গ্রাফটিংয়ে সবজির চারায় নতুন সম্ভাবনা
১৪ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫০
সুনামগঞ্জ: গরম ও অধিক বৃষ্টির জেলা সুনামগঞ্জে সবজি চাষে লোকসানে পড়তে হয় চাষিদের। ক্ষতি এড়াতে নতুন পদ্ধতিতে সবজি চাষ করছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়নের কৃষক শাহ আলম। এক একর জমিতে গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে সবজি চাষ করতে তৈরি করেছেন একটি নার্সারি।
আধুনিক এ পলিশেডে প্লাস্টিক ট্রেপে মাটির পরিবর্তে নারকেলের ছোবড়ায় তৈরি কোকোপিট প্রক্রিয়াজাত ও জীবাণুমুখী করে বীজ রোপণ করা হচ্ছে। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে চারা। এই চারা বৈরী আবহাওয়াও ঠিকে থাকতে পারে। এমনকি উৎপাদনও হয় বেশি। সনাতন পদ্বতিতে উৎপাদিত চারার থেকে এসব চারায় অধিক ও দ্রুত ফলন হয়। এছাড়া, রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হয় না এই চারায়।
উপজেলার পলাশ এলাকায় ধানের জমির পাশে বিশাল আকৃতির পলিশেড নির্মাণ করে টমেটো, লাউ, বেগুন, পেপে, জিঙ্গা, সিসিঙ্গা, করলা, ফুলকপি, বাধাকপি ও মরিচসহ বিভিন্ন সবজির গ্রাফটিংয়ে চারা উৎপাদন করছেন শাহ আলম নামের এই কৃষক।
জানা গেছে, সাধারণ চারা এক থেকে দুই মাস ফলন দিয়ে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। আর গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে করা চারা টানা সাত থেকে আট মাস ফলন দেয়। উৎপাদনও সাধারণ চারা থেকে কয়েকগুণ বেশি হয়। এই পদ্ধতিতে একটি গাছ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ কেজি পরিমাণে সবজি উৎপাদন সম্ভব হয়।
২৫ লাখ টাকা খরচ করে চারা উৎপাদন শুরু করলেও এই মৌসুমে প্রায় ৩৫ লাখ টাকার চারা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে কৃষি উদ্যোক্তা শাহ আলমের। তিন মাস আগে থেকে নার্সারির কাজ শুরু করেছেন তিনি। চারা বিক্রি শুরু করেছেন এক সপ্তাহ হয়। এই এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার চারা বিক্রি হয়েছে।
উদ্যোক্তা শাহ আলম বলেন, এই পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ও নেতিয়ে পড়া রোগ থেকে মুক্ত থাকে চারা। এছাড়াও গরম ও অতিবৃষ্টিতে চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও নেই।
এই মৌসুমে ৩৫ লাখ টাকার চারা বিক্রির প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে শাহ আলম নিজের ৫০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার কোথাও জানিয়েছেন।
এদিকে শাহ আলমের গ্রাফটিং পদ্ধতি’র চারা উৎপাদন নার্সারিতে কাজ করে খুশি স্থানীয় কৃষি শ্রমিকরাও। স্থানীয় উত্তর মজুমদারী গ্রামের বাসিন্দা মোছা. জাহেরা খাতুন বললেন, আগে বাড়ি ঘরের কাজ করতাম। এখন এই নার্সারিতে কাজ করছি। স্বামী সন্তান নিয়ে ভালো ভাবেই চলতে পারছি।
একই গ্রামের বাসিন্দা জুবেদা বেগম বললেন, এই নার্সারিতে তিন মাস ধরে কাজ করছি। শুরুতে কাজে কিছুটা অসুবিধা হলেও এখন হয় না। গ্রাফটিংয়ের পদ্ধতি এখন শিখেছি। এখানে কাজ করে পরিবার নিয়ে ভালো আছি।
শ্রমিক রামিম হোসেন বলেন, এই নার্সারি হওয়ায় আমরা কাজ পেয়েছি। আগে কাজের জন্য অনেক জায়গায় যেতে হয়েছে। নার্সারি হওয়ায় এখন দিনমজুরের কাজ করা লাগে না।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানালেন, সিলেট অঞ্চলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জেলার ১২ উপজেলায় একটি করে পলিশেড স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শাহ আলম নামে একজন কৃষি উদ্যোক্তা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সবজি চাষ করে আসছেন। এবার আমরা থাকে একটি পলিশেড করে দিয়েছি। এই পলিশেডের মাধ্যমে তিনি শীতকালীন সবজিসহ অন্যান্য জাতের সবজির চারা উৎপাদন করেছেন। এরমাধ্যমে তিনি ৩০ থেকে ৪০ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তাকে দেখে বিভিন্ন উপজেলায়ও কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে চারা উৎপাদন করলে রোগবালাই কম হয়। উৎপাদন ও দ্রুত সময়ে ফল পাওয়া যায়। কৃষি উদ্যোক্তা শাহ আলমকে কৃষি অফিস সহযোগিতা করছে বলেও জানান তিনি।
সারাবাংলা/ইআ