পূজার ছুটিতে সৈকতে লাখো পর্যটকের ঢল
১২ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৪৫
কক্সবাজার: সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে এবার ছুটি পড়েছে টানা চার দিন। আর সেই ছুটিতে লাখো পর্যটকের পদাচরণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। প্রকৃতিকে উপভোগ করতে আসা পর্যটকের ভরপুর এই পর্যটন নগরী। বেড়াতে আসা পযটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেলগুলোর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পর্যটকের চাপ বাড়তে থাকে। শুক্রবার নাগাদ পর্যটকের উপস্থিতিতে ভরে ওঠে হোটেল-মোটেল। সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ নানা পর্যটক স্পটে পর্যটকদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। নীল সাগরের বুকে শরতের নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পর্যটকদের মধ্যে।
কেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটিয়েছেন, কেউ সময় উপভোগ করেছেন সৈকতে সাজানো ছাতায় বসে শীতল হওয়া উপভোগ করতে করতে। আর সাগরের লোনা জলে দাপাদাপি তো আছেই। অনেকে সৈকতের ঘোড়ার পিঠে উঠে ছবি তুলেছেন, বিচ বাইকে চড়ে সাগরের পানিতে ঘুরেছেন অনেকেই। কেবল কক্সবাজার মূল সৈকতগুলোই নয়, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও পাটুয়ারটেক সৈকত জুড়েও ছিল দিনভর পর্যটকের আনাগোনা। বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের উপস্থিতি দেখা গেছে টেকনাফেও।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক সমাগম সমান থাকবে কক্সবাজারে। এর মধ্যে ১০ থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত ৯০ থেকে ৯৮ শতাংশ হোটেল রুম বুকিং হয়েছে। ১৪ থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্তও ৮৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তবে পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় কিছু আবাসিক প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে ছুটিতে পর্যটকরা কক্সবাজার আসতে শুরু করেছেন। পাঁচ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব কক্ষেই বুকিং রয়েছে শুক্রবার। সে হিসাবে এক লাখ ২০ হাজারের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। এসব পর্যটকরা রোববার পর্যন্ত থাকবেন। এরপর চাপ একটু কমলেও ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং কিছুটা রয়েছে।’
স্যান্ডি বিচ হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বৃহত্তর বিচ ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘অনেকদিন পর টানা ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার চেনা রূপে ফিরেছে। পর্যটক আসায় ব্যবসায়ীরা খুশি।’
হোটেল দ্য কক্স টুডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত তাদের প্রতিষ্ঠানে সব কক্ষ বুকিং রয়েছে।
এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন। পর্যটকদের কোথাও যেন কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়, সেটি নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘পর্যটকের আগমন বেশি হওয়ায় আগে থেকেই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও অপরাধ দমনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সৈকতে পোশাকধারী পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে টহল ও সাদা পোশাকের পুলিশ রয়েছে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে অবস্থান ও কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে পুরো সৈকত নজরদারির আওতায় রয়েছে।’
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘পর্যটক ও পূজা ঘিরে সৈকতের প্রবেশপথে তল্লাশি চৌকি স্থাপন, পোশাকধারীর পাশাপাশি সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছেন। কোথাও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিতে নিদের্শ দেওয়া আছে।’
সারাবাংলা/টিআর