দেশের প্রথম নারী পাইলট প্রশিক্ষক লারার মৃত্যুবার্ষিকী আজ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৪
ঢাকা: আজ ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮ সালের এই দিনে প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়নের সময় নিহত হন দেশের প্রথম নারী পাইলট প্রশিক্ষক ফারিয়া লারা। এয়ার পারাবতের একটি বিমানে আগুন লেগে তার বিমান বিধ্বস্ত হয়। ঢাকার পোস্তগোলায় বিমানটি বিধ্বস্ত হলে তিনি নিহত হন। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান লারার সহকর্মী রফিকুল ইসলাম সুমনও।
১৯৯২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হওয়ার পরই ছোটবেলার স্বপ্ন বৈমানিক হওয়ার জন্য পাইলট প্রশিক্ষণে ভর্তি হন ফারিয়া লারা। দুই বছর পর ১৯৯৪ সালে লারা ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর লারা সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রাইভেট পাইলটের লাইসেন্স অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালের ১৯ মার্চ তিনি বাণিজ্যিক পাইলটের লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর পাইলটদের প্রশিক্ষক হওয়ার প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু করেন। পাইলট হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি উড্ডয়নের প্রশিক্ষণ গ্রহণ শুরু হয় ৫০ ঘণ্টার। এই প্রশিক্ষণের শেষ দিনটি ছিল ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর।
এ দিন বরিশাল থেকে এয়ার পারাবাতের সেসনা ১৫০ প্রশিক্ষণ বিমানের তিনি প্রশিক্ষক পাইলট, সঙ্গে সহকারী পাইলট রফিকুল ইসলাম সুমন। ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দরের রানওয়ে ছোঁয়ার কথা ছিল সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে। তাঁর ৫০ ঘণ্টার নির্ধারিত ফ্লাইং টাইম শেষ করতে তখন মাত্র কয়েক মিনিট বাকি।
রাজধানী ঢাকার কাছে চলে এসেছে বিমান। নির্ধারিত কাঙ্ক্ষিত ফ্লাইং টাইম শেষে গোলে পৌঁছবেন লারা। জীবনের অন্য রকম এক সাফল্য ধরা দেবে। আনন্দ-উত্তেজনা চেপে মনোযোগী নিজের কাজে। হঠাৎ অজানা আশঙ্কায় বুক কেঁপে ওঠে তাঁর। শেষ সময়ে বিমানে যান্ত্রিক গোলযোগের আভাস। বিচক্ষণ লারা তাৎক্ষণিক সমস্যাটি সামলানোর প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। পোস্তগোলার আকাশ। দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে সময়! সমস্যা তাঁর নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
বিপদ ঘটার আশঙ্কা জানার পর কয়েক মিনিট সময় হাতে পেয়েছিলেন। বিমান দুর্ঘটনার মাত্র কিছু সময় আগে বিমান থেকে মে ডে কলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণকক্ষে জরুরি বার্তা পাঠালেন, ‘আর কয়েক মিনিট মাত্র এ পৃথিবীতে বেঁচে আছি, আমরা আর কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছি।’ এটাই ছিল তার জীবনের শেষ বার্তা। মাত্র ২৮ বছর বয়সেই জীবনের ইতি!
বৈমানিক ফারিয়া লারা মা প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, বাবা মুক্তিযোদ্ধা ও বিমান কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন। অমিত সাহসী ও মেধাবী লারা ছাত্রজীবনে ছবি আঁকা, গল্প বলা, টিভি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে যেসব পুরস্কার অর্জন করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—১৯৭৮ সালে কোরিয়ান চিলড্রেন সেন্টার পুরস্কার, ১৯৭৯ সালে ফিলিপস বাংলাদেশ পুরস্কার, ১৯৮০ সালে নিপ্পন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক, ১৯৮৪ সালে ভারতের শঙ্কর আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ে ‘নতুন কুঁড়ি’ প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতায় পুরস্কার ইত্যাদি।
সারাবাংলা/এনইউ