Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধে হাইকোর্টে রিট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:১৬

ঢাকা: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রফতানির অনুমতির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

রিটে বাণিজ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আমদানি-রফতানি কার্যালয়ের প্রধান নিয়ন্ত্রক বিবাদী করা হয়েছে।

রিটে বলা হয়েছে, ইলিশ মাছ একটি সামুদ্রিক মাছ। এটি মূলত বঙ্গোপসাগরের মাছ। এই বঙ্গোপসাগরের সাথে বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার সংযুক্ত। বাংলাদেশের চেয়ে ভারত ও মায়ানমারের সমুদ্রসীমা অনেক বেশি ও বিস্তৃত। এই ভারত ও মায়ানমারের সমুদ্রসীমায় প্রচুর ইলিশ মাছ উৎপাদন হয়। এ ছাড়া ভারতের বিভিন্ন নদীতে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। মূলত বাংলাদেশ থেকে ভারতের ইলিশ মাছ আমদানির কোন প্রয়োজন নেই। ভারত মূলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। এই ইলিশ মাছ সাগরের মাছ হলেও ডিম পাড়ার জন্য যখন এই মাছ পদ্মা নদীতে আসে তখন এই ইলিশ মাছ পদ্মা নদীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে পরিপুষ্ট হয় এবং অত্যন্ত সুস্বাদু হয়ে উঠে। মূলত পদ্মা নদীর ইলিশ মাছই স্বাদে ও গন্ধে উৎকৃষ্ট। এই পদ্মা নদীর ইলিশ মাছ যখন রান্না করা হয় তখন এর সুঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

উক্ত রিটে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে যত ইলিশ ধরা পরে তার মাত্র ১০ (দশ শতাংশ) ইলিশ মাছ পদ্মা নদীতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ পদ্মা নদীতে অত্যন্ত সীমিত পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। পদ্মার নদীতে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায় তা বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পুরণে একেবারে অপ্রতুল ।

বিজ্ঞাপন

উক্ত রিট পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, ভারত মুলত বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ইলিশ আমদানি করে থাকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতের “ফিস ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশনের” নেতাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে যেখানে তারা স্বীকার করেছেন যে, তারা বাংলাদেশ থেকে পদ্মার ইলিশ আমদানির করে থাকেন। প্রকৃতিপক্ষে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর সকল মাছ ভারতে রফতানি হয় এবং বিপুল পরিমাণ লিশ মাছ ভারতে চোরাচালান হয়। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ট ও রফতানিকারকরা সারাবছর পদ্মা নদীর মাছ সংগ্রহ করে ফ্রিজিং করে রাখেন এবং পরবর্তীতে সুযোগ অনুযায়ী ভারতে রফতানি ও পাচার করে থাকেন। এর ফলে বাংলাদেশের জনগণ বাজারে গিয়ে পদ্মার ইলিশ পায় না এবং সামান্য পরিমাণ পেলেও তার দাম অত্যন্ত বেশি থাকে যা সাধারণ জনগণের পক্ষে কিনে খাওয়া সম্ভব নয়।

রিটে আরও বলা হয়েছে, ভারতে রফতানি ও চোরাচালানের জন্য ব্যাবসায়ীরা সারা বছর বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ফ্রিজিং করে রাখেন। ফলে বাজারে ইলিশের দাম সব সময় বেশি থাকে এবং সাধারণ জনগণ এই ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারে না। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ইলিশ রফতানির ঘোষণার ফলে, বাংলাদেশে ইলিশ মাছের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যার ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে ইলিশ মাছ কিনে খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশের রফতানি নীতি ২০২১-২৪ অনুযায়ী, ইলিশ মাছ মুক্তভাবে রফতানিযোগ্য কোন পণ্য নয়। এই মাছ রফতানি করতে চাইলে যথাযথ শর্ত পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। এই ইলিশ মাছ হলো মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বিষয়। এক্ষেত্রে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এককভাবে এই ইলিশ মাছ রফতানির অনুমোদন দিতে পারে না। এটা এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ২১(২) অনুচ্ছেদ লংঘন করেছেন।

বিজ্ঞাপন

আইনজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, রিটে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ রতানি অনুমতি বাতিলসহ বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা ও নদীর ইলিশ মাছ রফতানির বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে। খু্ব শিগগিরই রিটের ওপর হাইকোর্টে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, গত ২২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ

ইলিশ ভারত রফতানি হাইকোর্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর