সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, শনাক্ত-মৃত্যু আগস্টের চেয়ে ৩ গুণ
২ অক্টোবর ২০২৪ ১১:৩৫
ঢাকা: চলতি বছরের আগস্টে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছয় হাজার ৫২১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আগস্টের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে সেপ্টেম্বরে। শুধু তাই না, তিনগুণ বেশি রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন সেপ্টেম্বরে। এ মাসে ১৮ হাজার ৯৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮০ জন।
অর্থাৎ পরিসংখ্যান বিবেচনায়, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্তের পরিমাণ ছিল আগস্টের তুলনায় ২ দশমিক ৭৭ গুণ। এ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর পরিমাণও ছিল আগস্টের চেয়ে ২ দশমিক ৯৬ গুণ। সে হিসাবে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যু দুটোই আগের মাসের তুলনায় ছিল প্রায় তিন গুণ।
দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের যে পরিসংখ্যান তাতে দেখা যায়, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসেই এর মাত্রা বাড়তে থাকে। তবে ২০২৩ সালে অক্টোবর পরবর্তী সময়েও আতঙ্ক ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। চলতি মৌসুমের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে জুনে। পরবর্তীতে জুলাই ও আগস্ট মাসেও রোগী শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। তবে সেপ্টেম্বরের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যানকে ভয়ঙ্কর বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার বিষয়টি আরও দুই মাস আগেই সতর্ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। আর তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানানো হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি দেখা গেছে। এখনো যদি সতর্ক হয়ে মশক নিধন কর্মসূচি সফলভাবে পরিচালনা করা না হয় তবে অক্টোবরেও কিন্তু পরিস্থিতি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মশা নিধনের কোনো বিকল্প নেই। দ্রুত মশা নিধনের জন্য ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করতে হবে। উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে অন্তত পরিস্থিতি কিছুটা ভালো করা যেতে পারে। এমন কিছু করা না গেলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ।
সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু বেড়েছে তিনগুণ
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর যে ঊর্ধ্বমুখী চিত্র দেখা যায়, সেটার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতেও। মোট এক হাজার ৫৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী জানুয়ারি মাসে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এরমধ্যে ১৪ জন মারা যান।
তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এই সংখ্যা কমে আসতে থাকে। এই মাসে ৩৩৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরমধ্যে তিনজন মারা যান।
মার্চে দেশে ৩১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। যারমধ্যে পাঁচজন মারা যাওয়ার তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এপ্রিলে ৫০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় যার মাঝে দুইজন মারা যান। মে তে ৬৪৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়।
দেশে চলতি বছরের জুনে ৭৯৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের মধ্যে আটজন মারা যান।
তবে জুলাইয়ে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় দুই হাজারের বেশি। এই মাসে দেশে দুই হাজার ৬৬৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, যার মধ্যে মৃত্যু হয় ১২ জনের।
আগস্টে এসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ছয় হাজারের বেশি। এই মাসে দেশে ছয় হাজার ৫২১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। এরমধ্যে ২৭ জন দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা যান।
এরই ধারাবাহিকতায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি দেখা যায় সেপ্টেম্বর জুড়েই। এই মাসে আগস্টের তিন গুণ বেশি অর্থাৎ ১৮ হাজার ৯৭ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এরমধ্যে ৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মারা যান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বোচ্চ সাত হাজার ১৩৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ছয় হাজার ৭৩ জন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের বাইরে তিন হাজার ৯০২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?
সাম্প্রতিক সময়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক জরিপে দেখা যায়, আগস্টের তুলনায় ঢাকার দুই সিটিতে চলতি মাসে এডিসের বংশবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। দুই সিটির ব্রুটো ইনডেক্সও (লার্ভা বা শূককীটের ঘনত্ব) আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে বেড়েছে। কিন্তু রাজধানী বা এর বাইরে এডিস মশার ঘনত্ব আসলে কত তা বোঝার উপায় নেই, কারণ কোনো জরিপ নেই।
আর তাই এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার সারাবাংলাকে বলেন, এডিস মশা নিধনে হটস্পট ব্যবস্থায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। যদি পরিস্থিতি এমনই থাকে তবে অক্টোবরে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হয়ে বরং খারাপের দিকেও যেতে পারে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী যেসব এলাকা থেকে বেশি আসে, সেখানে কার্যকরী ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। দরকার হলে সেখানে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে উড়ন্ত মশাগুলোকে মেরে ফেলতে হবে। এতে এক রোগী থেকে অন্য রোগী আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে আসে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। যদি এমনটা না হয় তবে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার সব জায়গায় ডেঙ্গু রোগীর হার সমান নয়। যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি, সেখানে মশক নিধনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। মাইকিং, জনসচেতনতা, ওষুধ ছিটানো— সবকিছু একসঙ্গে করতে হবে। এমনটা না করতে পারায় এখন পর্যন্ত জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু।
এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ ঘটানো জরুরি বলেও পরামর্শ দেন এই কীটতত্ত্ববিদ।
কবিরুল বাশার বলেন, এখন কিন্তু ডেঙ্গু শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি সারা দেশেই ছড়িয়েছে। আর তাই সারা দেশেই স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে। না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকেও সম্পৃক্ত হতে হবে। বাসা বাড়ি বা আশপাশে যেন পানি জমা না থাকে, পানি জমার মতো কোনো পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়, কোথাও যেন পরিত্যক্ত টায়ার বা কোনো ধরনের পাত্র পড়ে না থাকে, এই বিষয়ে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
বর্ষাকালে সাধারণত এডিসের বিস্তার ঘটে এবং ডেঙ্গু ছড়ায়। তবে ২০২২ সালে অক্টোবর মাসে দেশে ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবারও ডেঙ্গু পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তিনি এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে জরুরি ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনগুলোর নিজস্ব তাগিদে জরিপের তাগিদ দেন।
এডিসের প্রকোপ বাড়লেও মোকাবিলার দিকনির্দেশনা নেই
চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়তে শুরু করে বর্ষা মৌসুম শুরুর পরেই। তবে অন্যান্য বছর হলেও চলতি বছর এডিসের প্রকোপ বাড়লেও কোনো জরিপ না করার ফলে পরিস্থিতি জানা যায় নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ-নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. বেনজির আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, দেশে প্রতিবছর এডিস মশার জরিপ শুরু হয় ২০১৩ সাল থেকে। তবে তখন বর্ষা–পূর্ব সময়ে একবারই জরিপ হতো। পরবর্তীতে ২০১৯ সাল থেকে বছরে তিনবার জরিপ শুরু হয়।
তিনি বলেন, তিনবার জরিপ শুরু করার ফলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রভাব বোঝাটা সহজ হয়ে উঠেছিল। আগাম প্রস্তুতি নেওয়ারও সুযোগ ছিল। কিন্তু এবার বর্ষাকালে কোনো জরিপ করা হয়নি। ফলে আসলে কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ আর কোনটা কম ঝুঁকিপূর্ণ তা বোঝার কোনো উপায় নেই এবার। এ কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়েও দ্বিধায় পড়তে হচ্ছে সবাইকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘অপারেশনাল প্ল্যান বা ওপি’র আওতায় এডিস মশার জরিপ করা হয়ে থাকে। সর্বশেষ পাঁচ বছর মেয়াদের ওপি শুরু হয় ২০১৭ সালে যা শেষ হয় ২০২২ সালে। এর পরের দুই বছর আগের ওপি’তে কাজ চালানো হয়। তবে এর মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের জুন মাসে। এরপর নতুন করে ওপির জন্য একাধিক সভা এবং পরিকল্পনাও হয়; কিন্তু জুলাই মাসে শুরু হওয়া আন্দোলনের কারণে আর ওপি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। আর এতে অন্তর্ভুক্ত ডেঙ্গুর জরিপও হয়নি।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ঘিরে শুরু হওয়া আন্দোলনের পরে স্তিমিত হয়ে পড়ে মশা নিধন কর্মসূচি। পরবর্তীতে৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার কয়েকটি ওয়ার্ড কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এ সময় মশা নিধনের সামগ্রী এবং কোথাও কোথাও ওষুধও নষ্ট করে ফেলা হয়।
এসব ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোস্তাক আহমেদ।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়। এটি জনস্বাস্থ্যের জটিল বিষয়। এর সঙ্গে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, নগর ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সচেতনতা ইত্যাদি বিষয় জড়িত। এটি বুঝতে পারলে জরিপের মতো বিষয়কে পাশ কাটানো যেত না।
তিনি আরও বলেন, দেশে কিন্তু এখনো থেমে থেমে বৃষ্টির পর তাপমাত্রা বাড়ছে। এমন আবহাওয়া এডিস মশার জন্য উপযোগী। তাই ডেঙ্গু পরিস্থিতি অক্টোবরে বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়বে। আর তাই আমাদের মশা নিধন কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
ডা. মোশতাক বলেন, এ বছর শুধুমাত্র প্রাক বর্ষা একটা জরিপ হয়েছে। ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে বলা যায় সিটি করপোরেশন প্রায় অকার্যকর অবস্থায় আছে। এমনকি এবার জরিপ কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়ারও কেউ নাই। ফলে মশার লার্ভা কোথায় কতটুকু আছে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য কারো কাছে নেই।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্টদের এ ধরণের জরিপ প্রোগ্রাম সমন্বিতভাবে সারা দেশে করা দরকার। কারণ বর্ষায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে রোগী। এই কাজে ছাত্রদের সম্পৃক্ত করা উচিত। এর ফলে সামাজিকভাবেও উপকৃত হওয়া যাবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ-নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, আমরা জরিপের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। এর জন্য অর্থের সংস্থান বা পরিকল্পনা তো মন্ত্রণালয়ই করে থাকে। তবে বর্ষার জরিপের জন্য কোনো তাগাদা দেওয়া হয়নি। পরবর্তী জরিপের জন্যও এখন পর্যন্ত তাগাদা নেই।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার বিভাগের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত
চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ছয় সদস্য বিশিষ্ট দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনে প্রশাসককে আহ্বায়ক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সদস্য সচিব করে গঠিত কমিটিতে তিন জন বিশেষজ্ঞকে সদস্য করা হয়েছে। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের দুই প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে কাজ করবেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম)’র অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ গোলাম ছারোয়ার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্টোমোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রাশেদুল ইসলাম এবং কীটতত্ত্ববিদ মো. রেজাউল করিম। অপর কমিটিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের হয়ে কাজ করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. শেফালি বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্টোমলজিস্ট ড. তানজিন আক্তার এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফিরোজ জামান।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ সম্মেলন কক্ষে দেশব্যাপী ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধকল্পে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ. এফ. হাসান আরিফ বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উভয় পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতির সুপার পিক সিজনে আছি। আমি আশা করি, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি দুটি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
সভায় জানানো হয়, ঢাকায় ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ হতে নাগরিকদের রক্ষাকল্পে মশার প্রজননস্থল বিনষ্টকরণ, লার্ভা ও মশক নিধন কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃক এ বছর আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ১৭ হাজার ৬৪৮টি স্থান পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকৃত স্থানে লার্ভা পাওয়া গেছে সাত হাজার ১৯৫টি স্পটে। প্রজননস্থল ধ্বংস ও লার্ভিসাইড স্প্রে করা হয়েছে দুই লাখ ৭৩ হাজার ৫৩৮টি স্পটে। মশক নিধনে ৩৭ হাজার ৫০৫টি নোভালুরন ট্যাবলেট প্রয়োগ করা হয়েছে।
সভায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানান, গড়পড়তা কার্যক্রম গ্রহণ না করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হটস্পট চিহ্নিত করে মশক নিধন কর্মসূচি নিতে হবে। শুধু সিজনভিত্তিক নয়, সারাবছরই মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রাখতে হবে। যেসব স্থানে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে সেখানে প্রকৃত অর্থে মশা ও লার্ভা বিনষ্ট হয়েছে কিনা তা এন্টোমোলজিস্ট দিয়ে নিরূপণ করতে হবে। দুই সিটি কর্পোরেশনসহ আন্তঃমন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কাজের সমন্বয় দরকার। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ তথা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। সর্বোপরি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
সারাবাংলা/এসবি/ইআ