‘আবরার ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার প্রতীক’
৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২২
ঢাবি: ছাত্রলীগের হাতে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আমাদের দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর পলাশীতে আবরার ফাহাদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আখ্যা দেন। আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ‘আগ্রাসন বিরোধী আটস্তম্ভ’ পুনঃনির্মাণ করতে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়।
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘তিতুমীরের মতো শতবছর পরও আমরা আবরারকে বীর হিসেবে স্মরণ করতে চাই। অন্যদিকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদের আইকন। সে কারণে আমি সরকারের প্রতি দেওয়া আমার ৭ দফা দাবিতেও বঙ্গবন্ধু এভিনিউর নাম পরিবর্তন করে আবরার এভিনিউ করার কথা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তী সরকার না হতে অনুরোধ করেছিলাম তারা এখানে ভুল করেছে। আপনারা বিপ্লবী সরকার হোন। শেখ হাসিনার সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে দেন। পরের নির্বাচিত সরকার এসে বিপ্লবের মর্মবাণী অনুযায়ী নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে।’
ঠিক পাঁচ বছর আগে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রাণ দিতে হয় বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের। ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর প্রথম এই স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে ছাত্রলীগের নেতারা স্তম্ভটি গুড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ চার বছর পর তা পুনঃর্নিমাণের ভিত্তি স্থাপন করা হয়।
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেন বলেন, ‘আবরার ফাহাদ একক কোনো ব্যক্তি নয়। সে কোটি মানুষের স্বাধীনতার প্রতীক। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে নির্যাতন হয়, বুয়েটের ঘটনা ছিল তার একটি প্রতীক। এখনো এই মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। পলাতকদের গ্রেপ্তার করে খুনিদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কোনো আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দেবে না। ভারতের জনগনের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। আমাদের বৈরি দিল্লির আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে।
এর আগে, বিকেল তিনটায় শাহবাগে নিরাপদ বাংলাদেশ প্লাটফর্মের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আর কোনো ছাত্র যেন নির্যাতনের স্বীকার না হয়, সেজন্য প্রশাসন যেন সচেষ্ট থাকে। সব শিক্ষার্থী যেন নিরাপদে ছাত্রাবাসে থাকতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দলের কারণে যেন কেউ হত্যার শিকার না হয়।’ এছাড়াও তিনি হাইকোর্টে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করে আসামীদের সাজা বহাল রাখার দাবি জানান।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমম্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম, ও এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বক্তব্য দেন।
আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমাদের মধ্যে ট্যাগ দেওয়ার একটি মানসিকতা প্রবেশ করানো হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটলে সবাই আগে প্রমাণে ব্যস্ত হতো যে সে শিবির। এই মানসিক পরিবর্তনের জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। এসময় আবরার ফাহাদ হত্যায় জড়িতদের কেউ যেন ছাড় না পায় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আগামী একশ বছর জেল খাটলেও আওয়ামীলীগের অপকর্মের নিষ্পত্তি হবে না। আওয়ামীলীগের বিচার নিশ্চিতের পর ছাত্র-নাগরিক সিদ্ধান্ত নেবে, তাদেরকে পুনর্বাসিত করা হবে কি না।’ এছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করে সংবিধান বাতিলের দাবি জানান তিনি।
সারাবাংলা/এআইএন/এইচআই