চট্টগ্রাম ব্যুরো:
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। একইসঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল এবং যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীনের আদালত এ রায় দেন।
শাহাদাত হোসেনের আইনজীবী আরশাদ হোসেন আসাদ সারাবাংলাকে বলেন, চসিকের নির্বাচন বাতিল চেয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের দায়ের করা মামলায় তাকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন আদালত। বর্তমান সরকারের আমলে এ রায়ের মাধ্যমে আমরা সঠিক ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ ন্যায়বিচার পেতে শাহাদাত হোসেনকে গত সাড়ে তিন বছর ধরে আইনের দরজায় আসতে হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গনে শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগকে দীর্ঘদিন ধরে নিজের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি ভোট ডাকাতির মাধ্যমে চসিক নির্বাচনে রেজাউল করিমকে মেয়র ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীতে ২৪ ফেব্রুয়ারি চসিকের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে আমি মামলা করেছিলাম। এ মামলার রায়ে আজ আদালত আমাকে মেয়র ঘোষণা করেছেন। রেজাউল করিমের যে গেজেট সেটা বাতিল করেছেন আদালত।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমাকে চসিকের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছর ও মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের দুই বছরের আমলে বাংলাদেশে কোনো আইনের শাসন ছিল না। ড. ইউনুছের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছর ধরে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় সমস্ত নেতাকর্মী, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সেগুলোর প্রত্যাহার আমরা চাচ্ছি। এ রায়ের মাধ্যমে একটি মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে এ রায়ের প্রতি সম্মান রেখে ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে তারা চসিক মেয়রের দায়িত্ব আমাকে বুঝিয়ে দেবেন বলে আমি আশা রাখি।
আদালতের এ রায়ে তিনি খুশি কিনা সাংবাদিকের এ প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু আমি নই, সারাদেশের মানুষ খুশি। সারাদেশের যেসব মানুষ অবৈধ স্বৈরাচারী সরকারের মামলা, হামলা, খুন ও গুমের শিকার হয়েছেন তারা আজ আমার এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালত প্রাঙ্গনে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল বের করেন।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে মেয়র ঘোষণা করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে। এতে রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ এবং তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান বলে ঘোষণা করা হয়েছি। পরে নির্বাচনে অবিশ্বাস্য কারচুপির অভিযোগ এনে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করেন শাহাদাত হোসেন। মামলায় তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা ও চসিকের তৎকালীন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ৯ জনকে বিবাদী করা হয়েছিল।
তিন বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আড়ালে চলে যান রেজাউল।
গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে অপসারণ করে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালানোর জন্য বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।