বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬
রংপুর: ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরের জীবনরেখা তিস্তা নদীতে বেড়েছে অস্বাভাবিকহারে পানি। এতে তিস্তাপাড়ে বড়ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে পাড়ের মানুষ। পানি বৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যেই তিস্তার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত এবং ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। এদিকে পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ব্যারেজের ৪৪ ফটক খোলা রাখা হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানির সমতল হ্রাস পেয়ে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হলেও তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ২৯ দশমিক ৩১ সেন্টিমিটার। ধারণা করা হচ্ছে রাতের মধ্যে বিপৎসীমা আরো বাড়বে কাউনিয়ার এই পয়েন্টে।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরে পানি বাড়তে থাকে। রাত ১১টায় পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। আজ সকাল ৬টায় পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
একই সময়ে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটারে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। তবে রংপুরের কাউনিয়ায় পানি বাড়লেও লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজে সেই অনুপাতে পানি বাড়েনি। সেখানে রোববার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রংপুরের তিস্তা তীরবর্তী তিন উপজেলা কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া এলাকার নদীপারের মানুষ সতর্ক অবস্থায় আছেন। তবে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় চড় এলাকা ও নিম্নাঞ্চলে চাষ করা আমন ধান, আগাম আলুসহ অন্যান্য সবজি পানিতে ডুবে গেছে।
গঙ্গাচড়ার মহিপুরের কয়েকজন স্থানীয় জানান, অসময়ে হটাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা হতে পারে। আমন ধান ও আগাম আলুসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। এবারও কৃষকদের চরম মূল্য দিতে হবে।
গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, পানি বাড়া-কমা নিয়ে নদীপারের মানুষের অভিজ্ঞতা আছে। চরাঞ্চলে সামান্য পানি উঠলেও ভয়ের কিছু নেই। এই পানি নেমেও যাবে।
তিস্তানদী লাগোয়া কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনসার আলী বলেন, রাতের মধ্যে পানি বেড়েছে। তবে কোনো বৃষ্টি হয়নি। এরপরও নদীপারের মানুষজনকে সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাউবোর রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, পানি বাড়লেও এই পানি নেমে যাবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নদীর পানির সমতল হ্রাস পেয়ে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
তিনি জানান, কয়েকদিন থেকে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারনে পানির চাপ সামলাতে তিস্তার ৪৪ জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে রাস্তা ঘাট, ব্রীজ ভেঙে না যায় সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/ইআ