ট্যাংকে পৌঁছায়নি আগুন, নিহত বেড়ে ৩
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে জ্বালানি তেল পরিবহনে নিয়োজিত রাষ্ট্রায়ত্ত ট্যাংকার বাংলার জ্যোতিতে অগ্নিকাণ্ডে আরও একজন নিহতের তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিপিসি)। এ নিয়ে এ দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হলো, যাদের পরিচয়ও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বিপিসি জানিয়েছে, জাহাজটিতে প্রথমে বিস্ফোণ ঘটে এবং এতে সৃষ্ট আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে ট্যাংকে রক্ষিত জ্বালানি তেলে আগুন পৌঁছালে দেশে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হতো বলে সংস্থাটির ভাষ্য।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, জাহাজটিতে তিন জনই ছিলেন এবং তারা নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ সুনির্দিষ্টভাবে তারা জানতে পারেনি। এতে কারও দোষও তার পায়নি। তবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ও ভবিষ্যতে মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে বিপিসি’র পক্ষ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। নিহতদের সৎকারসহ পরবর্তী সময়ে যাবতীয় করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে আরেকটি কমিটি করেছে বিপিসি।
এছাড়া দুর্ঘটনার কারণ জানতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। দুর্ঘটনার পর সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিপিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক।
সংবাদ সম্মেলনের তথ্য অনুযায়ী, নিহতরা হলেন- অয়েল ট্যাংকার বাংলার জ্যোতিতে সেসময় দায়িত্বরত ডেক ক্যাডেট সৌরভ কুমার সাহা, বিএসসির ওয়ার্কশপের চার্জম্যান নুরুল ইসলাম এবং অস্থায়ী শ্রমিক মো. হারুন। এদের মধ্যে সৌরভের বাড়ি ঝিনাইদহে। তিনি বরিশাল মেরিন একাডেমি থেকে প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করে বিএসসিতে যোগ দিয়েছিলেন। নুরুল ইসলামের বাড়ি চট্টগ্রামে এবং হারুনের বাড়ি কিশোরগঞ্জে।
কমডোর মাহমুদুল মালেক জানান, গভীর সাগরে মাদার ভ্যাসেল থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল নিয়ে আসা বাংলার জ্যোতি জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানায় সাত নম্বর ডলফিন জেটিতে নোঙ্গর করা ছিল। সেটি রাষ্ট্রায়ত্ত তেল পরিশোধন প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সেই জ্বালানি তেল খালাস করায় নিয়োজিত ছিল। দুর্ঘটনার সময় জাহাজটিতে মোট ১১ হাজার ৭১৬ মেট্রিকটন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ছিল।
সকাল ১১টার দিকে প্রথমে জাহাজটিতে বিস্ফোরণ ঘটে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই দুর্ঘটনাটা খুবই ভিন্নমাত্রার। যেকোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, প্রথমে আগুন লাগে, তারপর বিস্ফোরণ হয়। কিন্তু এটাতে দেখেছি, সকাল ১১টার দিকে প্রথমে বিস্ফোরণ হয়, তার পর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে বন্দর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস এবং টানেল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব টাগবোটসহ সকল সরঞ্জাম আমরা আগুন নেভানোর কাজে সেখানে জমায়েত করতে সক্ষম হয়। দশটি টাগ একযোগে ফায়ার ফাইটিং করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ১১ হাজার ৭০০ টন তেলের মধ্যে কিছু ডিসচার্জ করেছে। ঠিক ওইসময় অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। যদি আগুন পুরো তেলের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তো তাহলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হতো, আরও প্রাণহানি হতো, এটা তখন ন্যাশনাল ইস্যু হয়ে যেত, যেটার ক্ষতি হতো অপরিমেয়। ফায়ারটা যেখানে শেষ হয়েছিল, তার আরও পরে মূল ট্যাংকার, যেখানে প্রায় ১১ হাজার ৭১৬ মেট্রিকটন তেল ছিল। কোনোভাবে ট্যাংক পর্যন্ত গেলে এটা ভয়াবহ বিপর্যয় হতে পারতো।’
দুর্ঘটনার কারণ কী হতে পারে– এমন প্রশ্নের জবাবে কমডোর মাহমুদুল বলেন, ‘তিন-চারটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। সেগুলো আমরা বলছি না। তদন্ত কমিটি আমরা করেছি। বিপিসি একটা করেছে শুনেছি। তদন্ত করলে এটা জানা যাবে। তবে একটা কথা বলতে পারি, জাহাজে মেজর কোনো মেইনট্যানেন্স ওয়ার্ক ছিল না। রুটিন মেইনটেন্যান্স ছিল, রশি অ্যাডজাস্টমেন্ট হচ্ছিল। কোনো ইঞ্জিন থেকে, কোনো জেনারেটর থেকে কিংবা যেকোনো মেশিনারিজ থেকে এ ধরনের দুর্ঘটনা হয়নি। কোনো একটা জায়গা থেকে হয়তো গ্যাস ফর্ম হয়েছে, এরপর সেখান থেকে ব্লাস্ট হয়েছে। এটা একটা অ্যাবসলিউটলি মেরিটাইম অ্যাকসিডেন্ট। তদন্ত কমিটি নিশ্চয় বের করবে।’
বিপিসির পক্ষ থেকে দুই কমিটির তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতে সেটা মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। সেখানে ইস্টার্ন রিফাইনারির প্রতিনিধিও রাখা হয়েছে। আর যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সৎকারসহ সকল আনুষাঙ্গিক কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা এবং পরবর্তী সময়ে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে আরেকটি কমিটি করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, বেলা ১১টার দিকে সূত্রপাত হওয়া অয়েল ট্যাংকারের আগুন বিকেল ৪টার দিকে পুরোপুরি নেভানো যায়।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম