পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবিতে ‘সম্মত’ নয় মালিকরা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:১১
ঢাকা: পোশাক খাতে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন ও বছরে ১০ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে দেশের পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় পোশাক উৎপাদনে বাড়তি খরচ ও কয়েক মাস ধরে কারখানায় অস্থিরতার ফলে ক্রয়াদেশ কমে যাওয়াকে শ্রমিকদের এমন দাবির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণের কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন সংগঠনটির নেতারা।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে এক জরুরি সাধারণ সভায় সংগঠনটির নেতারা এ কথা জানান। এর আগে পোশাক শিল্প খাত বিদ্যমান অস্থিরতা ও সমস্যা নিরসনে সরকারের কাছে ১৮টি দাবি উত্থাপন করে শ্রমিক পক্ষ। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই পোশাক কারখানার মালিকরা জরুরি মতবিনিময় সভা ডাকেন।
ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সম্ভাবনা তৈরি হয়েও স্থিতিশীলতা ফিরছে না। গতকাল রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরের বাঘেরগাঁওয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
সোমবারও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে টঙ্গীতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আশুলিয়ায় বন্ধ ছিল অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা। এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণে বিকেলে উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে জরুরি সভায় বসেন পোশাক কারখানার মালিকরা।
বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হওয়া বৈঠকে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি, সদস্য কারখানার মালিক, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, শিল্প পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইসহ বিভিন্ন অংশীজনরা অংশ নেন।
সভায় একাধিক মালিক পোশাক খাতে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন ও বছরে ১০ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। রাত ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জরুরি সভা চলছিল।
বিজিএমইএ নেতারা শ্রমিকদের ১৮ দফার দাবির মধ্যে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন ও বাৎসরিক ১০ শতাংশ মজুরি বাড়ানোর দাবি প্রত্যাখান করার কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। বলেন, শিল্পের অক্ষমতা ও উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে পোশাক কারখানায় অস্থিরতার কারণে ক্রয়াদেশও কম এসেছে। দেশে অস্থিতিশীলতার কারণে কিছু কিছু অর্ডার অন্য দেশেও স্থানান্তর হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের এই দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়।
এর আগে সোমবার দুপুরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সভায় ১৮ দাবি উত্থাপন করে শ্রমিক পক্ষ। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো—
- মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ;
- যে সব কারখানায় ২০২৩ সালে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি, সেসব কারখানায় ওই মজুরি দ্রুত বাস্তবায়ন;
- কোনো শ্রমিকের চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে বা চাকরিচ্যুত হলে একটি বেসিকের সমান অর্থ প্রদান;
- এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্য ধারাগুলোসহ শ্রম আইন সংশোধন;
- সব ধরনের বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ;
- হাজিরা বোনাস (২২৫ টাকা), টিফিন বিল (৫০ টাকা) ও নাইট বিল (১০০ টাকা) সব কারখানায় সমান হারে বাড়ানো; এবং
- সব কারখানায় প্রভিডেন্ড ফান্ড ব্যবস্থা চালু ও বেতনের বিপরীতে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ নির্ধারণ।
সর্বশেষ ২০২৩ সালে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়। শ্রম আইন অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ বছর পর পর মজুরি কাঠামো পর্যালোচনা করতে হয়। এর আগে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মজুরি কাঠামো পুনর্মূল্যায়ন করে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল।
হিসাব অনুযায়ী, নতুন করে কার্যকর হওয়া মজুরি কাঠামো পুনর্গঠন হবে আগামী ২০২৮ সালে। সর্বশেষ মজুরি কাঠামোতে শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে সর্বোচ্চ ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
পোশাক কারখানা পোশাক খাত বিজিএমইএ মজুরি বৃদ্ধি মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন