সাইফুলকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীকে ৩ দিনের আলটিমেটাম
১ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:২৯
ঢাকা: সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলির বড় ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ওই ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে গুমবিরোধী সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। তিন দিনের মধ্যে জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে যৌক্তিক ব্যবস্থা না নিলে রাজপথে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে মায়ের ডাক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ আলটিমেটাম দেন।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে ৫৫৩ শাহীনবাগ, তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত একদল সদস্য সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে তুলে নিয়েছিলেন। ছয় ঘণ্টা পর তারাই আবার সাইফুলকে একই বাসায় ফেরত দিয়ে গিয়েছিলেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে মায়ের ডাকের প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলি আলটিমেটামের দাবিগুলো তুলে ধরেন। দবিগুলো হলো—
- যে আদেশের বলে যৌথ বাহিনী বাড়িতে প্রবেশ করে সাইফুলকে তুলে নিয়েছিল, সেই আদেশটি দেখাতে হবে;
- সেনাবাহিনী ও সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে;
- গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোকে সুরক্ষা দিতে হবে;
- অভিযান পরিচালনা করা সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে; এবং
- সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মিথ্যা বলার জন্য আইএসপিআর-প্রধানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমাদের কোনো ওয়ারেন্ট দেখানো হয়নি। যৌথ বাহিনীর কি কোনো কাগজপত্র ছাড়াই বাড়িতে প্রবেশের অধিকার আছে? আমরা সেই আদেশটি দেখতে চাই, যা যৌথ বাহিনীকে এই ক্ষমতা দেয়।
সানজিদা আরও বলেন, নতুন বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একজন কিশোরী ও একজন বৃদ্ধা নারীকে কীভাবে বন্দুকের মুখে আলাদা রুমে রাখতে পারে? নারীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য নারী অফিসার আবশ্যক। তারা সেটাও লঙ্ঘণ করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি এক ধরনের কৌশল, যা ভুক্তভোগীদের পরিবারকে চাপ দেওয়ার জন্য করা হচ্ছে, যারা গুমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের শুরু করেছেন।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে যদি জোর করে তুলে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা না হয়, মায়ের ডাক রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এদিকে সাইফুলকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সোমবার রাতেই আইএসপিআর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। এতে বলা হয়, সাইফুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। আগের দুটি মামলাও ছিল। সে কারণে তাকে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে নিজ বাসায় ফেরত দিয়ে আসা হয়।
আইএসপিআরের বক্তব্য নিয়ে সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, এর মাধ্যমে মিথ্যাচার করা হয়েছে। তারা ভুল করেছে বলে ভাইকে বাসায় ফেরত দিয়ে ক্ষমা চেয়েছে। এরপর আইএসপিআরের এ রকম মিথ্যাচার অগ্রহণযোগ্য। আইএসপিআর প্রধানেরও বিচার দাবি করেন তিনি।
২০১৩ সালে একইভাবে গুম হয়েছিলেন সানজিদা ইসলাম তুলির আরেক ভাই বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন। তাকে এখন পর্যন্ত ফেরত পায়নি পরিবার। মূলত ওই ঘটনার পরপরই গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারদের পক্ষে লড়াই করে আসছিলেন সানজিদা। একই ধরনের ঘটনার প্রতিবাদের জন্য গড়ে তোলেন মায়ের ডাক।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আন্তর্জাতিক উইংয়ের নেতা তাবিদ আওয়াল, ছাত্র শক্তির আহ্বায়ক আখতার হোসেন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ ও মানবাধিকার কর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর