Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাঙ্গু নদীতে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ধীরে চলো নীতি

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১০

এই নদীতে একটি সেতুর আকাঙ্ক্ষা চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা। জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ হলেও আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়কের সঙ্গে উপজেলার নেই শতভাগ সংযোগ। এ অবস্থায় চন্দনাইশ উপজেলার একটি বড় অংশের সঙ্গে বান্দরবান জেলার সঙ্গে চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়ক এবং চন্দনাইশ উপজেলা, সাতকানিয়া, লোহাগড়া উপজেলা হয়ে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সাঙ্গু নদীতে একটি সেতুর দাবি দীর্ঘ দিনের।

সাঙ্গু নদীর ওপর সেই সেতু নির্মাণের প্রকল্প এরই মধ্যে প্রণয়নও করা হয়েছে। তবে দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় প্রকল্পটি নিয়ে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করছে সরকার। প্রকল্পটির বিভিন্ন দিক নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠেছে। সেগুলো স্পষ্ট করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কিছু সুপারিশও দেওয়া হয়েছে কমিশনের পক্ষ থেকে। প্রশ্নগুলোর উত্তর চেয়ে আর সুপারিশ করে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প প্রস্তাবটি সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত ২৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় চন্দনাইশ উপজেলার সাঙ্গু নদীর ওপর নয়েরহাট সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাহাঙ্গীর আলম। সভায় প্রকল্পে প্রস্তাবিত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।

জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা পিইসি সভা করেছি। সেখানে সব পক্ষের মধ্যে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রকল্প প্রস্তাবে বিভিন্ন অসঙ্গতি আছে। সেগুলোর বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন হয়ে এলে এরপরই প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন প্রকল্প নিয়ে কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা বা নতুন প্রকল্প না নেওয়ার মতো কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। গুরুত্ব অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

চন্দনাইশ উপজেলাকে আশপাশের জনপদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২৯৮ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে সাঙ্গু নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছিল। মূল্যায়নের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা গত বছরের ২২ জুলাই পরিদর্শন করা হয়। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভাও হয়।

পিইসি সভার সিদ্ধান্তে মোট ১৯৭ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় এবং ২০২৯ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য পুনর্গঠিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে পরবর্তিতে এটি পুনরায় মূল্যায়নের জন্য পিইসি সভার আহ্বান করা হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রতিনিধি প্রকল্পের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও পটভূমি তুলে ধরে সভায় বলেন, প্রস্তাবিত সেতুটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার ভ্রমণ দূরত্ব কমিয়ে দেবে। চন্দনাইশ উপজেলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সেতুটি ইতিবাচক ভুমিকা রাখবে।

সভায় এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, সেতুটির একপাশে চন্দনাইশ উপজেলা এবং অন্য পাশে সাতকানিয়া উপজেলা। সেতুটি নির্মাণ করা হলে বান্দরবান জেলার সঙ্গে এই দুই উপজেলার যোগাযোগ আরও সহজ হবে। সেতুর এক পাশে নয়েরহাট বাজার, যেখান থেকে কৃষিজাত পণ্য বাজারজাত করা হয়। সেতু না থাকায় নৌকা দিয়ে কৃষিজাত পণ্য পারাপার করতে সময় বেশি লাগে, পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। সাঙ্গু নদীতে সব সময় একই রকম পানি থাকে না। ফলে কম পানির সময় পণ্য বাজারজাত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। সড়কের অন্যন্য অংশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় সেতুটি নির্মাণ করা প্রয়োজন।

প্রকল্পের খরচ নিয়ে সভায় প্রশ্ন তোলেন কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব। তিনি বলেন, সেতু নির্মাণের জন্য প্রতি মিটারে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ লাখ টাকা, যা একই ধরনের অন্যান্য প্রকল্পের তুলনায় বেশি। সমজাতীয় অন্য সব প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করে ব্যয় প্রাক্কলন করে ডিপিপি পুনর্গঠন করা প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে এলজিইডির প্রতিনিধি বলেন, নদীর মাঝে দুটি পিলারের দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। নদীর মাঝখানে যেন কোনো পিলার না পড়ে, সে অনুযায়ী নকশা করা হয়েছে সেতুটির।

সভায় বাস্তবায়ন মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিনিধি বলেন, ডিপিপির বিভিন্ন পৃষ্ঠায় সেতুর দৈর্ঘ্যরে ভিন্নতা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ডিপিপিতে সেতুর অভিন্ন দৈর্ঘ্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প এলাকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বিবেচনায় টিলা কাটা বা সংরক্ষিত বন নষ্ট করা ঠিক হবে না।

পল্লি প্রতিষ্ঠান ও সমন্বয় অনুবিভাগের যুগ্ম প্রধান বলেন, সেতু নির্মাণের আগে যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা ও সমীক্ষা প্রতিবেদনে প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পরিবেশের ওপর প্রভাব বিশ্লেষণ অন্তর্ভুক্ত করা এবং নদী শাসনের প্রভাবসহ সম্ভাব্য প্রতিকারের বিষয়েও আলোচনা করা প্রয়োজন। সেতু নির্মাণের ফলে নদীর গতিপথ ও পানিপ্রবাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন।

পরিকল্পনা কমিশনের সিদ্ধান্ত

সেতু নির্মাণের খরচ একই ধরনের অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যৌক্তিকভাবে পুনর্নির্ধারণ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ যথাযথভাবে নির্ধারণ এবং অধিগ্রহণে প্রস্তাবিত ভূমির শ্রেণিসহ এই ভূমিতে ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা আছে কি না, এসব তথ্য ডিপিপিতে দিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পের মেয়াদ, সেতুর দৈর্ঘ্য, প্রকল্পের পটভূমি, সুস্পষ্ট বস্তুনিষ্ঠ প্রকল্পের বিবরণ, প্রকল্পের প্রভাব বর্ণনা, পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র, উন্নয়ন পরিবেশ সম্ভাব্যতা ইত্যাদি অংশের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ ও সুস্পষ্টভাবে ডিপিপিতে পুনর্গঠন করতে বলেছে।

পরিকল্পনা কমিশন পরামর্শে আরও বলেছে, প্রকল্প এলাকার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য বিবেচনায় টিলা কাটা বা সংরক্ষিত বন বিনষ্ট করা যাবে না। নদীর গতিপথ ও পানিপ্রবাহ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় এবং বিআইডব্লিউটির নেভিগেশন উচ্চতা যেন রক্ষা পায়, সেভাবে প্রকল্প নকশা ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

চন্দনাইশ উপজেলা পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প প্রস্তাবনা সাঙ্গু নদী

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর