সুদিন ফিরেছে বিএনপির, তারেক রহমান ফিরবেন কবে?
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২২:৫৯
ঢাকা: দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ভর করে সুদিন ফিরেছে বিএনপির। দলটি এখন অনেকটাই নির্ভার। বাধাহীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারছে তারা। কারাগারে আটক থাকা বেশিরভাগ নেতা ছাড়া পেয়েছেন। মুক্তি পেয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছেও বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে বিএনপি।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সব কিছু এমন ইতিবাচক ধারায় চললেও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন, সেটা এখনও নিশ্চিত না। আওয়ামী সরকার পতনের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাসন জীবনের ইতি টেনে দেশে ফেরার কোনো বার্তা এখন পর্যন্ত দলীয় নেতা-কর্মীকে দিতে পারেননি তিনি। ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বললেও পরিষ্কার কোনো ধারণা দিতে পারেননি তারা। সবাই ঘুরে-ফিরে যেটা বলার সেটা করেছেন, যার সারকথা হলো— ‘উনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন। আইনি জটিলতা কাটিয়ে আসতে যতটুকু সময় লাগে, ততটুকু সময় উনি নেবেন।’
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও বিএনপি এখনও ক্ষমতার বাইরে। অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের কয়েকজন এবং ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া একাধিক সমন্বয়ক আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতি নিয়ে যে ধরনের নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছেন, তাতে করে একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমান চাইলেই হুট করে দেশে ফিরতে পারবেন না। এজন্য দরকার রাজনৈতিক সমঝোতা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর এবং তারেক রহমানের আইনজীবীদের দেওয়া তথ্যমতে, ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসন আমলে এসব মামলা হয়।
ইতোমধ্যে ৬টি মামলার বিচার শেষে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, কোনো মামলাতেই সাজা ভোগ করেননি তারেক রহমান। তাকে পলাতক দেখিয়ে বিচার হয়েছে এসব মামলার। যদিও বিএনপি এবং তারেক রহমানের আইনজীবীদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে এসব মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এসব মামলার একটিও টিকবে না।
জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়। পরবর্তী সময় শেখ হাসিনার সরকারের আমলে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থপাচার এবং দেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ আরো অন্তত ২০টি মামলা হয়।
সূত্র মতে, দেশে ফেরার আগে মামলাগুলোর একটা চূড়ান্ত ফায়সালা চায় বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, রাজনীতিতে স্থায়ী মিত্র বা স্থায়ী শুত্রু বলে কোনো কথা নেই। ‘বন্ধু’ যেকোনো সময় ‘শত্রু’তে পরিণত হতে পারে। ফলে ‘একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা’ মামলায় যাবজ্জীবন, ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ মামলায় ১০ বছর, ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ’ মালায় ৯ বছর, ‘অর্থপাচার’ মামলায় সাত বছর, ‘মানহানি’ মামলায় দুই বছরের সাজা নিয়ে দেশে ফেরার ঝুঁকি নেবেন না তারেক রহমান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা আছে। কিছু মামলায় এরইমধ্যে তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এগুলো আমরা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিরসন করতে চাই। তারপর তিনি দেশে ফিরবেন।’
সূত্রমতে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি নির্ঝঞ্ঝাট করতে বাংলাদেশে একটি আইনজীবী প্যানেল এবং লন্ডনে তার (তারেক রহমান) উপদেষ্টা পরিষদ একযোগে কাজ করছে। যেহেতু তিনি অ্যাসাইলাম নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন, সেহেতু আইনি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে তবেই তিনি নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। এ কারণে তার দেশে ফেরার বিষয়টি নিয়ে দলের নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের খুব বেশি কৌতুহলী না হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল মিটিং বিএনপির এক নেতা তারেক রহমানকে জিজ্ঞেস করেন, ‘‘লিডার, কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন?’’ আকস্মিক এ প্রশ্নে অনেকটা বিব্রত হন তারেক রহমান। পরে ওই নেতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দিন। আপনার দলের জন্য কাজ করুন।’’
তারেক রহমানের দেশে ফেরা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, “উনি ঠিক কবে ফিরবেন, সেটা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। ওনার বিষয়টি নিয়ে একটা আইনজীবী প্যানেল কাজ করছেন। লন্ডনেও তার উপদেষ্টার কাজ করছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলে উনি দেশ ফিরবেন বলে আশা করি।”
বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো আইনগতভাবে মোকাবিলার প্রক্রিয়া শুরু করেছি, কিছু মামলা বাদিরাই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। একুশে আগস্টের মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় তাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে নিম্ন আদালত থেকে। এর মধ্যে দুর্নীতির মামলাও আছে। সেগুলো আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় দেখছি। বিচার বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিচ্ছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই তিনি দেশে ফিরবেন।’
সারাবাংলা/এজেড/এমও