একনেকে যাচ্ছে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:১৫
ঢাকা: সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগ সরকারের শেষ দিকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের মূল কাজ শুরু না হলেও ছয় হাজার ৫৭৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সন্দেহ করেছিল অন্তবর্তী সরকার। কিন্তু যাচাই-বাছাই শেষে দেখা যায়, পরিকল্পনা কমিশনের আগের মূল্যায়নই ঠিক আছে। এ কারণে আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি। এরই মধ্যে একনেকে উপস্থানের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
পরিকল্পনা উপদেষ্টার দফতরের দায়িত্বশীল এক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব আটকে যাওয়া সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু উচ্চ কারিগরি এবং এটি বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋণ থাকায় যাচাই-বাছাই শেষে একনেকে উপস্থানের সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উপদেষ্টার দফতর থেকে ফাইলটি পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে। সেখান থেকে একনেক অনুবিভাগে গেছে প্রস্তাব। তবে কোন একনেক বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে সেটি এখনো চূড়ান্তভাবে বলা যাচ্ছে না।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তজার্তিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, সরকারি তহবিলের দুই হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব তহবিল থেকে দুই হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু এরই মধ্যে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৮০৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৬ হাজার ৫৭৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি ৪০ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেইসঙ্গে প্রকল্পের মুল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এখন নতুন করে তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনীর কারণ হিসেবে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় বলেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ অংশে শুধুমাত্র ডলারের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে এক হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এছাড়া সিডি ভ্যাট, পোর্ট চার্জ, ভূমি অধিগ্রহণ, কন্টিনজেন ফি, পরামর্শক ফিসহ রাজস্ব খাতে বেশকিছু অংশে ব্যয় বেড়েছে। এসব নানা কারণে বন্দর নির্মাণ অংশে ব্যয় বাড়বে দুই হাজার ৪৬৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
এদিকে সড়ক ও জনপথ অংশে প্রাথমিকভাবে সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের যে লক্ষ্য ছিল পরে সেটি ডিটেইল ডিজাইনে পরিবর্তন করা হয়। এক্ষেত্রে সড়ক নির্মাণের পরিমাণ কমে গিয়ে সেতু নির্মাণ কাজ বেড়ে যায়। ফলে এ অংশের ব্যয় বেড়েছে ৬৭৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এ ছাড়া, মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি হয়েছিল ২০১৮ সালের সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের রেট সিডিউল অনুযায়ী। কিন্তু এখন হালনাগাদ ২০২২ সালের রেট সিডিউল ধরায় পুর্ত কাজের ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ৯১৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এখানে ডলারের দাম বাড়ায় ব্যয় বাড়ছে ৪৬১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
এ ছাড়া, রেট সিডিউল পরিবর্তন হওয়ায় নির্মাণ সাইট-‘বি’ ক্যাটাগরির হওয়ায় প্রতিটি আইটেমের রেটের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত মূল্য হিসেবে ৯০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। আর প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর বেড়ে যাওয়ায় শুধু পরামর্শক খাতেই ব্যয় বাড়বে ৮৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পে দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর এর আগে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল সেগুলো প্রতিপালন করে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়। ফলে একনেকে উপস্থাপনে সুপারিশ দেওয়া হয় গত সরকারের শেষ দিকে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তবর্তী সরকার এসে অধিক পর্যালোচনার জন্য প্রকল্প ভৌত অবকাঠামো বিভাগে ফিরিয়ে দেয়। আবার যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, যেসব ব্যয় ধরা হয়েছে সেগুলোদে ক্রুটি নেই। ফলে পরিকল্পনা উপদেষ্টার দফতরে পাঠানো হয় প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। অবশেষে গত সপ্তাহের শুরুতেই সেই ফাইলে সই করেছেন উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শুরু থেকে গত মে মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৭১০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তবে প্রকল্পের মূল পূর্ত কাজ শুরু না হওয়ায় বাস্তব অগ্রগতি হয়নি। সংযোগ সড়কসহ কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হলে মাদার ভেসেলগুলো সরাসরি বন্দরে নোঙ্গর করতে পারবে। ফলে কার্গে হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে এই বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মেটাবে এবং প্রতিবেশি দেশগুলোকে দ্রুত বন্দর সেবা দিতে পারবে।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম