কাঁচা বাজারে অস্থিরতা, বেসামাল ডিম-মুরগির বাজার
৪ অক্টোবর ২০২৪ ১২:১৯
ঢাকা: রাজধানীর কাঁচা বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। নিত্য পণ্যের বাজার অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যেবিত্তের আমিষের অন্যতম যোগানদাতা ডিম-মুরগির বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। সবজির বাজারও হয়ে পড়েছে নিয়ন্ত্রণহীন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁও, শ্যামলী ও কল্যাণপুরের কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাজারে ফার্মের বাদামী রঙের ডিম ডজন প্রতি ১০-১৫ টাকা বেড়ে ১৭০-১৭৫ টাকা, ব্রয়লার মুরগি একদিনের ব্যবধানে ২০ টাকা বেড়ে ২১০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে, ১৫ সেপ্টেম্বর প্রাণিসম্পদ অধিদফতর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দর ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, প্রতি ডজন প্রায় ১৪৩ টাকা এবং বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা ও সোনালী জাতের মুরগির দাম ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু বাজারে ফার্মের মুরগির বাদামী ডিম সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে ডজন প্রতি ৩০-৩৫ টাকা বেড়ে ১৭০-১৭৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি ৩০-৪০ টাকা বেশি দামে ২১০ থেকে ২২০ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়।
শুক্রবার শ্যামলীর ডিম বিক্রেতা আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার সারাবাংলাকে বলেন, ডিমের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। আজ ১৭৯-১৭৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি করছি। ডিমের বাজারে আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের পাইকারি পর্যায়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই বেশি দামে বিক্রি করছি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিএনপি বাজারে মুরগি বিক্রেতা মোহাম্মদ রুমান মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আজ ব্রয়লার ২০০-২১০ টাকা, সোনালি জাতের মুরগির দাম ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
আগারগাঁওয়ের এক মুরগি বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, গতকাল ব্রয়লার ছিল ২০০ টাকা, আজ তা হয়ে গেছে ২২০ টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব! নিত্য পণ্যের বাজারে নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো প্রয়োজন মনে করেন তিনি।
এদিন লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
আজ বাজারে ঘুরে দেখা যায়-বেগুন, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা, বরবটি, বেগুন, টমেটো, গাজর, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঝিঙ্গা কাঁচা, করলাসহ আরও কয়েকটি কয়েকটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শ্যামলীর কাঁচাবাজারে কথা হয় রহিম মিয়া নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এ সপ্তাহেও ডিম-ব্রয়লার মুরগির দাম আরও বেড়েছে। এভাবে হঠাৎ করে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিলে আমাদের বিপদে পড়তে হয়। গত সপ্তাহে যে ডিম কিনেছি ১৬০ টাকা ডজন আজ তা ১৭০ত থেকে ১৭৫ টাকা হয়ে গেছে। তরকারির দামও বেড়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে আমরা চলব কীভাবে।
শ্যামলীর সবজি বিক্রেতা বিল্লাহ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, আজ বেশিরভাগ শাক-সবজির দাম বেড়েছে। ধনিয়া পাতা ৮০০ টাকা কেজি হয়েছে। কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকার উপরে, বেগুন, গাজর, টমেটো করলা বরবটির দামও বেড়েছে।
করলা ১১০-১২০ টাকা, উস্তা ৯০-১০০ টাকা, সাদা বেগুন ১৩০-১৫০ গোল বেগুন (কালো) ১০০-১৩০, লম্বা বেগুন ১১০-১২০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১১০, বরবটি ১৪০-১৫০ টাকা, পটল ৬০-৭০, ঢেঁড়স ৭০-৮০, শসা ৬০-৭০টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। টমেটো ১৮০-২০০, গাজর ১৮০-২০০ টাকা, কাঁচা মরিচ (ভালো মানের) ৪০০-৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিন ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ৭০-৮০ টাকা, মিস্টি কুমড়া ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, আলু ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
জালি কুমড়া (প্রতি পিস) ৭০-৮০ টাকা, পাতি লাউ (মাঝারি আকারের প্রতি পিস) ৭০-৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি আঁটি লাউশাক ও পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। লেবু (মাঝারি আকারের) ২০-৩০ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা যায়।
এদিন বাজারে দেশি পেঁয়াজ ১২০-১২৫ টাকা, রসুন ২২০-২৪০ টাকা, আদা ৩০০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে দেড় কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের রুই মাছ ৩৬০-৪০০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি, সিং ৪০০-৪৫০ টাকা, গুলশা ৭৫০-৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাঝারি ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে হতে দেখা যায়। মাঝারি সাইজের তেলাপিয়া, পাঙাস, সিলভার কার্প ও চাষের কই কেজিপ্রতি ২২০-২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আজ এক কেজি বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশ ১৮০০-২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
শুক্রবার ফার্মের মুরগির বাদামী ডিম ১৭০-১৭৫ টাকা ডজন এবং ফার্মের মুরগির সাদা ডিম ১৬০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এদিন হাঁসের ডিম ৮০ টাকা হালি এবং কোয়েল পাখির ডিম ৫০ টাকা ডজন দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
আজ বাজারে গরুর মাংস কেজি প্রতি ৭৫০-৭৮০ টাকা এবং খাসি ১০৫০-১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে মাছ মাংসসহ সব ধরনের শাক-সবজির দাম বাজারভেদে ২০-৩০ টাকা পর্যন্ত কম বেশি হতে পারে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/ইআ