বিঘায় লাভ লাখ টাকা, চুয়াডাঙ্গায় ওলকচুর ফলন ৭ কোটি
৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:১৮
চুয়াডাঙ্গা: একসময় খুব একটা কদর না থাকলেও এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন সবজি ওলকচুর চাহিদা এখন কম নয়। এদিকে এই সবজি আবাদে খরচ কম, বিপরীতে লাভ বেশি— প্রতি বিঘায় লাখ টাকা। কৃষি বিভাগ তাই ওলকচুর বাণিজ্যিক আবাদে উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছে। সেই উৎসাহ ছড়িয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গাতেও। জেলায় এ বছর আবাদ করা ওলকচুর ফলন ভালো হয়েছে, এরই মধ্যে বিক্রি হতে শুরু করেছে হাটবাজারে। চলতি মৌসুমে জেলায় উৎপাদিত ওলকচুর বাজার হতে পারে সাত কোটি টাকা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১২১ হেক্টর জমিতে ওলকচুর চাষ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে আলমডাঙ্গা উপজেলায়— ৬২ হেক্টর। দামুড়হুদা উপজেলায় ২৯ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ওলকচু। আর সদর ও জীবননগর উপজেলায় ওলকচুর আবাদ হয়েছে ১৫ হেক্টর করে জমিতেদ। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলার প্রদর্শনী প্লট ছাড়াও চাষ হয়েছে মাদ্রাচি ওলকচু।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক রহিমা খাতুন জানান, তিনি আলমডাঙ্গা কৃষি কার্যালয় থেকে ১০ শতক জমিতে ওলকচু চাষের প্রদর্শনী প্লট নিয়েছিলেন। ওলকচু চাষের জন্য কৃষি কার্যালয় তাকে দুই বস্তা জৈবসার, ৯ কেজি পটাশ, ৯ কেজি ড্যাপ সার ও দুই বস্তা ওলকচুর বীজ দিয়েছিল।
রহিমা খাতুন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কৃষি অফিসের সাহায্যে ওলকচুর আবাদ শুরু করেছিলাম। ভালো ফলন হয়েছে। ওলকচু ক্ষেত থেকে তোলা শুরু হয়েছে। একেকটি ওলকচুর ওজন হয়েছে তিন কেজি থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের জিয়াউর রহমান লাল্টু ওলকচুর আবাদ করছেন কয়েক বছর ধরেই। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া ওলকচু চাষের উপযোগী হওয়ায় এবার খুবই ভালো ফলন হয়েছে। ওলকচু ক্ষেত থেকে তোলা শুরু হয়েছে। ওজন হয়েছে সাড়ে তিন কেজি থেকে পাঁচ কেজি।’ তার দেখাদেখি নবীননগরে আরও অনেক কৃষকই ওলকচুর চাষ করছেন বলে জানালেন তিনি।
কৃষকরা বলছেন, অন্যান্য ফসলে সার লাগে, সেচ লাগে, শ্রমিক লাগে। কিন্তু ওলকচু চাষ করার জন্য কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী প্লট দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, পরিচর্যা করার জন্য আড়াই হাজার টাকা সহযোগিতাও মেলে।
গত বছরের হিসাব দিয়ে জিয়াউর রহমান লাল্টু জানান, গত বছর দুই বিঘা জমিতে ওলকচু ছিল। প্রথম দিকে মণপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া গেছে। পরে কমতে কমতে ওলকচুর দাম ঠেকে ২৮০০ টাকা মণে। তারপরও ওলকচু বিক্রি করে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে ওলকচুর আবাদ তার। বাজার-ফলন দুই-ই ভালো হওয়ায় এ বছর আরও বেশি লাভের আশা করছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গায় ওলকচু চাষে খ্যাতি অর্জন করেছেন ছলিম উদ্দীন। তিনি জানান, ওলকচু সাধারণত বাংলা চৈত্র মাসের শেষ ও বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে রোপণ করা হয়। বিঘা প্রতি আড়াই শ গ্রাম ওজনের ওলকচুর বীজ প্রয়োজন হয় সাত থেকে আট মণ, ৫০০ গ্রাম ওজনের ওল হলে বীজ লাগে ১০ মণ, ১ থেকে ২ কেজি ওজনের ওলের বীজ আরও বেশি। ওলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বীজের দামও বেড়ে গেছে বলে জানান এই কৃষক। বলেন, নিজের বীজ থাকলে ওলকচু চাষ অনেক লাভজনক হতে পারে।
ছলিম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ওলকচু রোপণের সময় ১০ মণ বীজের দাম পড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ওলকচুর উৎপাদন নির্ভর করে বীজের আকারের ওপর, প্রতি বিঘায় ৭০ থেকে ১০০ মণ পর্যন্ত হতে পারে। জমি থেকে বর্তমানে ওলকচু বিক্রি করা হচ্ছে ১৩০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে। খুচরা বাজারে ওলের কেজি ৫০ টাকা কেজি দরে। নিজের বীজ থাকলে বিঘায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচে এক লাখ থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকার ওল বিক্রি করা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কারণে এখন মানুষের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কচুজাতীয় ফসলের সংযোজন আবশ্যক হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে এই সবজির আবাদ নিরাপদ। কৃষি বিভাগ থেকে তাই ওলকচুর আবাদে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’
এই কৃষি কর্মকর্তা জানাচ্ছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ওলকচু বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ২১ থেকে ২২ মেট্রিক টন ওলকচু উৎপাদন হচ্ছে।
উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘পাইকারিতে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে ওলকচু। খুচরা বাজারে দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। বাজারের এই দর অব্যাহত থাকলে চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে আবাদ করা ১২১ হেক্টর জমি থেকে সাত কোটি টাকার ওলকচু বিক্রি হতে পারে।’
সারাবাংলা/টিআর