খুলনায় শসার বাম্পার ফলন, দাম পেয়ে খুশি কৃষক
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪০
খুলনা: খুলনার নয়টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষে কম খরচ ও বাজার মূল্য ভাল হওয়ায় লাভবান হচ্ছে চাষিরা। বাজারে ব্যাপক চাহিদার ফলে অনেক চাষি আগ্রহী হচ্ছে শসা চাষে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮১৭ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে। ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে কম সময়ে অধিক লাভবান হয়েছেন কৃষকরা। এরমধ্যে রূপসা উপজেলায় ৩৯০ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে। ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে কম সময়ে অধিক ফলন ও ভালো দাম পেয়ে এসব গ্রামের কৃষকরা দারুণ খুশি।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সবজি ক্ষেত ও মৎস্য ঘেরের পাড়ে বিপুল পরিমাণ শসার চাষ হয়েছে। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে হওয়া টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে কিছু এলাকার মাছের ঘের তলিয়ে যায়। যে কারণে অধিকাংশ ঘেরের শসা গাছের গোড়ায় পানি জমে গাছগুলো মারাগেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। যে শসা ১৫ দিন আগে ৬০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। এখন পাইকারি হিসেবে প্রতি মণ শসা ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার অধিকাংশ হাট-বাজার গুলোতে শসা বেচাকেনা হচ্ছে।
রূপসা উপজেলার ৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়নের গোয়াড়া এলাকার বানি দাস বলেন, ‘১২ বিঘা ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করেছি, ফলন ভাল হয়েছে। চাষে আমার যে টাকা খরচ হয়েছে। তার থেকে বেশি দামে শসা বিক্রয় করতে পারবো। আমাদের এলাকায় সপ্তাহে ২দিন (সোম-শুক্রবার) শসার বেচাকেনা হয়ে থাকে। পাইকাররা সেগুলো ক্রয় করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ট্রাকে পাঠিয়ে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এবছর শসার বাম্পার ফলন হয়েছিল। তবে অতিবৃষ্টির কারণে ঘেরের পাড়ের শসা গাছ মারা গেছে। যে কারণে আমরা চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছি।’
একই উপজেলার ৪নং টিএসবি ইউনিয়নের তিলক এলাকার কৃষক অনুপ মন্ডল বলেন, ‘শসা চাষে খরচ কম এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায়। চলতি বছর আমি ১৩ বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছি। শসা আবাদ করে বাড়ন্ত গাছ মাচার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে জায়গা কম লাগে ও অল্প পরিচর্যায় ভালো ফসল পাওয়া যায়। আমরা এই ইউনিয়নের চাষীরা বেশি বেশি শসা চাষ করে থাকি।’
কৃষক শক্তিপদ বসু বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় এবছর শসার ফলন ভালো হয়ে ছিল। তবে কয়েকদিন আগের অতিবৃষ্টিতে এলাকার ঘের পানিতে ডুবে যায়। এতে ঘেরের পাড়ে লাগানো শসা গাছের গোড়ায় পানি জমে অনেক চারা মারা যায়। এই এলাকায় বৃষ্টির পানির কারণে জলবদ্ধ সৃষ্টি হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের জন্য তেমন কোন ভালো ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা এই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।’
তেরখাদা উপজেলার বারাসাত ইউনিয়নের ভূজনীয়া এলাকার আসলাম শেখ বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে শসা চাষ করেছি। প্রতিদিন ছয়-সাত মণ শসা বিক্রি করছি। এবছর শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। উপরে ২ হাজার টাকা মণ দরে শসা বিক্রি করতে পারছি।’
রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের ডোবা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস বলেন, ‘আমি এই ব্লকের দায়ীত্বে থাকার সুবাদে প্রায় প্রতিদিন শসা চাষিদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে শসা চাষে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া সহ সকল প্রকার সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
রূপসা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এবছর কৃষকেরা ঘেরের পাড়ে শসা চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন, সেই সঙ্গে লাভবানও হয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এসব কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।’
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘জেলায় ৮১৭ হেক্টর জমিতে শসা চাষ হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় চাষাবাদে ঝুঁকছেন কৃষকরা। সার্বক্ষণিক উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।’
সারাবাংলা/এনইউ