গান গেয়ে খুন ‘ছিনতাইকারী সন্দেহে’— বলছে পুলিশ
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে গান গেয়ে গেয়ে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী সন্দেহে তাকে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছিল।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর দামপাড়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি, মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ।
এর আগে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। তারা হলেন— ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল (৪২), আনিসুর রহমান ইফাত (১৯) ও ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর।
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার কাজী মো. তারেক আজিজ জানান, ‘চট্টগ্রাম ছাত্র-জনতা ট্রাফিক গ্রুপ’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তাদের তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ওই গ্রুপে ১৩০ জনের মতো সদস্য আছেন। গ্রুপের নেতৃত্ব দেন ফরহাদ আহমেদ চৌধুরী জুয়েল। মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকা থেকে জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়। তার নেতৃত্বেই শাহাদাত নামে ওই যুবককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল। জুয়েল ইট-বালির ব্যবসা করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
তারেক আজিজ আরও জানান, জুয়েলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে শিল্পকলা একাডেমির সামনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শাহাদাতকে নির্যাতনের ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওই কিশোরই তার গাল চেপে ধরে বলেছিলেন, ‘এ ভাইয়া একটা একটা সেলফি তুলে চলে যান।’ জুয়েল ও ওই কিশোরের তথ্য অনুযায়ী, রাত ৯টার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেটের মসজিদ গলি থেকে ইফাতকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তিনি চান্দগাঁও এলাকার একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।
এডিসি তারেক আজিজ বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা শাহাদাতকে নির্যাতন করে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত শাহাদাতকে কয়েক দফায় মারধর করা হয়। মোবাইল চোর ও ছিনতাইকারী সন্দেহে তাকে ধরে মারধর করা হয়েছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। একেক সময় একেক গ্রুপ গিয়ে কয়েক দফায় শাহাদাতকে মারধর করেছে। পরে তার নিথর দেহ পাঁচলাইশের বদনাশাহ মাজার এলাকায় ফেলে চলে যায় তারা। এ ঘটনায় ২০ জনের বেশি জড়িত আছে বলে আমরা তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। বাকিদেরও ধরতে পুলিশ অভিযানে আছে।’
এদিকে নির্যাতনে খুন হওয়া শাহাদাতের নামে অস্ত্র ও ডাকাতির ছয়টি মামলা আছে জানিয়ে কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘শাহাদাতের নামে নগরীর কোতোয়ালি থানায় চারটি অস্ত্র মামলা, একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা ও একটি চুরির মামলা আছে। সে উল্লেখযোগ্য তেমন কাজ করত না। মাঝেমধ্যে দিনমজুরের কাজ করত সে। এটা আসলে মব ইনজাস্টিস। শুধুমাত্র সন্দেহের জেরে তাকে মারধর করে খুন করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমানও উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট রাতে নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার আখতারুজ্জামান উড়ালসড়কের নিচে শাহাদাতকে দুটি স্টিলের পাইপের সঙ্গে বেঁধে গান গেয়ে গেয়ে উৎসবের আমেজ তৈরি করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরদিন পুলিশ তার লাশ প্রবর্তক এলাকা থেকে উদ্ধার করে। তার মাথা ও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরে পরিবারের সদস্যরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ওই লাশ শাহাদাতের বলে শনাক্ত করে।
এক মাস ছয় দিন পর বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) শাহাদাতকে পিটিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি সারা দেশে অনলাইন-অফলাইনে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান ‘মধু হই হই আঁরে বিষ খাওয়াইলা’ গান গেয়ে শাহদাতকে মারধর করছেন কয়েকজন তরুণ। এ সময় কেউ কেউ মুখ দিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন, কেউ উল্লাস করছিলেন।
নিহত শাহাদাতের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামে। তিনি নগরীর কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে স্ত্রী শারমিন আক্তারের সঙ্গে থাকতেন।
সারাবাংলা/আইসি/টিআর