্মারকলিপি দিয়েছে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজার। ছবি: সারাবাংলা

কক্সবাজার: ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় আমার বয়স তিন বছর। ওই ঘটনার পর বাবা চাকরিচ্যুত হয়। বাবাকে কারাগারে পাঠানো হয়। চার বছর সাজাকালীন বাবা ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবাকে ছাড়া অনেক কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। আজ বেঁচে থাকলে ন্যায্য দাবিতে আংকেলদের সঙ্গে বাবাও অংশ নিতেন। এই দাবিগুলো পূর্ণ হলে আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।’

কথাগুলো বলছিলেন সাবেক বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান বিজিবি) সৈনিক কাঞ্চন ভট্টাচার্যের মেয়ে শমা ভট্টাচার্য। ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর যারা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, কাঞ্চন ছিলেন তাদের একজন। ওই ঘটনায় চাকরিচ্যুত অন্যদের পক্ষ থেকে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজার সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) স্মারকলিপি দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজার। পরে সেখান থেকেই স্মারকলিপি দেন হাবিলদার মো. একরামুল হুদা।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকার একটি দেশকে সন্তুষ্ট করতে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও বিডিআরকে (বর্তমানে বিজিবি) ধ্বংস করে নিজেদের ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করতে সুপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সোমবার স্মারকলিপি দেন সাবেক বিডিআর সদস্যরা। ছবি: সারাবাংলা

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর ফ্যাসিস্ট সরকার প্রহসনের বিচারের নামে আলামত ধ্বংস ও নিরীহ ৫৪ বিডিআর সদস্যকে নিরাপত্তা হেফাজতে হত্যা করেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে তথাকথিত ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ নামে সংজ্ঞায়িত করে ১৮ হাজার ৫২০ জন বিডিআর সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বিজ্ঞাপন

স্মারক লিপিতে বিডিআর কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে ৯টি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো—

  • পিলখানার পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে কথিত বিদ্রোহ না বলে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে হবে;
  • ওই ঘটনায় গঠিত সব প্রহসনের বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল করতে হবে;
  • চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে;
  • পিলখানা হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ও কুশীলবদের চিহ্নিত করতে স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে;
  • পিলখানায় নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহিদের মর্যাদা দিতে হবে;
  • ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানা হত্যকাণ্ডের দিনকে ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে;
  • যেসব নিরীহ বিডিআর সদস্যদের নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে তাদের তালিকা করে পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে;
  • হত্যাকাণ্ডে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; এবং
  • বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগকারীদের জামিন ও মামলা থেকে অব্যাহতিসহ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে।

এ সময় বিডিআর কল্যাণ পরিষদ কক্সবাজারের উপদেষ্টা হাবিলদার শামসুল হক, মো. শফিউল আলম ও মো. কামাল হোসেন, সভাপতি হাবিলদার মো. একরামুল হুদা, সাধারণ সম্পাদক ল্যান্স নায়েক নুরুল আবছারসহ চাকরিচ্যুত বিডিআর ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/টিআর

কক্সবাজার পিলখানা হত্যাকাণ্ড বিডিআর বিবিজি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর