মাছ শিকারে ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগ
৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১৬
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের হাওরকে বলা হয় খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার। হাওর থেকে প্রতি বছর উৎপাদিত হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ধান। ফসলে সমৃদ্ধ হলেও হাওরপাড়ের মানুষদের দিন কাটে বন্যার আতঙ্কে। সেই আতঙ্ক দূর করে হাজার কোটি টাকার ফসলকে তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে। বাঁধ মজবুত করতে হাওরপাড়ে ফেলা হয় মাটিও। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী চক্র প্রতি বছরই ফসল রক্ষা বাঁধ কেটে অবৈধভাবে মাছ শিকার করে থাকে। বাঁধের ব্যাপক ক্ষতি করার সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে এ বছরেও।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের নিয়ামতপুরের পাশে রক্তি নদীর পাড়ে বাঁধ কেটে মাছ শিকার করছে তেমনই এক প্রভাবশালী চক্র। বুড়িডাক্কুয়া হওয়রের ফসল রক্ষা বাঁধের প্রায় ১৫০ ফুট কেটে মৎস্য আহরণ চলছে সেখানে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে বাঁধ দুর্বল হচ্ছে। অন্যদিকে হাওরের পানি নদীর সঙ্গে মিশে যাওয়ায় হাওরে পলি পড়ে নষ্ট হচ্ছে ধানি জমি। তিনটি উপজেলার শেষ সীমানা নিয়ে গঠিত হাওরটিতে আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকদের জমি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কৃষকরা বাধা দিলেও নিয়ামতপুর গ্রামের প্রভাবশালী চক্রের প্রধান মুজিব মিয়ার নেতৃত্বে রাতের আঁধারে বাঁধ কেটে দেওয়া হয়। পরে তারা বাঁধের মধ্যেবর্তী স্থানে বাঁশের চাটাই দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে মাছ আহরণ শুরু করে। অবৈধ এই কার্যক্রমের ফলে বাঁধের ক্ষতি হওয়ায় আগামী বছর মেরামতের খরচ বাড়বে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। আবার হাওরের সব মাছ পানির বেগে বাঁধের কাটা অংশের দিকে ধাবিত হওয়ায় হাওরের মৎস্যজীবীরাও মাছ পাচ্ছে না পরিমাণমতো।
সার্বিক পরিস্থিতিতে জনস্বার্থ বিবেচনায় ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক মিয়া লিখিত অভিযোগ করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। উপজেলা প্রশাসন অভিযোগ পেয়ে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ঘটনায় কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে অভিযোগ দেওয়ায় অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুককে গালিগালাজ কেবল নয়, প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত নিয়েছেন গৌরারং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা আয়না মিয়া। এ হুমকির মোবাইল রেকর্ডও রয়েছে।
হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আয়না মিয়া বলেন, ‘বন্যায় বাঁধ ভাঙছে। বাঁধ কাটার প্রশ্নই ওঠে না। এগুলা মিথ্যা কথা। ফারুক আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে, সব মিথ্যা।’ পালটা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সে আমাকে গালিগালাজ করেছে, আমিও তাকে গালিগাজ করেছি। এই বাঁধটি সদর উপজেলায় পড়েছে। কিন্তু সে বিশ্বম্ভপুর উপজেলার হয়েও এখানে সাধারণ মানুষের কাছে চাঁদা দাবি করেছে।’
জানতে চাইলে সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) সুকান্ত সাহা বলেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। অভিযোগের কাগজপত্র আমাকে দিন। দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, ‘আমি তো লোক পাঠিয়েছি।’ পরে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
সারাবাংলা/টিআর
অবৈধভাবে মাছ শিকার ফসল রক্ষা বাঁধ মাছ শিকার সুনামগঞ্জ সুনামগঞ্জের হাওর