দেশটা কারও একার নয়— পূজা মণ্ডপে ফখরুল
৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:১৮
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের সকলকে নিতে হবে। এই দেশটা কারও একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, তার মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা অসাম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণ করব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
বুধবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপে গিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আমার দলের পক্ষ থেকে, দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই শারদীয় দুর্গাপূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করুক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক-এই প্রত্যাশা করছি।’
তিনি বলেন, ‘যে দেবীর আপনারা আরাধনা করছেন, এই দেবীর আর্বিভাব হয়েছিল অসুরকে বধ করার জন্যে, অন্যায়কে দূর করার জন্য এবং মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার জন্য। হিংসা-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা দূর করে ভালোবাসা-প্রেমের সমাজ নির্মাণ করার জন্য।’
‘আজকে সেই সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা ভয়াবহ দানব শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সঙ্গে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন, সেই ৮ দফা আমরা বিবেচনা করছি। এর যে মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক সহানুভূতি রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল, আমি নাম বলতে চাই না, তারা বরাবরই বলে থাকে- তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণকর্তা। কিন্তু আপনারা যদি দেখেন অতীতে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই ছিল এবং আপনাদের সস্প্রদায়ের মানুষের যত জমি-জমা, সম্পত্তি দখল করে নেওয়া হয়েছে, তার মূলেও তারা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই কথাটা বলতে পারি- আগামীতে আমাদের সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত হবে, আপনারা জানেন এটা আমাদের সরকার নয়, এটা একটা অন্তর্বর্তী সরকার। আমাদের সরকার আসলে প্রতিটি ঘটনার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এই বিশাল পরিবর্তনের ফলে সারা দেশের মানুষ যখন আনন্দিত হয়েছে, যখন পরিবর্তনের একটা আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, আশা তৈরি হয়েছে, সেই সময় দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশি কিছু মিডিয়া, কিছু প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে, যা একেবারেই সত্য নয়। ঘটনা ঘটেনি সেকথা আমি বলব না। কিছু ঘটনা ঘটেছে, তা কোনো সম্প্রদায়িক ঘটনা ছিল না, তা ছিল রাজনৈতিক ঘটনা।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমুখ।
পরে বিএনপি মহাসচিব দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বনানী পূজামন্ডপ পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান। এর আগে, ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামন্ডপে আসেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান। মন্দিরে প্রবেশ করে মির্জা ফখরুল পূজামন্ডপে পরিদর্শন করেন এবং আগত পূর্ণার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।
সারাবাংলা/এজেড/এসআর