অবশেষে অনুমোদন পাচ্ছে কালুরঘাট সেতু প্রকল্প
৭ অক্টোবর ২০২৪ ১০:১৬
ঢাকা: চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ওপর জরাজীর্ণ রেলসেতুটির বয়স শত বছর। বয়সের ভারে ন্যুব্জ যাকে বলে, সেতুটির অবস্থাও ঠিক তেমন। অথচ বোয়ালখালী-পটিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের একাংশের নগরের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এই সেতু। ১৯৯১ সাল থেকে অনুষ্ঠিত প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ওই সংসদীয় আসনে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির কেন্দ্রবিন্দু সেই কালুরঘাট সেতু নির্মাণ। তবে সেই প্রতিশ্রুতি আলোর মুখ দেখেনি তিন দশকেও।
অবশেষে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুতে অর্থায়ন নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সরকারের ঋণচুক্তি হয়েছিল গত জুনেই। তারপরও সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে তৈরি করা প্রকল্পটি নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল, আশঙ্কা ছিল আটকে যাওয়ার। সেই অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার তথ্যই মিলেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রের তথ্য বলছে, শেষ পর্যন্ত অনুমোদন পাচ্ছে ‘চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু নির্মাণ প্রকল্প’। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বৈদেশিক ঋণচুক্তি থাকায় প্রকল্পটি আজ সোমবার (৭ অক্টোবর) অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে আরও ১২টি প্রকল্পের সঙ্গে। বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে বলেই ইঙ্গিত মিলেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, প্রকল্পটি অনেকদিন আগেই পুনর্যাচাই-বাছাই করে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে পরিকল্পনা উপদেষ্টার দফতরে পাঠানো হয়েছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ প্রকল্পটি সেখানে আটকে ছিল। পরে সেটি একনেকে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে ‘কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়। এর মোট ব্যয় ধরা হয় ১১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এর প্রায় দুই-তৃতীয়াং, সুনির্দিষ্টভাবে সাত হাজার ১২৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা আসবে বৈদেশিক ঋণ থেকে। বাকি চার হাজার ৪৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খরচ হবে সরকারি তহবিল থেকে।
প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পটির জন্য কোরিয়ার ইকেনোমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট প্রমোশন ফ্যাসিলিটি (ইডিপিএফ) ফান্ড থেকে ৯ কোটি ১৭ লাখ ডলারের জন্য গত ২৭ জুন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সঙ্গে একটি ঋণচুক্তি সই হয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কালুরঘাট সেতুটি দিয়ে চলাচল এখন ভোগান্তির নাম। সেতুটি দিয়ে ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে ট্রেন চলতে পারে না। ট্রেন চলাচলের সময় সড়ক পথে যান চলাচল বন্ধ থাকে। অথচ সেতুটি চালু হলে বোয়ালখালীসহ আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক মানুষের চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে যোগাযোগ নতুন মাত্রা পাবে। কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগও হবে সহজ। সে কারণেই কালুরঘাট সেতু নিয়ে এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘ দিনের।
এর আগে ১৯৮৬-৮৭ সাল ও ২০০৪-০৫ সালে দুই দফায় সেতুটির ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছিল। সবশেষ গত বছরের আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সংস্কার কার্যক্রম চালানো হয়। তবে এভাবে বারবার সংস্কার করে ধুঁকে ধুঁকে নয়, কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের মাধ্যমে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের সুবিধার দাবিই ছিল ওই এলাকা মানুষের।
২০১২ সালে প্রথম কালুরঘাট সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। ওই সময় বাংলাদেশ সরকার কোরিয়া সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তার অনুরোধ জানালে কোরিয়া ঋণ দিতে সম্মত হয়। ২০১৮ সালে ৭ আগষ্ট প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে অনুমোদন না দিয়ে রেল ও সড়ক সেতুর জন্য আলাদা নকশা করে পুনরায় উপস্থাপনের সুপারিশ দেয় একনেক।
পরে ২০১৯ সালে বিআইডব্লিউটিএ কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট পয়েন্টে রেল কাম রোড সেতুর জন্য নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স ১২ দশমিক ২ মিটার করায় কোরিয়া আবার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে। নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী ডুয়েলগেজ রেল সেতুতে ডাবল লাইন এবং দুই লেন সড়ক পথের সংস্থান রাখা হয়।
প্রস্তাবিত নতুন নকশা অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান রেলসেতুর ৭০ মিটার উজানে নতুন সেতু নির্মিত হবে। সেতুর দুই পাশে দুই লেন করে চার লেনের সেতু তৈরি করা হবে। এক পাশে চলবে ট্রেন, অন্যপাশে চলবে বাস-ট্রাকসহ সাধারণ যানবাহন। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার। পানি থেকে সেতুর উচ্চতা ১২ দশমিক ২ মিটার। ভায়াডাক্টসহ সেতুর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ছয় কিলোমিটার। সেতু নির্মাণ, ভায়াডাক্ট, অ্যামব্যাঙ্কমেন্ট, সড়ক ভায়াডাক্ট ও রেল ট্র্যাক স্থাপনের কাজগুলো রয়েছে প্রকল্পের আওতায়।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর