Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করুণা নয় আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাঁচতে চান সাগর বিধবারা

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৩৯

কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মাছ শিকারে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ায় ট্রলার ডুবিতে সাগরের অতলে হারিয়ে গেছেন সেবু আক্তারের স্বামী মোহাম্মদ আলমঙ্গীর (৪৭)। মরদেহের খোঁজ না মেলায় স্বামীকে দিতে পারেননি শেষ বিদায়। তিন বছর আগে স্বামী হারানো ৩৩ বছর বয়সী সেবুর চার সদস্যের সংসারে তার স্বামীই ছিলেন একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে সেবুর জীবনে নেমে এসেছে এক বিশাল অনিশ্চিয়তা। বেঁচে থাকার তাগিদে নামতে হয়েছে সংগ্রামে। সেবু কখনো ঝিনুক কুঁড়াতে যান সমুদ্র সৈকতে, আবার কখনো শুটকি মহালের শ্রমিক হিসেবে যান বনে।

বিজ্ঞাপন

অর্থ অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে তার ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া। জীবিকার তাগিদে ছেলে-মেয়েরাও যুক্ত হয়েছে মায়ের সঙ্গে। স্বল্প আয় আর ঝুঁপড়িতে টেনেটুনে চলছে সংসার। স্বামীহীন এ পথ পাড়ি দিতে প্রতিনিয়ত কুদৃষ্টি থেকে শুরু নানা প্রতিকূলতায় পরতে হয়েছে তাকে। এরপরেও আত্মসম্মান ধরে রাখা সেবু আক্তার কারো করুনার পাত্র না হয়ে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে বাচঁতে চান। কক্সবাজার নাজিরারটেক (১ নম্বর ওয়ার্ড) শুটকি পল্লীতে এসব কথা হয় সাগর বিধবা সেবু আক্তারের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

শুধু সেবু আক্তারই নন সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ৪৫ দিন আগে স্বামী আক্তার হোসেনকে হারান খালেদা বেগম। তিনি জানান, তার সেই সুখের সংসার এখন আর নেই। স্বামী হারানোর শোক কাটতে না কাটতেই টান পড়েছে জীবন-জীবিকার। একদিকে স্বামী হারানোর কষ্ট অন্যদিয়ে দুই সন্তানের খাবার যোগানোর চিন্তা। তাই বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে খালেদা বেগমকেও। তিনি এখন শুটকি মহালের নিয়মিত শ্রমিক।

একইভাবে গত ১৫ বছর আগে স্বামী হারানো কষ্টের কথা জানান আরেক সাগর বিধবা হাজেরা বেগম। তিনি জানান, তাদের অনেক সুখের সংসার ছিল। স্বামী লিয়াকত মিয়া ছিলেন বোটের মাঝি। সেবার সাগর থেকে এসে সোনার চেইন কিনে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্বামী আর ফিরেনি। ১৩ মাঝি-মাল্লার সাথে লিয়াকত মিয়াও হারিয়ে গেছে সাগর তলে। এখনো স্বামীর স্মৃতি ভুলতে পারেন না হাজেরা বেগম। সুযোগ থাকার পরেও করেননি দ্বিতীয় বিয়ে। স্বামী হারিয়ে মুছড়ে গেলেও ভেঙ্গে পড়িননি তিনি। তিন সন্তান নিয়ে এখনো হাজেরা বেগম লেগে আছেন জীবন যুদ্ধে। তবে তার দিন ভালো গেলেও স্বামী লিয়াকত মিয়ার শূর্ণ্যতা রয়েই গেছে।

কক্সবাজার নাজিরাটেক শ্রমিক-মাঝি-মাল্লা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি নুরুল বশর মাঝি জানান, নাজিরারটেকে গত ৫০ বছরে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ফিরে আসেনি অন্তত চার শতাধিক মাঝি-মাল্লা। স্বামী হারা এই বিধবাদের কাটছে মানবেতর দিন। তাদের অনেকে জীবনযুদ্ধে টিকতে না পেরে হারিয়ে গেছে। তাদের সন্তানদের ছিন্নমূল হতেও দেখা গেছে। এই মানুষদের কল্যাণে সরকারি-বেসরকারি সহযেগিতা প্রয়োজন।

স্থানীয় কাউন্সিলর (১ নম্বর ওয়ার্ড) আক্তার কামাল জানান, এ উপকূলে সাগর বিধবা এবং এতিম শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাদের জন্য সরকার যে সহযোগিতা দিচ্ছে করছে তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া এসব সহযোগিতা সঠিকভাবে বণ্টন হয় না। অপ্রিয় হলেও সত্য এ ধরনের অনেক সাগর বিধবাদের ভিক্ষাবৃত্তিতেও দেখা যায়। তাদের কল্যাণে আরো উন্নত চিন্তা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল হতে প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা দরকার।

কক্সবাজার সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান বলেন, কোনো মৎস্যজীবী যদি সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান তাহলে মৃত জেলে পরিবারের জন্য ৫০ হাজার টাকা এককালিন দেওয়া হয়। এই সহযোগিতা আরো বাড়ানোর একটি পরিকল্পনা আছে। এছাড়া, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে স্বামী হারা বিধবাদের জন্য বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে সরকারিভাবে।

সারাবাংলা/ইআ

কক্সবাজার ট্রলার ডুবি বিধবা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর