ঢাকা: সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অডিটর পদকে ১০ম গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে আন্দোলনকারী অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের ৬৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজধানী থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে। এই বদলিকে অন্যায় ও প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবে দেখছেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের নন ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করায় গণবদলি করে সিএজি রায় অমান্য করেছে।
জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন অফিস আদেশে ৮৪ জনকে বদলি করা হয়েছে। এই বদলি করার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগে কর্মকর্তারা।
তাদের অভিযোগ, আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে করতে অহিংস আন্দোলন করার পরেও তাদের দাবি না মেনে বদলির নামে হয়রানি করা হচ্ছে। অডিট ক্যাডাররা পরিকল্পিত নন ক্যাডার নারীসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানিমূলক বদলি করেছেন। এক্ষেত্রে তাদের নিরাপত্তা, ছেলেমেদের বার্ষিক পরীক্ষা কিংবা দূর-দূরান্তে যাতায়াত করার মতো পরিস্থিতি আছে কিনা তাও আমলে নেওয়া হয়নি। অথচ আগামী এক থেকে দেড় মাস পর রাজধানীর স্কুলগুলোতে শুরু হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষা। এই অবস্থায় নারীসহ বিভিন্ন পদে পদে কর্মরত ৬৪ নন ক্যাডার কর্মচারীকে তিনদিনের মধ্যে রাজধানী থেকে বদলি হয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগদানের নির্দেশদনা দেওয়ায় তারা পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের কর্মচারী সারাবাংলাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর একটি রিট মামলার পক্ষভুক্ত ৬১ জন অডিটরের বেতনস্কেল গ্রেড-১১তম থেকে ১০ গ্রেডে উন্নীত করা হয়। পরবর্তী সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে রিট মামলায় পক্ষভুক্ত ৬১ জন অডিটরের বেতনস্কেল গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-১০ এ উন্নীত করা হয়। তারপরেও নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের অডিটর পদটিকে ১০ গ্রেডে (সেকেন্ড ক্লাস) গেজেটেড পদে উন্নীত না করে কেবল রিট পিটিশনকারী ৬১ জন অডিটরের বেতন স্কেল গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-১০ এ উন্নীত করা হয়।
পরে এ বিষয়ে আদালত অবমাননা অভিযোগ দায়ের করলে সর্বোচ্চ আদালত ২০২২ সালে অডিটরদের গ্রেড-১০ (সকল অডিটর) এ উন্নীত করার পক্ষে রায় দেন। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ১২ আগস্ট সিএজি দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রশাসন ও অনু বিভাগ থেকে তা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাটি পাঠানো হলে আইন মন্ত্রণালয় অডিটরের বেতন স্কেল গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-১০ এ উন্নীত করার বিষয়ে চুড়ান্ত অনুমোদন দেন। তারপরেও সিএজি তা বাস্তবায়ন করেনি।
এ অবস্থায় আদালতে রায় বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলনের নামে সারাদেশের কয়েক হাজার অডিটর। তাদের এই আন্দোলনে সমর্থ করেন অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের সকল নন ক্যাডার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তারা দীর্ঘ প্রায় ৪৫ দিন অহিংস আন্দোলন করেন। এই সময় আন্দোলনকারীরা কলম বিরতীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২২ সেপ্টেম্বর কাকরাইল বিচারপতির বাসভবন সংলগ্ন অডিট ভবন ঘেরাও করেন। পরে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। ওইদিনের পর থেকেই অডিটরদের গণ বদলি শুরু হয়।
এদের মধ্যে ঢাকায় কর্মরত অডিট অ্যান্ড একাউন্টস অফিসার নাসিমা আনোয়ারাকে সাতক্ষীরা শ্যামনগর, আফরোজা বেগমকে তাহিরপুর সুনামগঞ্জে, মাহফুজা আক্তারকে উজিরপুর বরিশালে, অডিটর নাহিদ সুলতানাকে শরিয়তপুর, মোমেনা খাতুন মাদারীপুর, নাজমুন নাহার মুন্সিগঞ্জ, লাবণী আক্তার রিয়া ফরিদপুরে বদলি করা হয়েছে। এইভাবে ৬৪ জন অডিটর এবং অডিট অ্যান্ড একাউন্টস অফিসারকে অডিটর ১০তম গ্রেডে উন্নীতকরণ করার দাবিতে আন্দোলনকারী এবং আনন্দোলন সমর্থনকারীদের গণহারে বদলি করা হয়। দাবি না মেনে উল্টো বদলির নামে হয়রানি করায় অডিট অ্যান্ড একাউন্টস বিভাগে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) ও এর অধীন হিসাব মহানিয়ন্ত্রক (সিজিএ), কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ) ও রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের চার প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে অডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন ছয় হাজার ৯৮৫ জন। এর মধ্যে মাত্র ৬১ জনকে হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে, যারা রিট মামলার পক্ষভুক্ত হয়েছিলেন, শুধু তাদের দশম গ্রেডে বেতন দেওয়া হয়। বাকিরা এখনো ১১তম গ্রেডে বেতন পান। কিন্তু অডিটরদের দাবি আদালতের রায় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৬১ জনকে নয় সব অডিটরকে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। এটি করা না হলে আদালত অবমাননার শামিল।
এ বিষয়ে অডিটর জেনারেল মো. নুরুল ইসলাম এবং উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র) এস এম রিজভীকে একাধিক বার ফোন করার পরেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন: অডিটরদের দশম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে কাকরাইলে অবরোধ