‘দাম তো ফেসবুকে দেখি একরকম, বাজারে আরেকরকম’
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর বাদুরতলার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন গিয়েছিলেন রিয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচাবাজারে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুদিন তিনি এ পাইকারি কাঁচাবাজার থেকে সবজি, মাছ-মাংস কেনেন। মুরগির ডিম কিনেছেন ডজন ১৬০ টাকায়। কিনেছেন আরও বিভিন্ন তরিতরকারি।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রিয়াজউদ্দিন বাজারে কথা হয় মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দাম তো ফেসবুকে একরকম দেখি, আর বাজারে এসে দেখি আরেকরকম। ফেসবুকে কয়েকটা গ্রুপে ডিমের দাম দেখলাম, ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা ডজন। আমি কিনলাম ১৬০ টাকায়।’
সচেতন নাগরিক মোশাররফ মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এখনো কমেনি অভিযোগ করে মোশাররফ বললেন, ‘এখানে আসলে মাঝখান থেকে লাভ খেয়ে নিচ্ছে কিছু দালাল। যারা প্রোডাকশন করে তাদের কাছ থেকে মাল সরাসরি কিনে আড়তে আনতে হবে। এখানে সেকেন্ড পার্টি, থার্ড পার্টি হয়ে মাল আড়তে আসে। তারা লাভ খেয়ে নিচ্ছে, যে প্রোডাকশন করছে সে কিছুই পাচ্ছে না। আড়তে আবার মাল দিতে হবে সীমিত। তারা বেশি নিয়ে মজুত করে রাখে, আর বাজারে দাম বেড়ে যায়।’
সরকার মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের দাম উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা। কিন্তু এ দামে চট্টগ্রামের বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজারে গিয়ে ডিম নিয়ে কারসাজির তথ্য পান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি দল। ডিমের আড়তদার মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়।
ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শুক্কুর বলছেন, সরকার ডিমের দর নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামে তারা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনতে পারছেন না। পাইকারিতে প্রতি পিস ডিম তাদের কিনতে হচ্ছে ১২ টাকা ২০ পয়সা। এ কারণে খুচরায়ও বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রিয়াজউদ্দিন বাজারে হাঁসের ডিম ডজনপ্রতি ২০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৯০ টাকা, সোনালী মুরগি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা, গরুর মাংস হাড়ছাড়া ৯৫০ টাকা ও হাড়সহ ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের চেয়ে গরু ও খাসির মাংসের দাম ৫০ টাকা বেড়েছে।
একই বাজারে টমেটো কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, বেগুন ১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০ টাকা, ফুলকপি ১৮০ টাকা, লাউ ৪৫ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা, দেশি গাজর ৯০ টাকা, চায়না গাজর ১৫০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও কচুরমুখী ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এসব সবজির দাম গত সপ্তাহের মতোই থাকলেও কিছুটা কমেছে আলুর দাম। দেশি গোল আলু ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও মুন্সীগঞ্জের আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সবজি বিক্রেতা মোজাম্মেল মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘কিছু সবজির দাম বাড়লেও একেবারে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেকগুলোর দাম হয়তো কমেছে অথবা আগের মতো আছে। বাজারের অবস্থা মোটামুটি ভালোর দিকে। টমেটো-বরবটির দাম কমেছে। কিন্তু রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকে বের হয়ে দেখেন, সব ধরনের সবজির দাম এখান থেকে ২০-৩০ টাকা বেশি।’
মোজাম্মেলের কথার সঙ্গে দ্বিমত জানালেন নগরীর আগ্রাবাদ থেকে যাওয়া ক্রেতা মোহাম্মদ হোসেন লিকু। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি যেহেতু এখানে সবসময় কাজে আসি, আমি রিয়াজউদ্দিন বাজার থেকেই মাছ-সবজি কিনি। এখানে দাম কিছুটা কম পাওয়া যেত। কিন্তু এখন দেখছি দাম কম নেই, বরং অন্যান্য বাজারের চেয়ে এখানে আরও বাড়তি। এখানে মাসখানেক আগেও যে সবজি ৩০-৪০ টাকায় পাওয়া যেত, সেগুলো এখন কোনোটা ৫০, কোনোটা ৭০ টাকা হয়ে গেছে।’
মাছের বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম তেমন কমেনি বলে জানালেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। চলতি সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইলিশ মাছ রিয়াজউদ্দিন বাজারে ওজন অনুযায়ী ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর অভিজাতদের বাজার হিসেবে পরিচিত কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ফটিকছড়ির বাসিন্দা নজরুল ইসলাম সপ্তাহের শেষ দিনে কাজির দেউড়ি বাজার গিয়েছিলেন ইলিশ মাছ কিনে বাড়ি ফেরার জন্য। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইলিশ বলেছে দুই হাজার টাকা। এর চেয়ে ছোটটা বলছে ১৮০০ টাকা। পরে দাম কিছুটা কমিয়ে বলছে ১৭৬০ টাকা। কিনব না। এত টাকা দিয়ে ইলিশ খাওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখছি না।’
রিয়াজউদ্দিন বাজারে রুই, কাতলা মাছ ৩২০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ টাকা, লইট্যা ১৭০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, বেলে ৪০০ থেকে ৫৮০ টাকা, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, রূপচাঁদা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে বাজারে পেঁয়াজ ১১০ টাকা, ছোট দানার মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, বড় দানার মসুর ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা মাশকলাইয়ের ডাল ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, পাঁচ লিটারের সয়াবিন তেলের মধ্যে পুষ্টি ৮০০ টাকা, এস আলম ৭৯০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া এলাচি ৪২০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১৬০০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ডালের দাম কিছুটা কমেছে। চালসহ বাকি সব পণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর