Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইলিশে ফের নিষেধাজ্ঞা শুরু, মৌসুমে উৎপাদন কমেছে ২৫%

ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১২ অক্টোবর ২০২৪ ১২:১১

মাছ আহরণ, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, ইলিশ মাছ, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, মাছ উৎপাদন

কক্সবাজার: মাছ শিকারে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন জেলেরা আড়াই মাসের জন্য। তবে এই আড়াই মাসে বৈরী আবহাওয়ায় মাছ শিকার বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। লঘুচাপ-নিম্নচাপের কারণে অন্তত ছয়বার সাগরে যেতে পারেননি তারা। শেষ পর্যন্ত মৌসুম শেষ হলো ইলিশ সংকটের মধ্য দিয়ে। মৌসুম শেষে তথ্য বলছে, আগের বছরের চেয়ে এ বছর ইলিশের আহরণ কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এর মধ্যেই ফের মাছ আহরণে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা।

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছ উৎপাদন হয়েছে আট হাজার মেট্রিক টন। এ বছর মাছের পনিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার মেট্রিক টনে। ২৫ শতাংশ মাছ আহরণ কমে যাওয়ায় যখন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে তীব্র হতাশা, এমন সময়েই আজ শনিবার (১২ অক্টোবর) থেকে ফের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে মা ইলিশের ডিম পাড়ার মৌসুমকে কেন্দ্র করে।

জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক মাসে আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ। সাগরে বারবার লঘুচাপ ও নিম্নচাপ তৈরি হয়েছে। ঝোড়ো হাওয়া আর প্রবল বৃষ্টিপাত ছিল আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস জুড়ে। এ কারণে বারবারই সাগরে জেলেদের মাছ ধরতে না যাওয়ার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। কার্যত বাকি সময়ে জেলেরা মাছ ধরতে গেলেও বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে মাছ শিকার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

মৎস্য ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভরা মৌসুমে জেলেদের বসে থাকতে হয়েছে ঘরে, সাগরে যেতে পারেননি। অন্যদিকে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের জেলেরা ট্রলারে করে নির্বিচারে মাছ শিকার করেছে। এ কারণেই ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে শিকার করতে পারেননি জেলেরা। এখন নতুন করে নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন বেকার হওয়া জেলেরা। নিষেধাজ্ঞার সময়ে তাদের জন্য বরাদ্দ সহায়তা সঠিকভাবে বিতরণ না হওয়ায় তাদের হতাশা আরও বেশি।

আহরণ কম হওয়ায় এ মৌসুমে মাছের দাম ছিল বেশি। ছবি: সারাবাংলা

ট্রলার মালিক আব্দুর রহিম বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ট্রলার সাগরে পাঠিয়ে আশা করেছিলাম ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু একের পর এক সিগন্যাল (সতর্কসংকেত) আর ইলিশের দেখা না মেলায় লোকসান গুনতে হয়েছে। এদিকে আবার শুরু হচ্ছে ২২ দিনের বন্ধ। এই বন্ধ দেওয়া হয় মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য। কিন্তু আমরা মাছ ধরতে না গেলেও মিয়ানমার-ভারতের ট্রলি বা ট্রলার ঠিকই নির্বিচারে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার পরও তাই সাগরে গেলে আমরা মাছ পাব না।’

বিজ্ঞাপন

আরেক মাছ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘একটি ট্রলার রেডি করে সাগরে মাছ ধরতে পাঠাতে যে টাকা খরচ হয়, এ মৌসুমে সেই টাকাও ওঠেনি। সাগরে ইলিশের সংকট। সব মিলায়ে অনেক ক্ষতি। বোট মালিকদেরও ক্ষতি, মাঝি-মাল্লাদেরও ক্ষতি। এ রকম চলতে থাকলে মাছ ব্যবসা লাটে উঠবে।’

এদিকে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে জেলেদের জন্য বরাদ্দ সরকারি সহায়তা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন জেলেরা। তারা বলছেন, যারা প্রকৃত জেলে না, তাদের অনেকে এই সহায়তা পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে যারা প্রকৃত জেলে, তারা বরাদ্দ থেকে বাদ পড়েন। এতে জেলে পরিবারগুলোতে ঘোর দুর্দিন নেমে আসে।

বোটের মাঝি লিয়াকত মিয়া বলেন, ‘জেলেদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম সাগরে মাছ শিকার। মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা বেকার হয়ে পড়ে। ওই সময়ে সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয় তা দিয়েও সংসার চালানো কঠিন। তার ওপর সহায়তা বিতরণে অনিয়ম করে এই মানুষগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। আমরা বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকৃত জেলেদের মধ্যেই কেবল বরাদ্দ বিতরণের দাবি জানাই।’

এদিকে মাছ আহরণ কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে দামেও। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জি এম রাব্বানী বলেন, সাগরে মাছ ধরার মৌসুমের মধ্যেই বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা মাছ শিকারে সুবিধা করতে পারেনি। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা যে আড়াই মাসের কিছু বেশি সময় মাছ শিকারের সুযোগ পেয়েছেন ওই সময়ে ছয়বার সমুদ্রে সতর্কসংকেত পড়েছে। বাকি দিনগুলোতেও সাগরে মাছ কম পড়ছে। ফলে মাছের উৎপাদন কমে গেছে, বাজারে সরবরাহ কমেছে। এর জের ধরে মাছের দামও এ মৌসুমে বাড়তি।’

২০২২-২৩ অর্থবছরে অবতরণ কেন্দ্রে মাছ আহরণ হয়েছে আট হাজার ২০০ টন। ২০২৩-২৪ মৌসুমে মাছের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার টনে। একই সময়ে ইলিশের পরিমাণও কমেছে। গত অগাস্টে মোট আহরিত ৭১০ টন মাছের মধ্যে ইলিশ ছিল ২১০ টন। এরপর সেপ্টেম্বরে আহরিত ৭০০ টন মাছের মধ্যে ইলিশ ছিল আরও কম— মাত্র ১৭৩ টন।

নতুন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জি এম রাব্বানী বলেন, ‘১২ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের যে বন্ধ শুরু হচ্ছে, তা মূলত মা ইলিশের প্রজনন বাড়ানোর জন্য। এই সময়ে মা ইলিশ সঠিকভাবে ডিম ছাড়তে পারলে ইলিশের উৎপাদন ঠিক থাকবে। জেলেরা এই বন্ধ না মানলে ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদনে ক্ষতি হবে। এই ২২ দিন তাদের জীবিকায় কষ্ট হলেও এই বন্ধ তাদের ভালোর জন্যই। সরকারও তাদের সহায়তায় চালসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।’

সারাবাংলা/টিআর

ইলিশ মাছ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র মাছ আহরণ মাছ উৎপাদন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর