Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট, জ্বলছে না চুলা

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৮:৪৫

ঢাকা: গোপীবাগের বাগানবাড়ি এলাকায় গ্যাস নেই চার দিন। এখানকার বাসিন্দারা প্রথমে ভেবেছিল অতিবৃষ্টির কারণে পাইপে পানি ঢুকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পরে দেখা গেল, মেইন লাইনেই গ্যাস নেই। এই এলাকার কারও কারও বাসায় রাতে গ্যাস থাকলেও দিনে একদমই থাকে না। আবার কোনো কোনো বাসায় দিনে গ্যাস থাকলেও রাতে আসে না।

এমন খবর পাওয়া গেছে, রাজধানীর মুগধা, মান্ডা, মানিকনগর ও পুরান ঢাকার অনেক এলাকায়। এর মধ্যে কিছু এলাকায় বছরজুড়েই গ্যাস সংকট থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস খাতে রেশনিংয়ের কারণে আবাসিকে কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতি এখনি দূর করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বছরজুড়ে গ্যাস সংকট যেসব এলাকায়

রাজধানীর মুগধাসংলগ্ন মান্ডা। ১ দশমিক ৯৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মান্ডার জনসংখ্যা ৭২ হাজার। এখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরজুড়েই এখানে গ্যাসের সংকট থাকে। এলাকার ছাতা মসজিদ গলির বাড়িওয়ালা খন্দকার আসাব উদ্দীন মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিন রাত ১২টার দিকে গ্যাস আসে, আবার ভোর না হতেই চলে যায়। গ্যাস না থাকার কারণে এখানে ভালো ভাড়াটিয়া পাওয়া যায় না। আমাদের তো অভ্যাস হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন কোনো ভাড়াটিয়া এলে দুই তিন মাসের বেশি টেকে না। আমরা তো বাড়ির মালিক। আমাদের সরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ আরেক বাড়িওয়ালা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এখানে কম টাকায় বাসা ভাড়া দিয়ে অন্য এলাকায় থাকি।’

জানা গেছে, মান্ডা এলাকার এই গ্যাস সংকট বিষয় নতুন নয়। গ্যাস সংকট রয়েছে মুগধা, বাসাবো এলাকায়ও। বছরজুড়ে গ্যাস সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে মানিকনগর রেলগেটসংলগ্ন এলাকায়। রেললাইনের দুই পাশে থাকা বাসিন্দারা জানান, সকাল ৮টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে। এর পর চাপ কমতে থাকে। আবার চাপ বারে রাত ৮টায়। অর্থাৎ এ এলাকায় প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা গ্যাস থাকে না।

বিজ্ঞাপন

গ্যাস সংকটের তথ্য পাওয়া গেছে, রাজধানীর পুরান ঢাকার শনির আখড়া, শাখারী বাজার, লক্ষীবাজার, যাত্রাবাড়ী, টিকাটুলি, কে এম দাস লেন, গোপীবাগ, বাগানবাড়ি, গোলাপবাগ, কমলাপুর, ওয়ারির কিছু অংশে। আরও তথ্য এসেছে, বাড্ডা, বনশ্রী, মৌচাক, মালিবাগ, নাখালপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুরের কিছু অংশ থেকেও।

গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি

জ্বালানি বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে দুই হাজার ৬৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে ঘাটতি থাকে এক হাজার ৩৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট। যেসব গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে সেগুলোতে প্রতিদিন ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে। বাকি গ্যাস নেওয়া হয় এলএনজি থেকে। আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালিতে দু’টি ভাসমান টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি থেকে দৈনিক ৬০ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা হয়। বাকি যে সামিটের টার্মিনাল রয়েছে সেটা গত তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে।

পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প কারখানাসহ সব খাতেই সংকট দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এলএনজি থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়া সংকট বেড়েছে। গত কয়েকমাস ধরে আমাদের রেশনিং চলছে। রেশনিংয়ে শিল্প খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় আবাসিকে চাপ বাড়ছে।’

ভোলায় গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিয়ে আসতে চাই। ভোলা থেকে বরিশাল, সেখান থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে খুলনায় নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। একইসঙ্গে এলএনজি ও সিএনজির মাধ্যমে ঢাকায় গ্যাস আনা হবে। এই কাজগুলো শুরু হলে গ্যাসের কোনো সংকট থাকবে না বলে আশা করি।’

ভোলায় নতুন কূপের সন্ধান

দেশজুড়ে গ্যাস সংকটের মধ্যে সুসংবাদ দিল বাপেক্স। দ্বীপ জেলা ভোলায় আরও ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে বলে সম্প্রতি জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। এই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে অন্তত দুই বছরের চাহিদা পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পেট্র্রোবাংলা ও বাপেক্সের সঙ্গে যৌথচুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি গ্যাজপ্রম চার বছর গবেষণা চালিয়ে এই গ্যাসের সন্ধান পায়।

বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সচিবালয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিদ্যুতের পাশাপাশি আমরা গ্যাস সংকট কাটাতে স্থায়ী একটি সমাধানে যেতে চাই। আর সেজন্যই সারাদেশে ১০০ কূপ খননের উদ্যোগ নিচ্ছি।’

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

উদ্যোগ কূপ খনন গ্যাস সংকট রাজধানী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর