Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখনও জমেনি পূজার বাজার, ছাড় দিয়েও মিলছে না ক্রেতা

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:১৯

ঢাকা: ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৮ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে শুরু হবে মূল পূজা। সেই হিসাবে বলা চলে দরজায় কড়া নাড়ছে দুর্গাপূজা। আর এই উৎসবকে ঘিরে একেক দিন একেক পোশাকে দেবী দুর্গাকে বরণের আয়োজন আগে থেকেই শেষ করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। সেজন্য উৎসবের আগেই দল বেঁধে কেনাকাটায় ঝাপিয়ে পড়েন তারা। তবে এবার সেই আমেজ নেই।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের সরকার পরিবর্তনের প্রভাব চরমভাবে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এবার দুর্গাপূজায় ক্রেতা নেই বললে চলে। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোর উদ্যোক্তারা বলছেন, এবার পূজায় বড়ধরনের লোকসান গুনতে হবে।

রাজধানীর জনপ্রিয় ও ব্যস্ততম শপিংমলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কেউ ছাড় দিচ্ছে ৩০ শতাংশ, কেউ অর্ধেক দামে। আবার ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়েও ক্রেতার মন জয় করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। শুধু শপিং মল নয়, অনলাইন শপেও লোভনীয় অফার দিয়েও ক্রেতা পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এবার দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এমন ভাটা পড়েছে বেচা-কেনায়।

রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাকের পর্যাপ্ত কালেকশন ও আয়োজন থাকলেও সে অনুযায়ী ক্রেতা নেই। ক্রেতা টানতে পোশাকের দোকানগুলো ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। দেশীয় ব্র্যান্ড ‘রাইজ’ গত ১৫ দিন ধরে তাদের সব পণ্যে ফ্ল্যাট ছাড় দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির বেইলি রোড শো-রুমের ম্যানেজার মাহবুব হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৫ দিন ধরে পোশাকে ছাড় চলছে। কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে। এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন। হয়তো সে কারণে ক্রেতা কম। কোনো কোনো দিন দেখা যাচ্ছে, হিন্দু ক্রেতাদের চেয়ে মুসলিম ক্রেতার সংখ্যা বেশি।’

ওয়েস্টার্ন পোশাক বিক্রি করা প্রতিষ্ঠান ‘আর্টিসান’ ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। তাদের পরিস্থিতিও একইরকম। ‘ভোগ বাই প্রিন্স’ সবসময় গর্জিয়াস পোশাক তৈরি করে থাকে। উৎসবের জন্য ক্রেতারা এই ব্রান্ডকেই পছন্দ করে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটি তাদের পোশাকে ২০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে।

শো-রুমের ম্যানেজার আসিফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েকমাস ধরেই ছাড় দিচ্ছি আমরা। কোরবানি ঈদের আগে টানা এক মাস ছাড় ছিল। ঈদের পর আবার ১২ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। তখনও বেচাকেনা ভালো ছিল। এরপর গত ২০ দিন ধরে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারপরও ক্রেতা সংকট। অন্য বছরগুলোতে এমন ছাড় এতদিন রাখার দরকার হয় না। আগেই শোরুম খালি হয়ে যায়।’

বিজ্ঞাপন

সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘অঞ্জনস’। ১৫ দিন ধরে ছাড় দিয়েও আশানুরুপ ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বেইলি রোড শোরুমের কর্মীরা। এছাড়াও ছাড় চলছে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ‘বাংলার মেলা’, ‘দেশাল’, ‘রঙ বাংলাদেশ’সহ প্রায় প্রতিটি বুটিকসে। ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক বিক্রেতা ‘গ্লামার’ দিচ্ছে ৫০ শতাংশ ছাড়। শোরুমের কর্মী সালমা ইয়াসমিন সারাবাংলাকে জানান, ভারতীয় পণ্যে তারা ছাড় দিয়েছেন। কারণ, তারা এখন থেকে পাকিস্তানি পণ্য বিক্রি করবেন না বলে স্টক খালি করছেন।

ছাড় শুধু রেডিমেট পোশাকেই নয়, টেইলারিংয়েও ছাড় দিতে দেখা গেছে এবার। রাজধানীর মৌচাক মার্কেট দক্ষ টেইলারের জন্য সেরা। মার্কেটের চার তলা জুড়ে শুধু টেইলার। মা টেইলারের মালিক কাদির হোসেন সারাবাংলা বলেন, ‘প্রতিবছর অর্ডার রেখে তা সময় মতো ডেলিভারি দিতে পারি না। বাড়তি লোক রেখে ডেলিভারি দিতে হয়। এবার একাই পোশাক বানিয়ে দিচ্ছি। ১০ শতাংশ ছাড়ও দিয়েছি। কিন্তু কাস্টমার নেই।’

মৌচাক মার্কেটের খাজানা শাড়ির দোকানের মালিক মনির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য বছরগুলোতে পূজা উপলক্ষ্যে এই সময় কারও সঙ্গে কথা বলার সময় থাকে না। কিন্তু এবার একদম ফাঁকা। কিছু বাঁধা কাস্টমার আছেন, উনারা সপ্তাহ খানেক আগে কিছু শাড়ি-লেহেঙ্গা কিনে নিয়ে গেছেন। এখন আর ক্রেতার দেখা নেই।’

শুধু মৌচাক, বেইলি রোডই নয় এমন চিত্র দেখা গেছে সবচেয়ে বড় নিউ মার্কেটে, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কের মতো বিশাল মার্কেটগুলোতে। বিক্রেতারা বলছেন, পুজার বাকি ১৫ দিন থাকলেও এখনো জমে ওঠেনি পূজার বাজার। গাউসিয়া মার্কেটসংলগ্ন চাঁদনী চক মেয়েদের পোশাকের জন্য জনপ্রিয় ও বড় মার্কেট। বিশেষ করে আনস্ট্রিচ কাপড়ের জন্য খ্যাতি রয়েছে।

চাঁদনী চকে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানিরা ঝিমাচ্ছে। যেখানে অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে দম ফেলার সময় থাকে না। ভিড় ছিল না গহনার দোকানেও। বসুন্ধরা সিটিতেও ক্রেতা সমাগম কম। ‘দেশী দশ’-এ ক্রেতার চেয়ে যেন দর্শনার্থীর সংখ্যাই দেখা গেছে বেশি। ভিড় নেই অন্য দোকানেও। শাড়ি, গহনা, জুতা সবই ফাঁকা।

পোশাকের পাশাপাশি ছাড় দিতে দেখা গেছে ব্রান্ডের জুতার দোকানেও। প্রথম সারির ব্র্যান্ড ‘এপেক্স’ দিয়েছিল ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। ‘বাটা’ এখনও ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে রেখেছে। আর ‘বে’র ছাড় চলছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ওয়ারি বে’র শো-রুম ম্যানেজার ধ্রুব সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান, বেচাকেনা কম দেখে প্রতিষ্ঠান থেকে ছাড় দিয়ে রেখেছে। তবে এখানে বাছাই করা কিছু পণ্যে ২০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা গত দুই মাস ধরে জুতায় ছাড় দিয়ে রেখেছি। স্টক খালি হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

শপিং মলের পাশাপাশি অনলাইনেও পোশাকে ছাড় চলছে। অনেকেই দিচ্ছেন স্টক ক্লিয়ারেন্স ছাড়। আবার কেউ দিচ্ছেন লাইভে ছাড়। লাইভ দেখে কেউ অর্ডার করলে ইনস্ট্যান্ট ২০ শতাংশ ছাড় পাবেন। আবার কেউ দিচ্ছেন ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। অ্যাঞ্জেলস বিডি নামের একটি পেইজের উদ্যোক্তা রোমানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘পূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ পোশাক তুলেছি। এবার মনে হয় লোকসান গুনতে হবে। অনেকেই দাম জানতে চেয়ে আর খবর নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পোশাকের দাম তো কিছুটা বেড়েছেই।’

কলকাতার ভাবি পেইজের উদ্যোক্তা সামিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার তো ব্যবসা নেই। আমরা ভারতীয় পোশাক নিয়ে কাজ করি। এবার তো ভিসা বন্ধ। একটা প্রোডাক্টও তুলতে পারিনি। দেশীয় পণ্য তুলেছি। কিন্তু ক্রেতারা চান কলকাতার পোশাক। কি যে মুশকিল! যে ইনভেস্ট করেছি তাতেও লোকসান গুনতে হবে।’

ফুটপাতের দোকানি থেকে নামিদামি শপিংমল- পূজার এই সময়টার জন্য মুখিয়ে থাকেন সবাই। অনেক নিম্নবিত্ত পরিবারের সংসার চলে তৈরি পোশাক, পূজার মণ্ডব সজ্জায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম বানিয়ে। একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অন্যদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন- এই দুইয়ের কারণে কেনাকাটায় প্রভাব পড়েছে এবারের পূজার বাজারে।

এদিকে, এবার পাড়া-মহল্লার কমিটিগুলো সীমিত আকারে পূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এত কিছুর মধ্যেও আগামী দুই সপ্তাহে রাজধানীর পূজার বাজার হয়তো জমে উঠবে।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

অনলাইন কেনাকাটা জমেনি পূজার বাজার শপিংমল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর