সহিংসতার ১৯ দিন পর রাঙ্গামাটি পরিদর্শনে পার্বত্য উপদেষ্টা
৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:১১
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ১৯ দিন পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। ঘটনার পরপরই উপদেষ্টা রাঙ্গামাটিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করলেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করায় সমালোচিত হয়েছিলেন।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয় পরিদর্শন শেষে উপদেষ্টা সহিংসতার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বের হন। এর আগে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার অফিস কক্ষে কথা বলেন।
গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর পার্বত্য এই দুই জেলায় গিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারেরর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিন উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে তারা কোনো ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করেই চলে যান। এ নিয়ে অনলাইনে-অফলাইনে আলোচনা-সমালোচনা হয় উপদেষ্টাদের নিয়ে।
পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘সম্প্রীতি সমাবেশ’। ওই সমাবেশে উপদেষ্টাদের ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মংও।
এদিকে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি’ ও ‘নিরাপত্তাহীনতা’র কারণে পাহাড়ে এবার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘কঠিন চীবর দান’ উদ্যাপন না করার ঘোষণা আসে গত রোববার (৬ অক্টোবর)। এরও দুই দিন পর পার্বত্য উপদেষ্টা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছেন।
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হ্যাপির মোড়, এস কে মার্কেট, শেভরন ডায়াগনস্টিক, বনরূপা বাজার, কাটাপাহাড়, কাঁঠালতলী মৈত্রী বিহারসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এ সময় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পরিদর্শন শেষে মৈত্রী বিহারে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দরখাস্ত দিতে বলেছি। ডিসিও (জেলা প্রশাসক) ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দেবেন। আমরা যতটুকু পারি সাহায্য করব। আমরা চাই সঠিক বিচার যেন হয় এবং কোনো হয়রানি যেন না হয়। পাহাড়ি-বাঙালি যেই হোক, দোষীই যেন দোষী হয়— এটাই আমাদের উদ্দেশ্য।’
এ সময় সাংবাদিকরা রাঙ্গামাটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পার্বত্য উপদেষ্টা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে দেখিয়ে ‘জনগণের আস্থা অর্জন রাখার মতো আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা’ বজায় রাখার কথা জানান।
পরিদর্শনে উপদেষ্টার সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কংকন চাকমা, রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান, পুলিশ সুপার ড. এস এম ফরহাদ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কে এস মং, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ রাজুসহ পুলিশ-প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন-গাড়ি পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা। আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) সঙ্গে তার কার্যালয়ে কথাও বলেন।
এর আগে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটির বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা একটি ‘উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন’ তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরীকে আহ্বায়ক করে তিন পার্বত্য জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সদস্য করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিভাগীয় কমিশনার।
এই কমিটির তদন্ত চলাকালেই গত ১ অক্টোবর খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর ফের পাহাড়ি-বাঙালি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সবশেষ ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে বিরত থাকতে অনুরোধ করেছে জেলা প্রশাসনগুলো।
সারাবাংলা/টিআর
পার্বত্য উপদেষ্টা রাঙ্গামাটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সুপ্রদীপ চাকমা