রাঙ্গামাটিতে ‘বেওয়ারিশ’ কুকুরের কামড়ে ২ দিনেই আহত ৫৪
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৬
রাঙ্গামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি শহরে হঠাৎ করেই মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত বেড়ে গেছে ব্যাপকভাবে। গত দুই দিনে এসব কুকুরের কামড়ে অর্ধশতাধিক মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। কয়েকজনকে হাসপাাতালে ভর্তি থেকেও চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হঠাৎ করে এসব কুকুরের উৎপাত এভাবে বেড়ে যাওয়ায় শহরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের তথ্য বলছে, গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) থেকে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত হাসপাতালের জলাতঙ্ক বিভাগ থেকে ৫৪ জন রোগী ভ্যাকসিন নিয়েছেন। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে চম্পকনগর, ট্রাইবেল আদাম, কে কে রায় সড়ক, দেবাশীষ নগর, কল্যাণপুর, কলেজ গেট, ভেদভেদী, রাঙাপানি, ২ নম্বর পাথরঘাটা, রিজার্ভবাজার, আসামবস্তি ও তবলছড়িসহ অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারাও রয়েছেন।
আরও পড়ুন- প্রতিরোধে বেঁচে গেল বেওয়ারিশ কুকুর, শিকারে অভিযুক্ত কুকিরা
রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন ডা. নূয়েন খীসা বলেন, ‘দুই দিনে কুকুরের কামড়ে আহত ৫৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন হাসপাতালে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তিও আছেন। আমরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি, শহরের কে কে রায় সড়ক থেকে শুরু করে ভেদভেদ হয়ে আসামবস্তি পর্যন্ত এই পুরো এলাকাতে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন পথচারীরা। হঠাৎ করে কী কারণে বেওয়ারিশ কুকুরের কামড়ে এত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, এটি ভাবনার বিষয়। দুয়েকটি কুকুর এমন করলে তো এত মানুষ আক্রান্ত হওয়ার কথা না।’
পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কুকুর দেখভাল করে থাকে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া বেওয়ারিশ কুকুরের জন্ম নিয়ন্ত্রণে বন্ধ্যাকরণ কর্মসূচি চালানো হয়। এ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনকে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ সহযোগিতা করে থাকে।
তবে গত দুই দিনের কুকুরের কামড়ের বিষয়ে কিছুই জানা নেই স্থানীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগের। রাঙ্গামাটি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ‘রাঙ্গামাটি শহরের কুকুরের কামড়ে আহত হওয়ার তথ্য আমরা পাইনি।’
রাঙ্গামাটি শহর এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুর বন্ধ্যাকরণ করা হয় কি না— জানতে চাইলে ডা. ফজলুল হক বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ বিভাগ আহত কুকুরের চিকিৎসা দেয়। কুকুরকে বন্ধ্যাও করে থাকে। তবে বেওয়ারিশ কুকুর দেখাশোনার দায়িত্ব পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন। রাঙ্গামাটিতে কুকুর বন্ধ্যাকরণের কোনো প্রকল্প নেই। কেউ যদি পালিত কুকুর বন্ধ্যা করতে চান, আমরা সেটি করে দিতে পারি।’
এদিকে রাঙ্গামাটি পৌর এলাকায় কী পরিমাণ বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে— এ বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান তৈরির দায়িত্ব কার— এ নিয়েও পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছে পৌরসভা ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।
আরও পড়ুন- রাঙ্গামাটি থেকে কুকুর ধরে নিয়ে যাচ্ছে মিজোরামের শিকারিরা
এদিকে হঠাৎ করে কুকুরের আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠায় কুকুরদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রাণি অধিকার কর্মীরা। তারা বলছেন, কুকুরের কামড়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অনেক জায়গায় কুকুরকে মারধর করা হতে পারে। সেটি না করে বরং কুকুর ধরে পৌরসভার কাছে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯-এর প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। এই আইনে মালিকবিহীন প্রাণিনিধন বা অপসারণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে— (ক) এই আইনে উল্লেখিত কোনো কারণ ছাড়া মালিকবিহীন কোনো প্রাণী নিধন বা অপসারণ করা যাবে না; (খ) কোনো ব্যক্তি মালিকবিহীন প্রাণী হত্যা করলে তা আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে।
সারাবাংলা/টিআর