Wednesday 20 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গু ভয়ংকর, চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ ৩ এলাকা

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৭

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হিসাব। তথ্য: সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম। গ্রাফিক্স: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রামে ব্যাপকভাবে চোখ রাঙাচ্ছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু। চলতি মাসের গত ২২ দিনে যে পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে, তা গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি। শুধু তাই নয়, সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিমাণ গত ৯ মাসে মোট শনাক্তের প্রায় অর্ধেক। আবার আগের আট মাসে ডেঙ্গুতে পাঁচজনের মৃত্যু হলেও এ মাসের ২২ দিনেই মৃত্যু হযেছে আটজনের।

আক্রান্তের হিসাব বিবেচনায় নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে তিনটি এলাকাকে ডেঙ্গুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিটি করপোরেশন— কোতোয়ালি, বাকলিয়া ও বায়েজিদ বোস্তামি। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব এলাকায় মশা নিধনে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মশক ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহী সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগরীর প্রায় সব এলাকা থেকে আক্রান্তের খবর আসছে। তবে সবচেয়ে বেশি আসছে কোতোয়ালি, বাকলিয়া ও বায়েজিদ বোস্তামি এলাকা থেকে। আমরা সেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছি। আক্রান্তদের ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদেরর বাড়ি ও আশপাশের পাঁচ শ গজের মধ্যে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে মোট ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৯১ জন। এ সময়ে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছে ১১৮৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। সে হিসাবে এ বছরে মোট শনাক্ত হওয়া ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৭০ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে এ মাসের প্রথম ২২ দিনে!

বিজ্ঞাপন

২০২১ সাল থেকে এ বছর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যান। তথ্যসূত্র: সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম। গ্রাফিক্স: সারাবাংলা

জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আর কোনো মাসেও সেপ্টেম্বরের ২২ দিনের মতো এত ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের রেকর্ড নেই। জানুয়ারিতে ৬৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৫ জন, মার্চে ২৮ জন, এপ্রিলে ১৮ জন, মে মাসে ১৭ জন, জুনে ৪১ জন, জুলাইয়ে ১৯৮ জন ও আগস্টে ২০২ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছিল।

অন্যদিকে জানুয়ারিতে দুজন এবং মার্চ, জুলাই ও আগস্টে একজন করে আট মাসে মোট পাঁচজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। বিপরীতে সেপ্টেম্বর মাসের ২২ দিনেই মৃত্যু হয়েছে আটজনের।

আক্রান্ত মোট এক হাজার ১৮৯ জনের মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৬৯৬ জন, বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা ৪৯৩ জন। আর সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত ৫৯১ জনের মধ্যে নগরীর ৩৮০ জন, বিভিন্ন উপজেলার ২১১ জন।

এর আগে ২০২১ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ২৭১ জন, মারা যায় পাঁচজন। পরের বছর ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হতে শুরু করে। ওই বছর চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগরী মিলিয়ে পাঁচ হাজার ৪৪৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। ‍মৃত্যু হয় ৪১ জনের।

এরপর ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১০৭ জনের। আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮২ জন। সে হিসাবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই ছিল আড়াই গুণেরও বেশি।

চট্টগ্রামে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে তিনটি। সারাবাংলা ফাইল ছবি

২০২৩ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মাঠপর্যায়ে জরিপ করে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ৪৯১টি হটস্পট চিহ্নিত করেছিল। এরপর চিহ্নিত হটস্পট ও যে বাসায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গিয়েছিল, তার আশপাশে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখন ওষুধ ছিটানো হয়। এবারও মশার নির্দিষ্ট প্রজননক্ষেত্র ধরেই নিধন কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন চসিক কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে চসিকের মশক ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মশার নির্দিষ্ট কিছু প্রজননক্ষেত্র আছে। যেমন— চাক্তাই খালের ব্লক, ডাইভারশন খাল, মহেশখাল ও এসব খালের সঙ্গে লাগোয়া নালাগুলো। একটি লার্ভার ডিম আড়াই থেকে তিন বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। সে হিসাবে আমরা স্পটগুলোকে চিহ্নিত করেছি। আমরা সেসব স্পটে নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করছি। ৮২ জনের একটি বিশেষ টিম আমরা গঠন করেছি, যারা এ ক্ষেত্রে কাজ করছে।’

‘এ ছাড়া আমাদের রুটিন ওয়ার্ক চলছে। স্প্রে-ম্যানের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেক ওয়ার্ডে সকালে লার্ভিসাইড ছিটানো হচ্ছে, বিকেলে ফগিং চলছে। এর বাইরে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে। স্কুল-কলেজে বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, লিফলেট বিলি, সচেতনতামূলক সভাও চলছে,’— বলেন চসিকের এই কর্মকর্তা।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

এডিস মশা চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চসিক ডেঙ্গু ডেঙ্গু আক্রান্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু ডেঙ্গুর প্রকোপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর