দুর্গাপূজার মধ্যে পরীক্ষা, জবি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০৭
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) কিছু বিভাগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ জানিয়েছেন জবি শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার সময়সূচি পুনর্নিধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো বলছে, একাডেমিক ক্যালেন্ডার দেখে পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নেবেন। আর সদ্যই দায়িত্ব পাওয়া জবি উপাচার্য বলেছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারম্যানরা চাইলে এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারে দুর্গাপূজা উপলক্ষে ছুটি শুরু ১৩ অক্টোবর, বিজয়া দশমীর দিন থেকে। কিন্তু মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু ৯ অক্টোবর। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতাও সর্বজনীন এই শারদীয় দুর্গোৎসবের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। কিন্তু দশমীর আগের দিনগুলোতে জবির আইন, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন, গণিত ও অণুজীব বিজ্ঞানসহ কয়েকটি বিভাগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
জবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, দুর্গাপূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের কাছে এই উৎসবটি ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা থাকলে এই উৎসবটিতে তাদের অংশগ্রহণ সম্ভব না, যা ধর্মীয় আচার পালনে প্রতিবন্ধকতার সামিল।
জবি শিক্ষার্থী টুম্পা দাশ বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব সনাতনীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। প্রতিটি সনাতনী একরাশ আবেগ নিয়ে সারা বছর এই পূজার প্রতীক্ষায় থাকে। এই সময়ে পরীক্ষা নেওয়াটা কতটা যৌক্তিক, আমার জানা নেই। কারণ পরীক্ষার সময়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীই মানসিকভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। এমন উৎসবমুখর দিনগুলোতে পরীক্ষা নেওয়া হলে আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের সারা বছরের আবেগঘন এই প্রতীক্ষার আনন্দ-উল্লাস থেকে বঞ্চিত করা হবে।
আরেক শিক্ষার্থী তন্ময় সাহা তলিন বলেন, প্রতি বছর পাঁচ দিনব্যাপী এই পূজা উদ্যাপিত হয়। এমন একটি উৎসবে সবাই চায় পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে। আমরাও ব্যতিক্রম নই। সেই পূজার মধ্যে পরীক্ষা দেওয়াটা কতটা যুক্তিযুক্ত, সে িপ্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা যারা পরিবার ছেড়ে দূরে থাকি, এই পূজার দিনে ঢাকায় বসে কীভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় বসতে পারব, সেটি নিশ্চয় বিবেচনা করা উচিত।
জবি কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাই মাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশে ফিরে আসে। এ অবস্থায় বন্ধের সময়কার ক্ষতি কাটিয়ে সেশন জটের আশঙ্কা থেকে দূরে থাকার জন্যই বেশির ভাগ বিভাগ দ্রুত পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে।
জবি আইন অনুষদের ডিন খ্রিস্ট্রিন রিচার্ডসন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডারের সময়সূচি দেখে আমরা পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করেছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে আমরাও নেব।
জবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. পরিমল বালা বলেন, আগেও পূজার সময় পরীক্ষা হয়েছে। তবে সমস্যা হলে শিক্ষার্থীরা বিভাগের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বললে তারা বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।
জানতে চাইলে দুই সপ্তাহ আগে নিযুক্ত জবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়টি পুরোটাই বিভাগের চেয়ারম্যানদের ওপর নির্ভর করে। তারা বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।
সারাবাংলা/টিআর