রাজধানী জুড়ে জলাবদ্ধতা, পথে পথে ভোগান্তি
৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৩২
ঢাকা: রাজধানীর মতিঝিল মেট্রো স্টেশন থেকে যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। সেই পানির মধ্য দিয়ে হেলে-দুলে চলছে ছোট-বড় গাড়ি। যে কয়টি রিকশা চলতে দেখা গেছে, তার কোনোটির সিটে বসে চালানোর সুযোগ নেই। তাই যাত্রীরা সিটে বসে পা তুলে আছে, আর চালক রিকশা টেনে নিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। যারা যানবাহন না পেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তাদের পরিণতি আরও ভয়াবহ। পানিতে হাঁটার অভ্যাস না থাকায় কখনও পা পড়ছে গর্তে, আবার কখনও উঁচুতে। টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে এখন অচেনা লাগছে রাজধানীর অধিকাংশ পথ-ঘাট। বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সেই পানিতে ডাস্টবিনের ময়লা ভেসে ওঠায় হাঁটার পরিস্থিতিও নেই। পথচারীরা বলছেন, সরকার আসে সরকার যায়, রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ কমে না।
শনিবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, আরামবাগ, মানিকনগর, বাসাবো, খিলগাঁও, মুগধা, গোপীবাগ, টিকাটুলি, ওয়ারি, মধুবাগ, কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, বাংলামোটর, মিরপুরের কিছু অংশ ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার মূল সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতেও হাঁটু পানি। পানি ঢুকে পড়েছে দোকান-পাট, বাসা-বাড়ির বেজমেন্টেও।
বাসিন্দারা জানান, রাতে যে পানি উঠেছে তা ১২ ঘণ্টায়ও নামেনি। গোপীবাগের বিন্দুগলির প্রোপার্টি ডিলাইটের কেয়ারটেকার আব্দুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘গ্যারেজে পার্ক করে রাখা গাড়ির মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি লিফট পর্যন্ত চলে এসেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘১২ ঘণ্টা হতে চলল পানি নামার নাম নেই। আমরা বেজমেন্টে ঘুমাই। আমাদের রুমে পানি উঠেছে। আজ কোনোভাবে ঘুমানোর উপায় নেই।’
অনিন্দিতা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক দিলশাদ বলেন, ‘এই এলাকায় আগে এত খারাপ পরিস্থিতি ছিল না। পানি উঠতো, কিন্তু নেমে যেত। এবার সিটি করপোরেশনের খবর নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পানি ধীরে নামছে। এর পর এই পানি থেকে হবে ডেঙ্গু।’ হাটখোলা এলাকার নীড় অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্য সময় সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে ড্রেনের ঢাকনাগুলো খুলে দেয়। এবার কোনো লোকই দেখিনি।’
এদিকে, মতিঝিল মেট্রো স্টেশন থেকে নামতেই দেখা গেল বিশাল জলরাশি। কোথাও হাঁটু পানি জমে গেছে। যানবাহন সংকটে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন পানির মধ্যেই। দুয়েকটা যারা পাচ্ছেন সেখানেও গুনতে হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ বেশি ভাড়া। যানবাহন না পেয়ে কেউ কেউ হাঁটু পানি পেরিয়েই রওনা হয়েছেন। মিরপুর থেকে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘পানির মধ্যে হাঁটার অভ্যাস নেই। তার ওপরে রাস্তা খারাপ। পায়ের তলায় কী কী আটকে যাচ্ছে বলতে পারছি না। কখন দুর্ঘটনা ঘটে ঠিক নেই।’
মেট্রোর যাত্রী সাবিহা আলম বলেন, ‘মেট্রোতে থাকতে বুঝিনি যে, এদিকে এমন পরিস্থিতি। এখন কীভাবে যে ঘরে পৌঁছাবো। দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। মতিঝিল থেকে গোপীবাগ বা মানিকনগরে রিকশা ভাড়া ৫০ টাকা। পানি দেখে সেখানে ভাড়া চাচ্ছেন ১০০ টাকা।’ রিকশাচালক মোমিনুল বলেন, ‘পুরা রাস্তা পানিতে ঢাকা। গাড়ি চালানোর সুযোগ নাই। রিকশা টেনে নিয়ে যেতে হবে।’
এদিকে, রাস্তায় অতিরিক্ত পানি জমে থাকায় পথে পথে বাস সিএনজি নষ্ট হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সব যানবাহনের চালকরা বলছেন, ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গাড়ি বিকল হয়ে গেছে। আজ ইনকাম তো দূরের কথা উল্টা গচ্চা দিতে হবে। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নতুন বিষয় নয়। কিন্তু অন্যান্য সময় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সিটি করপোরেশন থেকে দ্রুত পানি নামানোর ব্যবস্থা করা হয়। নগরবাসীর অভিযোগ, এবার সেটা করতে দেখা যায়নি।
মতিঝিল শাপলা চত্বরের কাছে একটা বড় গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়েছে রাস্তার ওপর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওভাবেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশেন প্রশাসককে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া, ভারী বর্ষণজনিত কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ী এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনাও রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম